শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
ট্রান্সকমে মালিকানার দ্বন্দ্ব

পাঁচ কর্মকর্তার জামিন, আসামি মা-বোন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ট্রান্সকম গ্রুপের পাঁচ কর্মকর্তার জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তার এই আদেশ দেন। জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- ট্রান্সকম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স-আইন) মো. ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) কামরুল হাসান, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) আবদুল্লাহ আল মামুন, সহকারী কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ও ব্যবস্থাপক (কোম্পানি সেক্রেটারি) আবু ইউসূফ মো. সিদ্দিক।

এর আগে, পৃথক মামলায় ট্রান্সকম গ্রুপের পাঁচ কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অপর দিকে গ্রেফতার পাঁচজনের পক্ষ থেকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে জামিনের আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত পাঁচজনের প্রত্যেককে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করেন। একই সঙ্গে আদালত তাদের প্রত্যেককে পুলিশ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত ৩ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গুলশান থানায় তিনটি মামলা হয়। একই দিন ট্রান্সকম গ্রুপের পাঁচ কর্মকর্তাকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর।

জানা গেছে, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ হক বাদী হয়ে গুলশান থানায় তিনটি মামলা করেন। এসব মামলায় ট্রান্সকম গ্রুপের ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, সম্পত্তি দখল এবং অবৈধভাবে কোম্পানির শেয়ার ও অর্থসম্পদ নিয়ে প্রতারণামূলক বিশ্বাস ভঙ্গ এবং জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। শাযরেহ হক তার বোন সিমিন রহমান, মা শাহনাজ রহমান এবং সিমিন রহমানের ছেলে যারেফ আয়াত হোসেনকেও আসামি করেছেন। লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান এখন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান। তার বড় মেয়ে সিমিন রহমান গ্রুপের সিইও। আর নাতি যারেফ আয়াত ট্রান্সকমের হেড অব ট্রান্সফরমেশন। ছোট মেয়ে শাযরেহ হকও ট্রান্সকম গ্রুপের একজন পরিচালক।

এদিকে, শাযরেহ হক স্বাক্ষরিত মামলার এজহারে বলা হয়েছে, আমার পিতা লতিফুর রহমান তার জীবদ্দশায় ট্রান্সকম লিমিটেডের ২৩,৬০০টি শেয়ারের মালিক থাকা অবস্থায় পয়লা জুলাই ২০২০ সালে মারা যান। আমিসহ অন্যান্য উত্তরাধিকাররা ওই শেয়ারের মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী মালিক বটে। আমার পিতার ওই ২৩,৬০০টি শেয়ার থেকে ১ নম্বর আসামি আমাকে এবং আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে বঞ্চিত করার জন্য অবৈধভাবে নিজের নামে বেশি শেয়ার ট্রান্সফার করে হস্তগত করার হীন অসৎ উদ্দেশে ২-৫ নম্বর আসামিদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তিনটি ফর্ম ১১৭ (হস্তান্তর দলিল)-সহ আরও গুরত্বপূর্ণ শেয়ার ট্রান্সফারের বিভিন্ন কাগজাদী আমার এবং আমার ভাইয়ের অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে সৃজন করেন। আমার পিতার মৃত্যুর পর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজনকৃত ফর্ম ১১৭ (হস্তান্তর দলিল)-সহ শেয়ার ট্রান্সফারের অন্যান্য কাগজাদি ৩ নম্বর আসামি রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) এ জমা প্রদান করেন। ১ নম্বর আসামি থেকে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ৪ নম্বর এবং ৫ নম্বর আসামিরা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজনকৃত তিনটি ফর্ম ১১৭-এ সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন এবং ১-৫ নম্বর আসামিরা ষড়যন্ত্র করে পারস্পরিক সহযোগিতায় আমার, আমার পিতার এবং আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে নিজেরাই ফর্ম ১১৭-এ স্বাক্ষর করেন। আমার পিতা মারা যাওয়ার পর প্রথমে ২ নম্বর আসামি ২৩/০৩/২০২৩ইং তারিখে এবং পরবর্তীতে ২ নম্বর এবং ৩ নম্বর আসামি ১৪/০৫/২০২৩ইং তারিখে আমাকে জানায় যে, আপনার পিতা আপনিসহ আপনার ভাই বোনদের শেয়ার হস্থান্তর করে দিয়েছেন। পরবর্তীতে, আমি (আরজেএসসি) থেকে শেয়ার হস্তান্তর সংক্রান্ত দলিলাদির অনলাইন কপি ০২/০৯/২০২৩ইং তারিখে সংগ্রহ করি। ওই অনলাইন দলিলাদি অনুযায়ী গত ১৩/০৬/২০২০ইং তারিখে আমার পিতা আমাকে ৪,২৭০টি শেয়ার, আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে ৪,২৭০টি শেয়ার এবং ১ নম্বর আসামিকে ১৪,১৬০টি শেয়ার হস্তান্তর করেছেন মর্মে ৩ নম্বর আসামি শেয়ার হস্তান্তর সংক্রান্ত দলিলাদি দাখিল করেছেন। কিন্তু কোনো সময়ই আমি কিংবা আমার ভাই ওই হস্তান্তর সংক্রান্ত ফরম-১১৭ (হস্তান্তর দলিল)-এ সই কিংবা টিপসই প্রদান করিনি। অধিকন্তু, আমার পিতা তার জীবদ্দশায় কখনো হস্তান্তর সংক্রান্ত ফরম-১১৭ (হস্তান্তর দলিল)-এ সই কিংবা টিপসই প্রদান করেননি। ট্রান্সকম লিমিটেডে থাকা আমার পিতার ২৩,৬০০টি শেয়ার মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী তার উত্তারিধাকারীদের মধ্যে বণ্টন না করে ১ নম্বর আসামি নিজের নামে বেশি শেয়ার হস্তগত করার উদ্দেশ্যে এবং ২-৫ নম্বর আসামি ১ নম্বর আসামি থেকে অবৈধ লাভের উদ্দেশে উপরিউল্লিখিত শেয়ার হস্তান্তর কাগজাদি জাল-জালিয়াতি করে আরজজেএসসিতে জমা প্রদান করেন। আসামিদের এমন অসৎ ও অসাধু উপায় অবলম্বন করে আমাকে এবং আমার ভাইকে আমার পিতার ন্যায্য শেয়ার থেকে বঞ্চিত করার জন্য জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আমাদের স্বাক্ষর জাল করে আপরাধ সংগঠন করিয়াছেন।উপরোক্ত জাল-জালিয়াতি উল্লেখ করে আমার নিয়োজিত আইনজীবীর মাধ্যমে আসামিদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর পরও আসামিরা কর্ণপাত করেনি। যেহেতু, আসামিরা অত্র থানার আওতাধীন ১ নম্বর আসামির বর্তমান ঠিকানায় অবস্থান করে অপরাধ সংগঠন করেছেন তাই উপরোক্ত বিষয়ালীর পরিপ্রেক্ষিতে অত্র থানার শরণাপন্ন হয়েছি। অতএব, অভিযোগকারী হিসেবে আসামিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে প্রচলিত সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় অত্র অভিযোগ দায়ের করলাম এবং উপরোক্ত বিষয়ে অত্র থানায় আসামিদের বিরুদ্ধ আইনি ব্যবস্থা নিতে সদয় মর্জি হয়।

 

সর্বশেষ খবর