মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
শীর্ষ তিন কর্মকর্তার ঢাকা সফর

সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের

নতুন অধ্যায় চায় যুক্তরাষ্ট্র : সালমান এফ রহমান

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের

তিন দিনের সফর শেষে গতকাল ঢাকা ছেড়েছেন মার্কিন তিন শীর্ষ কর্মকর্তা। রবিবার দিনভর তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছেন। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে করেছেন আনুষ্ঠানিক বৈঠক। নির্বাচনের পর প্রথম এই সফরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ সহকারী ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এইলিন লুবাখার, ইউএসএআইডির সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার।

রবিবার দিনের বিভিন্ন সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে রাতে রাজধানীর গুলশানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসভবনে নৈশভোজে অংশ নেন মার্কিন কর্মকর্তারা। পরে সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, শ্রম পরিবেশ উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় দেশটি। সালমান এফ রহমান বলেন, কিছুদিন আগে জো বাইডেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করতে চাই এবং নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাই’। বাংলাদেশ সফররত প্রতিনিধি দলও একই কথা বলেছেন বলে জানান তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন এখন পেছনের ঘটনা। সেটা নিয়ে তারা কোনো কথা বলেনি, আমরাও বলিনি। বরং সামনের দিনগুলোতে কীভাবে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করা যায়; সেসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমেরিকাও চায়, রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাক। সেই সঙ্গে তাদেরকে সাময়িক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে; এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। তারা রোহিঙ্গাদের আরও সহযোগিতা করতে চায়। মার্কিন প্রতিনিধি দল মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর তারা নজর রাখছে। সেই সঙ্গে আমাদেরকেও নজর রাখতে বলেছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের তাদের ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স প্রোগ্রামে (ডিএসপি) যুক্ত করতে চায়। এর জন্য তারা কয়েকটি শর্তের কথা বলেছে। শর্তগুলো জানাতে বলেছি। শিগগির তারা জানাবে বলেছে। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে চলমান প্রকল্প অব্যাহত থাকবে।

বাইডেনের চিঠির উত্তর : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পরিচালক আইলিন লাউবাচারের কাছে চিঠির একটি অনুলিপি হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো মার্কিন প্রেসিডেন্টের চিঠির জবাব এটি। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান চিঠির মূল কপি হোয়াইট হাউসের কাছে হস্তান্তর করবেন।

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন। তিনি একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের পরবর্তী অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাওয়া বিষয়ে চিঠিতে বাইডেন বলেছেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য একসঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখতে তার প্রশাসনের আন্তরিক আকাক্সক্ষার কথা তিনি জানাতে চান। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সমস্যা সমাধানে আমাদের একসঙ্গে কাজ করার দীর্ঘ ও সফল ইতিহাস রয়েছে এবং আমাদের শক্তিশালী মানুষে-মানুষে বন্ধনই এই সম্পর্কের ভিত্তি।

সর্বশেষ খবর