শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
ডিসি সম্মেলন

কমছেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সবচেয়ে কম গত বছর

ওয়াজেদ হীরা

প্রতি বছরই জেলা প্রশাসক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে অনেক প্রস্তাব উপস্থাপন হয়, তবে সেগুলোর অনেকটিই বাস্তবায়ন হয় না। গত কয়েক বছর ধরে ডিসি সম্মেলন করে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন হারও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

এবারও ৩৫৬টি প্রস্তাব দিয়ে এ বছরের সম্মেলন শেষ হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, প্রতি বছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিদের দেওয়া প্রস্তাবগুলোর ওপর পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয়কে নিদের্শনা দেওয়া হয় এবং কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে সে বিষয়ে পরের বার ডিসি সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। গত এক বছরে অনেক মন্ত্রণালয় এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। যদিও সংশ্লিষ্টরা গত বছরের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, ডিসি সম্মেলনে তিন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি সিদ্ধান্ত যা এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা। মধ্যমেয়াদি সিদ্ধান্ত যা তিন বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা। দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত যা পাঁচ বছরের জন্য। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, গত বছরের ডিসি সম্মেলনে মোট ২১২টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যেখানে মোট বাস্তবায়ন বা নিষ্পত্তির হার ৬২ শতাংশ। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি, অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল এ রকম সিদ্ধান্ত হয়েছিল ৫২টি, যার বাস্তবায়নের হার ৮৯ শতাংশ। তিন বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের (মধ্যমেয়াদি) জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ৯০টি। এগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত বাস্তবায়নের হার ৫৯। আর পাঁচ বছরের জন্য যেসব সিদ্ধান্ত (দীর্ঘমেয়াদি) নেওয়া হয়েছিল ৭০টি। এখন পর্যন্ত যার বাস্তবায়নের হার ৪৫। গত বছরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার নিয়ে ডিসি সম্মেলন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কাছে সন্তুষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই তিনটি ধাপে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা হয়। গত বছর তিনটি ধাপে যে হার আছে এটিতে আমরা সন্তুষ্ট। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাকি সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মধ্যমেয়াদি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য হাতে আরও দুই বছর সময় আছে। আবার দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে আরও চার বছর সময়। বর্তমানের যে হার সে হিসেবে সন্তুষ্ট বলব।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অনেক সিদ্ধান্ত যেগুলো কাগজে-কলমে বাস্তবায়িত বলা হলেও বাস্তবতায় রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। বাস্তবায়িত বলা বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অনেক সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতার অভাবেও বাস্তবায়ন হয়নি। অনেক সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করেই বাস্তবায়িত বলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি, স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে দুটি, নৌ-মন্ত্রণালয়ের একটি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এক বছরের সিদ্ধান্ত পরের ডিসি সম্মেলনে এসেও ‘বাস্তবায়নাধীন’ দেখানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসব তদারকি করা হয়। আগের বছরের চেয়ে গড় বাস্তবায়ন কমেছে এটা ঠিক, তবে আগের চেয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণও কমেছে। যেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি তার মানে হবে না এমন নয়, সামনের সময়ের মধ্যে সেট কাভার হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬২ শতাংশ যা আগের বছর ২০২২ সালে ছিল ৮৪ শতাংশ। এর মাঝে ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনা মহামারির কারণে ডিসি সম্মেলন হয়নি। এর আগে ২০১৯ সাল এবং ২০১৮ সালেও বাস্তবায়নের হার ছিল যথাক্রমে ৮৮ শতাংশ ও ৯৩ শতাংশ। অর্থৎ ২০১৮ সাল থেকে উল্লেখযোগ্য হারে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার কমেছে। গড় বাস্তবায়ন কমার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে স্বল্প মেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি তিন ধাপেই আলাদা করে কমেছে বাস্তবায়ন অগ্রগতির হারও।

২০১৮ সালে স্বল্পমেয়াদি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন ছিল ৯৩ শতাংশ যা ২০২৩ সালে ৮৯ শতাংশ। একই সময়ে মধ্যমেয়াদি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় ৯১ শতাংশ ও ৫৯ শতাংশ। আর ২০১৮ সালে দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হয় ৯৫ শতাংশ যা ২০২৩ সালে ছিল মাত্র ৬২ শতাংশ। ২০১৮ থেকে ২০২৩ এই সময়ে সিদ্ধান্তও কমেছে। ২০১৮ সালের ডিসি সম্মেলনে ৩৬৬টি প্রস্তাব বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যা ২০২৩ সালে দাঁড়ায় ২১২-তে।

 

 

সর্বশেষ খবর