মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাউথইস্ট ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা বললেন মুখপাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার কেনার জন্য ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ কোম্পানিকে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিতে চেয়েছিল বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংক। ঋণ প্রস্তাবটি ব্যাংকের পর্ষদ সভায় উপস্থাপন ও পাসের প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক আটকে দিয়েছে এবং তদন্ত করছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জানা গেছে, সাউথইস্ট ব্যাংক একটি ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আসছে। নতুন করে আরেকটি ব্রোকারেজ হাউসকে (ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ) শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিতে চেয়েছিল ব্যাংকটি। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একটি পক্ষের আপত্তি থাকার পরও ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের মাধ্যমে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সাউথইস্ট ব্যাংক। বিষয়টি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব এবং অভিযোগ পেয়ে ওই সিকিউরিটিজ কোম্পানির অনুকূলে অর্থ ছাড় অথবা শেয়ার কেনা আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারে সাউথইস্ট ব্যাংকের বিনিয়োগের ওপর বিশদ পরিদর্শন শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, সাউথইস্ট ব্যাংকের নিজস্ব মার্চেন্ট ব্যাংক থাকার পরও কেন সরাসরি অন্য ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচা করে আসছে তা খতিয়ে দেখছে তদন্ত দল। এ ছাড়াও ব্যাংকটি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে নিয়মকানুন মানছে কিনা, ব্যাংকের শেয়ার বেচাকেনার মাধ্যমে কোনো পরিচালক কিংবা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অথবা কেউ ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ২০১৮ সালে ইএম পাওয়ার কোম্পানির প্রাইভেট প্লেসমেন্টে সাড়ে ২২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। সন্দেহজনক হওয়ায় ওই বিনিয়োগ নিয়ে ২০২১ সালে আপত্তি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ। সন্দেহজনক এই বিনিয়োগের বিষয়ে তদন্ত করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ পায়। পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠায় বিএফআইইউ। এসব বিষয় পরিদর্শন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি দল। পুরো তদন্ত কার্যক্রম শেষে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে একটি প্রতিবেদন দেবে তদন্ত দল এবং সেই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানিকে শেয়ার কেনার জন্য ১০০ কোটি টাকার প্রস্তাব অনুমোদন করে। ওই ঋণটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়াও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে কিছু অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জানা গেছে, ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ কোম্পানির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাজীব আল মামুন চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ১০০ কোটি টাকা তহবিল চেয়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আবেদন করে। ‘প্রিমিয়াম ক্লায়েন্ট’ হিসেবে সাউথইস্ট ব্যাংককে প্রতি ১০০ টাকার শেয়ার কেনাবেচার জন্য সব ধরনের খরচসহ মাত্র ২৫ পয়সা হারে বিশেষ ব্রোকারেজ কমিশন চার্জ নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয় আবেদনে। পরবর্তীতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় প্রস্তাবটি উঠলে তা অনুমোদিত হয়। যদিও সেখানে কোনো টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। শুধু ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরসহ একটি পক্ষ চেয়েছে, এখন থেকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের অধিকাংশই পরিচালিত হবে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের মাধ্যমে। যা বর্তমানে অন্য কোম্পানির মাধ্যমে বিনিয়োগ হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি অভিযোগ এলে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সাউথইস্ট ব্যাংকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। চিঠিতে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের অনুকূলে কোনো অর্থ ছাড় না করা এবং কোনো শেয়ার না কেনার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সাউথইস্ট ব্যাংকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি বিশেষ তদন্ত চলমান রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসাইনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করে সাড়া পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর