শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
সেই কষ্টের ঈদযাত্রার শঙ্কা

উত্তরবঙ্গের যাত্রীদেও ভোগান্তি লাঘবে প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া, রংপুর, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এবার ঈদের লম্বা ছুটি সামনে রেখে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি লাঘবের চেষ্টা করছে সড়কসংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো। তবে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক ফোর লেন উন্নয়নের কাজ চলমান থাকায় ঈদযাত্রা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যানবাহনের চালকরা। চালকরা বলছেন, কাজ চলমান থাকায় খানাখন্দ, সরু রাস্তা, থ্রি-হুইলার ও এক লেনে চলাচলের কারণে যানজট সৃষ্টি হতে পারে। তবে পুলিশ বলছে, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ৩০ মার্চের মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে গতবারের মতো এবারও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে।

জানা যায়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে সিরাজগঞ্জের ওপর দিয়ে উত্তরের ২২ জেলার যানবাহন চলাচল করে। স্বাভাবিক সময়ে দিনে ১৫-২০ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ঈদ ঘিরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০ হাজারের বেশি। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সৃষ্টি হয় জট। ভোগান্তিতে পড়ে নারী-শিশু যাত্রীসহ চালকরা। এরই মধ্যে যানজট নিরসনে ২০১৬ সালে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক দুই থেকে চার লেনে প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন স্থানে নির্মিত হচ্ছে উড়ালসড়ক, আন্ডারপাস, ব্রিজ, কালভার্ট। ২০২১ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা, জমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি হয়। বর্তমানে মহাসড়কে কাজ চলমান থাকায় বেশ কিছু জায়গায় রাস্তা সরু হয়ে গেছে। অনেক স্থানে খানাখন্দ হয়ে গেছে।

সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আহসানুল কবির পাভেল জানান, ঈদে যানজট নিরসন করতে বেশ কিছু ব্রিজ ও ফ্লাইওভার আন্ডারপাস চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুল রহমান মণ্ডল জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পার থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। হাটিকুমরুল থেকে বগুড়া পর্যন্ত মহাসড়ক পরিদর্শন শেষে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে যানজট নিরসনসহ ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে পুরোদমে চলছে হাটিকুমরুল-এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন প্রকল্পের কাজ। তবে উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় মাঝেমধ্যেই যান চলাচলে ধীরগতির কারণে যানজটসহ ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা।

গতকাল বগুড়া মহাসড়কে দেখা গেছে, নির্মাণকাজ চলাকালে যানবাহনগুলো বিভিন্ন স্থানে ধীরগতিতে চলছে। বগুড়ার মাটিডালী বিমান মোড়, তিনমাথা এলাকা, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, ফুলতলা উল্লেখযোগ্য। ঈদের ছুটিতে ঘরমুখী মানুষের ভিড়ে বেড়ে সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। তাই ভোগান্তিমুক্ত চলাচলে নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি সাধারণ মানুষ ও পরিবহনসংশ্লিষ্টদের। ঈদে যেন যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের। উপপ্রকল্প পরিচালক জয় প্রকাশ চৌধুরী জানান, এ প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন, বিভিন্ন স্থানে যান চলাচলে ২০টি আন্ডারপাস খুলে দেওয়ায় এ পথে চলাচলকারী মানুষ সুফল পেতে শুরু করেছে।

এদিকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত হাইওয়েতে ৭০ থেকে ৮০টি স্পটে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। হাইওয়ের পাশে অবস্থিত হাটবাজারগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এমনিতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ছয় লেনের কাজ চলছে। তার ওপর ঈদ মৌসুম সামনে রেখে হাইওয়ের পাশে অপরিকল্পিতভাবে হাটবাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় প্রতিদিন বাড়ছে যানজট। বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। হাইওয়ের এক সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে রংপুর হয়ে বগুড়া পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে কমপক্ষে ৩০ স্থানে প্রতিনিয়ত বসছে হাটবাজার। এ ছাড়া বগুড়া থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে রাজশাহী পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে ৫০টির বেশি স্থানে হাটবাজার বসেছে। বিভিন্ন জেলার হাইওয়ের পাশে প্রতিদিনই বাড়ছে হাটবাজারের পরিধি। ঈদ সামনে রেখে প্রতিদিনই হাটবাজারগুলো নতুন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কারণে সম্প্রসারিত হচ্ছে।

হাইওয়ের পাশে গড়ে ওঠা হাটবাজারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যানজটের এলাকাগুলো দশমাইল, সৈয়দপুর বাইপাস, বীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, পাগলাপীর, মডার্ন মোড়, দমদমা, বৈরাগীগঞ্জ, বিশমাইল, কলাবাগান, জামতলা, খেজমতপুর, মাদারহাট, ধাপেরহাট, শঠিবাড়ী বাজার, বড়দরগা বাজার, পলাশবাড়ী, কোমরপুর, বালুয়া, গোবিন্দগঞ্জ, চহিরা, হাঁড়িকুটুম প্রভৃতি। এ ছাড়া অসংখ্য স্থানে প্রতিদিন ছোটবড় হাটবাজার বসিয়ে সড়কের জায়গা দখল করে রাখায় যানজট প্রকট হচ্ছে। মহাসড়কের ওপর হাট বসার কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাইওয়ের পাশে শতাধিক হাটবাজার রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে হাটবাজার।

বড় দরগাহ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোলায়মান শেঠ বলেন, হাইওয়ে পুলিশ যতদূর সম্ভব মহাসড়কে যানজট নিরসনে চেষ্টা করছে। মহাসড়কের পাশে হাটবাজার এলাকাগুলোয় বেশি যানজট হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর