শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিপ্লবীদের উত্তরাধিকার বঙ্গবন্ধু : সুগত বসু

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিপ্লবীদের উত্তরাধিকার বঙ্গবন্ধু : সুগত বসু

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক এবং সুভাষ বসু-শরৎ বসু পরিবারের উত্তর-প্রজন্ম সুগত বসু -পিআইডি

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, শরৎ বসুর মতো বিপ্লবীদের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নেতাজির বিপ্লবের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েই বঙ্গবন্ধু সফল হয়েছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বসু পরিবারের সন্তান ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সুগত বসু এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সাক্ষাতে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ, বঙ্গবন্ধুর অবদান ও ভারতবর্ষের ইতিহাস নিয়ে উভয়পক্ষে আলোচনা হয়। প্রায় আধা ঘণ্টার এ সাক্ষাতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মূলত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা দিতে ঢাকায় এসেছেন এশিয়া মহাদেশ নিয়ে গবেষণা করা অধ্যাপক সুগত বসু। গতকাল বিকালে জাদুঘর মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও স্মৃতি সংরক্ষণ’ শীর্ষক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারক বক্তব্য দেন তিনি। সুগত বসুর ভাষ্যে উঠে আসে, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে কলকাতার নেতাজি ভবনের নানা উদ্যোগের কথা। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও তৎকালীন ভারতে অন্যতম সেরা চিকিৎসকদের একজন শিশির কুমার বসু এপ্রিলের শুরুতেই তার কাজ শুরু করেন। সুগত বসু শোনান, এপ্রিল মাসে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের পর মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা কলকাতার নেতাজি ভবনে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করলেন। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য করার লক্ষ্যে এপ্রিল মাসে নেতাজি ভবনের নিচতলায় বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হলো। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২৫ শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয় নেতাজি ভবনের সামনে। পরে শিশির কুমার বসুর পরামর্শে সত্যেন বসু রায়ের নেতৃত্বে বনগাঁ সীমান্তে বকচরা নামক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। সেই হাসপাতালে অর্থোপেডিক্স বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ডা. অশোক সেনগুপ্ত। শিশির বসু ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করে থেমে থাকেননি। পাকিস্তানি হানাদারদের ভীতিজাগানিয়া সীমান্ত চৌকি পেরিয়ে যশোর, খুলনার নানা হাসপাতালে নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ করতেন তিনি। সেপ্টেম্বর মাস। শিশির কুমার বসু ও তার স্ত্রী কৃষ্ণা বসুর নজর তখন ইউরোপে। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে ব্রতী হন তারা। ১৯৭২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতার রাজভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সুভাষ চন্দ্র বসু তাঁর জেলজীবনে গানের খাতায় ১৭টি প্রিয় গান স্বহস্তে লিখে রেখেছিলেন। তাতে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’। সিল্ক স্ক্রলে লাল অক্ষরে সেই গানগুলোর প্রতিরূপ করে শিশির বসু ও কৃষ্ণা বসু তা তুলে দেন বঙ্গবন্ধুর হাতে। সুগত বসু বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মুক্তির গান নেতাজির জয়গান। আমরা বিশ্বাস করি, এই বাংলার মাটি, জল, আকাশ, সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি বাঙালিকে যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে, তার প্রভাব পড়েছে বাঙালির শিক্ষা-দীক্ষা ও স্বভাবে। এই নরম মাটিতে জন্মেছেন বলেই বাঙালি সত্য-সুন্দরের উপাসক। তিনি বলেন, ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানের সৃষ্টিশীলতার খবর কলকাতায় পৌঁছে যেত। তখন শামসুর রাহমানের কবিতা এ দেশে দারুণভাবে সমাদৃত। ১৯৭১ সালের পরে দুই বাংলার সাহিত্য-সংগীত জগতে এক নতুন মেলবন্ধনের সূচনা হয়। দুই বাংলার পরিচয়টা তখন আরও নিবিড় হলো।

সর্বশেষ খবর