শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

উপকূল জলদস্যুদের ‘সেইফ জোন’

♦ নেপথ্যে সোমালিয়ার সামরিক বাহিনী ♦ জড়িত ছয় গ্রুপ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সোমালিয়া এবং হর্ন অব আফ্রিকা উপকূল পণ্যবাহী ও ফিশিং জাহাজের জন্য এক আতঙ্কের নাম। এ উপকূলে জলদস্যুদের অবাধ বিচরণ ও নির্দিষ্ট অবস্থানের কারণে জলদস্যুদের সেইফ জোন হিসেবে          বিবেচনা করা হচ্ছে। এ এলাকায় কমপক্ষে ছয়টি জলদস্যু গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে, যাদের হাতে বর্তমানে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’সহ কমপক্ষে ২৩ জাহাজ জিম্মি রয়েছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, ‘ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান কয়েকটি জলদস্যু গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তাদের পেশাই হচ্ছে জাহাজ ছিনতাই করে জিম্মি করা। বর্তমানে সোমালিয়ান উপকূলে এমভি আবদুল্লাহসহ কমপক্ষে ২৩টি জাহাজ জিম্মি করে রেখেছে জলদস্যুরা।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর মতে, গত বছরের নভেম্বর থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে সোমালিয়ান উপকূলে অন্তত ১৪টি জাহাজকে জিম্মি করে জলদস্যুরা। এর মধ্যে তিনটি জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। জানা যায়, ভারত মহাসাগরের জাহাজ জিম্মির নেপথ্যে রয়েছে সোমালিয়ান কমপক্ষে ছয়টি জলদস্যু গ্রুপ। এ চক্রগুলোই ঘুরে ফিরে পণ্যবাহী ও ফিশিং জাহাজ জিম্মি করে। এ গ্রুপগুলোর একেকটিতে সদস্য রয়েছে কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চ প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা ও সামরিক বাহিনীর সদস্য। যারা চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে কিংবা অবসরে গিয়ে জাহাজ ছিনতাই গ্রুপে যোগদান করেছে। সাগরে সরাসরি জাহাজ ছিনতাইয়ে জড়িত ছয় গ্রুপ ছাড়াও আরও ১৫ থেকে ২০ গ্রুপ রয়েছে নেপথ্যে। যারা জাহাজ ছিনতাইয়ের পরের কাজগুলো সমন্বয় করে। সাগরে জাহাজ ছিনতাইয়ের পর আরও চার থেকে পাঁচটি গ্রুপ সম্পৃক্ত হয়। এক গ্রুপ জাহাজ ছিনতাই করে সোমালিয়ান উপকূলে নিয়ে যায়। দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে জাহাজ হস্তান্তর করে। এ গ্রুপটি অত্যাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত এবং সর্বাধুনিক প্রশিক্ষত। এ গ্রুপটি যে কোনো অভিযান ব্যর্থ করে দেওয়ার মতো ক্ষমতা রাখে। আরেকটা গ্রুপ জাহাজ মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ, আলোচনা, দোভাষী ও আইনজীবী নিয়োগের বিষয় দেখভাল করে। সর্বশেষ গ্রুপটি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে মুক্তিপণ প্রক্রিয়া তদারকি করেন। ২০১৩ সালের নভেম্বরে বিশ্বব্যাংক ইউনাইটেড নেশন অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইসিস সেন্টার ও ইন্টারপোলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সোমালিয়া এবং হর্ন অব আফ্রিকা উপকূলে জাহাজ ছিনতাই থেকে প্রায় ৩৩৯ মিলিয়ন থেকে ৪১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমানের মুক্তিপণ আদায় হয়েছে। এ মুক্তিপণের অর্থের বেশির ভাগই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাওয়ার পথে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। জাহাজে ২৩ নাবিক রয়েছেন। যাদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজটি চট্টগ্রাম ভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং করপোরেশনের। জাহাজটি সাধারণ পণ্য পরিবহন করে।

সর্বশেষ খবর