শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট

চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী পাবনার মাহমুদুল (৫৫)। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার লাশ পড়ে ছিল হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায়। লাশের পায়ের কাছে বসে বিলাপ করছিলেন মাহমুদুলের মা নুরুন্নাহার ও স্ত্রী সীমা বেগম।

মা নুরুন্নাহার বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তখন চিকিৎসক ছিলেন না। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসক আসার কিছুক্ষণ পর তার ছেলে মারা গেছেন।

এদিকে ভাতা বৃদ্ধি ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ চার দফা দাবিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডাকা কর্মবিরতি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেও চলছে। এতে চার দিন ধরে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে গিয়ে কোনো ইন্টার্ন চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা না থাকলেও অন্য চিকিৎসকরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখেছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এমবিবিএস শেষ করে রামেক হাসপাতালে ২১০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে ইন্টার্নশিপ করছেন। এ ছাড়া আগেই এমবিবিএস শেষ করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ না করা আরও প্রায় ৬০ চিকিৎসক এফসিপিএস ও এমডিএমএস কোর্স করছেন। তারা সবাই গত রবিবার থেকে কর্মবিরতিতে আছেন।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় পড়ে থাকা মাহমুদুলের স্ত্রী সীমা বেগম বলছিলেন, মাহমুদুল মারা যাওয়ার প্রায় আধা ঘণ্টা পর দুজন নার্স ইসিজি মেশিন নিয়ে আসেন। তারা বলেন, ‘মুখের কথায় তো আর যাওয়া যাবে না। কাগজ দেখাতে হবে। এখন কাগজ বের করতে হবে। ওনার হাতটা বের করে দেন।’ স্ত্রী সীমা বেগম চাদরের ভিতর থেকে মৃত স্বামীর দুই হাত বের করে দিলেন। তারপর ইসিজি করা হলো। মাহমুদুলের লাশের পাশেই পড়েছিলেন রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার রহিমাপুর গ্রামের মমতাজ উদ্দিন (৫৫)। তার সঙ্গে বসেছিলেন পুত্রবধূ রোকসানা বেগম ও জামাই রফিকুল ইসলাম। রোকসানা বলেন, তার শ্বশুর স্ট্রোক করেছেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ হাসপাতালে এনেছেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তাকে কোনো চিকিৎসক দেখেননি। রফিকুল ইসলাম বলেন, পাশেই দুজন রোগী মারা গেলেন শুধু সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে। চিকিৎসক না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ প্রসঙ্গে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘এসব অভিযোগ ঠিক নয়। আমাদের মিড লেভেলের ডাক্তাররা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। এত বড় হাসপাতাল, রোগী তো মারা যাবেই। আমাদের তো রোগীর কাছে যাওয়ার সময় দিতে হবে।’

চট্টগ্রামে কর্মবিরতি : চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, চমেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মুকেশ রঞ্জন দে বলেছেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি ছিল। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় আগামীকাল দুপুর পর্যন্ত কর্মসূচি বৃদ্ধি করা হয়। তবে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মাননীয় মন্ত্রীর আলোচনা করার কথা। দাবি আদায় হলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হবে।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দুই দফা দাবিতে টাঙ্গাইলে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখা। সংবাদ সম্মেলনে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখার ইন্টার্ন চিকিৎসক ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির চতুর্থ দিনে গতকাল সকাল থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্র্ডে কোনো শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কাজ করতে দেখা যায়নি। পাশাপাশি রোগীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে হাসপাতালের বারান্দায় মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে দেখা গেছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রেজিস্ট্রার চিকিৎসকদের রোগীদের দেখাসহ ব্যবস্থাপত্র দিতে দেখা গেছে।

পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের কর্মরত এক নার্স জানান, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে তাদের ওপর চাপ বেড়েছে। রোগীদের প্রেশার মাপাসহ বিভিন্ন কাজ শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা করতেন। সে কাজ এখন তাদের করতে হচ্ছে। পাশাপাশি রেজিস্ট্রার চিকিৎসকদের দায়িত্ব বেড়েছে। আগে রেজিস্ট্রার চিকিৎসকরা রাতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে না এলেও এখন দিন ও রাতে তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর