শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

নাজাত প্রত্যাশায় করণীয় আমল

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

নাজাত প্রত্যাশায় করণীয় আমল

রমজানের শেষ দশক চলছে। শেষ দশক নাজাতের। যেমন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজানের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের আর তৃতীয় দশক নাজাতের। প্রতিবছর রমজান মাস মুসলমানদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা নিয়ে আসে। রমজানে বিশ্বের মসজিদগুলো মুসল্লিদের সমাগমে মুখরিত থাকে। ইবাদতের জন্য আনন্দময় এক পরিবেশ বিরাজ করে। এই রমজান ও তার ব্যতিক্রম নয়। দেখতে দেখতে রহমত ও মাগফিরাতের দিনগুলো চলে গেল। রহমত কতটা পেলাম, মাগফিরাত কতটা করিয়ে নিতে পারলাম সেটা ভাবনার বিষয়। বুঝতে হবে আমরা নাজাতের দশকে অবস্থান করছি। এই সময়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদতে খুব বেশি মগ্ন হতেন। উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বণর্না করেন, ‘রমজানের শেষ দশকের আগমন ঘটলে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইস্পাত কঠিন দৃঢ় মনোবলে নিজেকে সংহত করতেন, রাতগুলোতে নিজে জাগ্রত থাকতেন এবং গৃহের অধিবাসী অন্যদেরও রাত জেগে ইবাদতে মশগুল থাকার প্রেরণা জোগাতেন।’ [সহিহ বুখারি, মুসলিম] এই সময়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খুব বেশি করে ইবাদত করা উচিত। কারণ এই সময়েও যদি আমরা নিজেদের পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে না নিতে পারি তাহলে হজরত জিবরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়া ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমিন বলা দোয়া মতে আমাদের চেয়ে দুর্ভাগা আর কেউ হবে না। হাদিস শরিফে আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২২২০২) সুতরাং যে ব্যক্তি এই পবিত্র সুযোগ পেয়েও স্বীয় গুনাহ ক্ষমা করাতে পারল না সে সত্যিই হতভাগা। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘একবার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উঠে আমিন, আমিন, আমিন বললেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, জিবরাঈল (আ.) আমাকে বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা তাদের একজনকে পেয়েও (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি বললাম, আমিন। অতঃপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমিন। জিবরাঈল আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার নিকট আপনার নাম আলোচিত হলো, অথচ সে আপনার ওপর দরুদ পড়ল না। আমি বললাম, আমিন।’ (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস ৬৪৬; সেজন্য এই সময়ের মধ্যে গুনাহ মাফ করাতেই হবে এমন ইচ্ছাপোষণ করে তওবা ইস্তেগফার ও আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি বেশি করা। বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।

তওবার শর্তগুলো- ১. অতীতের পাপ কাজের জন্য খুব বেশি অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া। যে যত বেশি অনুতপ্ত ও লজ্জিত হবে সে ক্ষমাপ্রাপ্তির তত বেশি কাছাকাছি চলে যাবে ইনশাআল্লাহ। ২. অতীতে ঘটে যাওয়া পাপ কাজের পুনরাবৃত্তি না করার দৃঢ় সংকল্প করা। সংকল্প যেমন মানসিকভাবে হবে, তেমন সংকল্প বাহ্যিকভাবেও হতে হবে। বাহ্যিক সংকল্প হলো, গুনাহের উপকরণ নষ্ট করে ফেলা বা পরিত্যাগ করা। যে যেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত সেই অপরাধের বাহ্যিক উপায় উপকরণ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনা। তাহলেই তার সংকল্পের দৃঢ়তা বোঝা যাবে। এতে ক্ষমাপ্রাপ্তির সম্ভাবনাও অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।

৩. রিজিক হালাল হওয়া। রিজিক বলতে কেবল খাবার নয় বরং গোটা উপার্জনই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। খাবার, পোশাক, বাসস্থানসহ সব কিছুই হালাল উপার্জন থেকে হওয়া। কারও যদি উপার্জন হারাম অর্থের হয়েই থাকে তাহলে তাকে তওবা করে সেই হারাম উপার্জন থেকে বেরিয়ে আসার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। সেই চেষ্টার মাত্রার ওপর তার তওবা কবুল হওয়ার সম্ভবনা নির্ভর করবে। কারণ মুমিন বান্দা-বান্দির জীবনের প্রধানতম প্রত্যাশা হলো চিরশান্তির জায়গা জান্নাতে প্রবেশ করা। জান্নাত ও নাজাত প্রত্যাশীদের জন্য অবশ্যই হালাল রিজিক আহার করতে হবে। এ সম্পর্কে হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) হজরত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা লালিত-পালিত হয়েছে, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (মিশকাত শরিফ) বোঝা গেল জান্নাতে যাওয়ার পূর্বশর্ত হালাল রিযিক আহার করা। উপরোল্লিখিত শর্ত মেনে যদি আমরা আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে তওবা করে ক্ষমা চাইতে পারি তাহলে আল্লাহতায়ালা হয়তো আমাদের ক্ষমা করবেন। রমজান দান-সদকা করার একটি উত্তম সময়। একটু দান অসহায় ও সম্বলহীনদের মনে অনেক বেশি আনন্দ দেবে। আর মানুষের দোয়া আমাদের ক্ষমাপ্রাপ্তির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেবে ইনশাআল্লাহ। মহান রব্বুল আলামিনের কাছে কায়মনোবাক্যে কামনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে সব ধরনের পাপমুক্ত জীবন গঠন করার তৌফিক দান করেন। রমজানের আখেরি দশক নাজাতের। তিনি যেন আমাদেরকে পূর্ণ নাজাত দান আমিন।

সর্বশেষ খবর