রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

রুমা থানচিতে আতঙ্ক কাটেনি

চলছে অভিযান, ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও অপহরণে সাত মামলা

বান্দরবান প্রতিনিধি

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা, থানচিতে তিন সরকারি ব্যাংকে ডাকাতি, আনসার সদস্যদের অস্ত্র লুট ও ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক কাটছে না। স্থানীয়দের অধিকাংশই এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। স্থানীয় বাজার ও দোকানপাট প্রায় বন্ধ রয়েছে। থানা, ব্যাংক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এদিকে রুমা ও থানচির ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট সাতটি মামলা হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র‌্যাব এ ঘটনায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সম্পৃক্ততার কথা বললেও মামলায় সংগঠনটির কোনো নেতা বা সশস্ত্র হামলাকারী কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সকালে রুমা উপজেলায় সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সোনালী ব্যাংক, রুমা উপজেলা মসজিদ ও আনসার ব্যারাক পরিদর্শন করেছেন। পরে তিনি বান্দরবানে গিয়ে জেলা প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীসহ বিভিন্ন দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এদিকে মঙ্গলবার ও বুধবার সংঘটিত ব্যাংকে হামলার পর রুমা ও থানচি উপজেলা সদর, বাজার ও দোকানপাট প্রায় বন্ধ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ। রুমার বাসিন্দা ক্যথোয়াইপ্রু জানান, সন্ত্রাসী হামলার পর এখানে জনমনে ট্রমা সৃষ্টি হয়েছে। ঘর থেকে বের হতে কেউ সাহস পাচ্ছেন না। বিকালের পরপরই প্রায় নীরব হয়ে যাচ্ছে উপজেলা সদরের বিস্তীর্ণ এলাকা। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী জানান, রুমা উপজেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জনগণকে নির্ভয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবারও কোনো ধরনের সংঘাতের আশঙ্কায় গতকাল শনিবারও কয়েকটি পরিবার নিজ এলাকা ছেড়ে জেলা সদরে বা আত্মীয়ের বাড়িতে চলে এসেছে। পর্যটক আগমন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রুমা এলাকায় পর্যটন ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা শঙ্কার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। রুমার পর্যটন ব্যবসায়ী মো. জাফর উল্লাহ বলেন, অবস্থার পরিবর্তন না হলে আসন্ন পর্যটন মৌসুমে আমরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হব।

সাত মামলা, নাম নেই কারও : বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংকে ডাকাতি, টাকা ও অস্ত্র লুটসহ ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট সাতটি মামলা হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র‌্যাব এ ঘটনায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সম্পৃক্ততার কথা বললেও মামলায় সংগঠনটির কোনো নেতা বা সশস্ত্র হামলাকারী কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে বান্দরবান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া মামলাসংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানা যায়। গতকাল বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, রুমা ও থানচির ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট সাতটি মামলা হয়েছে। জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অজ্ঞাতদের আসামি করে থানচি থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ বলছে, ব্যাংকে হামলা, টাকা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় রুমা থানায় শুক্রবার পুলিশ, আনসার, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা ও মসজিদের ইমাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের ১৩০-১৫০ জনকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ও ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারায় চারটি মামলা দায়ের হয়েছে। অন্যদিকে থানচি থানায় অজ্ঞাতনামা ডাকাত দলের ২৫-৩০ জনকে আসামি করে সোনালী ও কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা এবং পুলিশ বাদী হয়ে বিভিন্ন ধারায় তিনটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় বলা হয়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৮টা ১৫ মিনিটে রুমা থানাধীন রুমা বাজারের সোনালী ব্যাংক শাখায় শতাধিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ১৩০ থেকে ১৫০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল ব্যাংকের উত্তর দিক (বেথেলপাড়া) থেকে পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগ নিয়ে অতর্কিত হামলা ও মারধর করে অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার ও অন্য লোকদের জিম্মি করে ফেলে। আক্রমণের সময় সোনালী ব্যাংকের ডিউটিরত গার্ড কনস্টেবলসহ ১০ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুটি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, আটটি চায়না রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি, আনসার সদস্যদের চারটি শটগান ও ৩৫ রাউন্ড কার্তুজ এবং সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মো. নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। হামলাকারী দলের সদস্যরা ওই রাত ৯টা ১৫ মিনিটে হামলা শেষে লুটকৃত অস্ত্রগুলো ও ম্যানেজার মো. নিজাম উদ্দিনকেসহ ঘটনাস্থলের উত্তরে বেথেলপাড়ার দিকে চলে যায়। মামলায় আরও বলা হয়, গত বুধবার আনুমানিক দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি সশস্ত্র সংঘবদ্ধ ডাকাতদল থানচি থানাধীন সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালায়। এ সময় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা এবং কৃষি ব্যাংক থেকে আনুমানিক ৩ লাখ টাকাসহ ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫টি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে, কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে ঘটনাস্থল থেকে পশ্চিম দিকে শাহাজাহানপাড়ার পাহাড়ি এলাকা দিয়ে চলে যায়। উল্লেখ্য, একের পর এক কেএনএফের সশস্ত্র হামলার কারণে বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় বসবাসরত মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক উপজেলায় মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

সর্বশেষ খবর