শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভারতে নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট শুরু আজ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

আজ ভারতে লোকসভা (সংসদের নিম্নকক্ষ) নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ শুরু হচ্ছে। ভোট নেওয়া হবে মোট সাত দফায়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল, তৃতীয় দফায় ৭ মে, চতুর্থ দফায় ১৩ মে, পঞ্চম দফায় ২০ মে, ষষ্ঠ দফায় ২৬ মে এবং সপ্তম শেষ দফার ভোট ১ জুন। গণনা ৪ জুন। এ নির্বাচনে ৪০০ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে দেশটির কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)। অন্যদিকে বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’র লক্ষ্য বিজেপিকে পরাস্ত করা।

প্রথম দফায় আজ ভোট নেওয়া হচ্ছে যেসব আসনে, তার মধ্যে রয়েছে তামিলনাড়ু (৩৯টি আসন), রাজস্থান (১২), উত্তর প্রদেশ (৮), মধ্যপ্রদেশ (৬), উত্তরাখ- (৫), মহারাষ্ট্র (৫), আসাম (৫), বিহার (৪), পশ্চিমবঙ্গ (৩), অরুণাচল প্রদেশ (২), মণিপুর (২), মেঘালয় (২), ছত্রিশগড় (১), মিজোরাম (১), নাগাল্যান্ড (১), সিকিম (১), ত্রিপুরা (১), আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (১), লাক্ষাদ্বীপ (১), পদুচেরি (১) ও জম্মু-কাশ্মীরের ১টি আসন। ইতোমধ্যেই গোটা দেশের ৫৪৩ আসনের মধ্যে অধিকাংশ আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি, কংগ্রেস এবং অন্যান্য দল। সাত দফায় নির্বাচন হওয়ার কারণে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দেওয়া বাকি রেখেছে। নির্বাচনে নিজেদের দিকে ভোট টানার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি হলো প্রার্থী বাছাই। প্রার্থী ঘোষণা করার সময় সম্ভাব্য প্রার্থীদের জয়ের ক্ষমতা, তাদের জনপ্রিয়তা, জাত-সমীকরণ, জনসংখ্যা, দক্ষতাসহ অনেক বিষয় মাথায় রাখতে হয়। ১৪০ কোটির দেশ ভারতে মোট ভোটারের সংখ্যা ৯৬.৮ কোটি। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ১৪.২ শতাংশ মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের। সেক্ষেত্রে লোকসভায় মুসলিম সদস্য থাকা উচিত কমপক্ষে ৭০ জন। কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনে মাত্র ২৭ জন মুসলিম লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম এমপি ছিলেন ২৩ জন। ২০০৪ সালে ইউপিএ-১ সরকারের আমলে মুসলিম সংসদ সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৪। কেউ কেউ বলে থাকেন হিন্দু ভোট হারানোর ভয়ে মুসলিমদের প্রার্থী করতে চায় না শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলো। গোটা দেশে এখনো পর্যন্ত চারজন মুসলিমকে প্রার্থী করেছে এনডিএ জোট। এরা হলেন- আসামের ধুবড়ী আসনে জোটের শরিক দল আসাম গণপরিষদ প্রার্থী জাবেদ ইসলাম, বিহারের কিশানগঞ্জ আসনে জেডিইউ প্রার্থী মুজাহিদ আলম, লাক্ষাদ্বীপ আসনে টি.পি ইউসুফ এবং কেরালার মালাপ্পুরম আসনে বিজেপি প্রার্থী ড. আবদুল সালাম। অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটের তরফে ৩৪ মুসলিম মুখকে প্রার্থী করা হয়েছে। আসামের ধুবড়ী আসনে রাকিবুল হোসেন (কংগ্রেস), করিমগঞ্জ আসনে রশিদ আহমেদ চৌধুরী (কংগ্রেস), বিহারের মধুবনী আসনে মোহাম্মদ আলী আশরাফ ফাতমি (আরজেডি), আরারিয়া মো. শাহনাজ আলম আরজেডি), কিশানগঞ্জ আসনে মোহাম্মদ জাভেদ (কংগ্রেস), কাটিহার আসনে তারিক আনোয়ার (কংগ্রেস), জম্মু-কাশ্মীরের বারামুল্লা আসনে ওমর আবদুল্লাহ (জেকেএনসি), শ্রীনগর আসনে আগা সৈয়দ রুহুল্লা মেহেদী (জেকেএনসি), অনন্তনাগ আসনে মিয়া আলতাফ আহমেদ লারভী (জেকেএনসি), কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল আসনে মনসুর আলী খান (কংগ্রেস), কেরালার ভাতাকারা আসনে সফি পরামবিল, মাল্লাপুরম আসনে ই.টি মো. বাসির (আইইউএমএল), পোন্নাই আসনে আবদুস সামাদ সামাদানী (আইইউএমএল), লাক্ষাদ্বীপ আসনে মো. হামদুল্লাহ সৈয়দ (কংগ্রেস), ওই আসনে মো. ফয়জল পাদিপ্পুরাকে প্রার্থী করেছে (এনসিপি শারদ পাওয়ার গোষ্ঠী), ওড়িশার ভুবনেশ্বর আসনে ইয়াসির নওয়াজ (কংগ্রেস), উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর আসনে ইমরান মাসুদ (কংগ্রেস), কাইরানা আসনে ইকরা হাসান (সমাজবাদী পার্টি), রামপুর আসনে মহিবুল্লাহ নাদভী (সমাজবাদী পার্টি), সম্বল আসনে জিয়াউর রহমান বার্ক (সমাজবাদী পার্টি), আমরোহ আসনে কুনোয়ার দানিস আলী (কংগ্রেস), গাজীপুর আসনে আফজাল আনসারী (সমাজবাদী পার্টি), পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ আসনে আলী রামজ ভিক্টর (কংগ্রেস), মালদা উত্তর আসনে মোস্তাক আলাম (কংগ্রেস), মালদা দক্ষিণ আসনে ইশা খান চৌধুরী (কংগ্রেস), জঙ্গিপুর আসনে মুরতাজা হোসেন (কংগ্রেস), মুর্শিদাবাদ আসনে মুহাম্মদ সেলিম (সিপিআইএম), কৃষ্ণনগর আসনে এস এম সাদি (সিপিআইএম), ডায়মন্ড হারবার আসনে প্রতীক উর রহমান (সিপিআইএম), কলকাতা দক্ষিণ আসনে সায়রা শাহ হালিম (সিপিআইএম), উলুবেরিয়া আসনে আজহার মল্লিক (কংগ্রেস), আসানসোল আসনে জাহানারা খান (সিপিআইএম), বর্ধমান পূর্ব আসনে নীরব খান (সিপিআইএম), বীরভূম আসনে মিল্টন রশিদ (কংগ্রেস)। এ নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বাইরে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এককভাবে লড়াই করছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের তরফে ছয়জন মুসলিমকে প্রার্থী করা হয়েছে। রাজ্যে মোট আসন ৪২টি, এর মধ্যে মালদা দক্ষিণ আসনে শাহনেওয়াজ আলী রায়হান, বহরমপুর আসনে সাবেক ক্রিকেটার ইরফান পাঠান, মুর্শিদাবাদ আসনে আবু তাহের খান, জঙ্গিপুর আসনে খলিলুর রহমান, বসিরহাট আসনে হাজী নুরুল ইসলাম, উলুবেরিয়া আসনে সাজদা আহমেদ। তৃণমূলের প্রত্যাশা এ ছয় আসনেই তাদের প্রার্থীরা জয়ী হবেন। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বাইরে গিয়ে এককভাবে লড়াই করছে মায়াবতীর দল বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)। উত্তর প্রদেশসহ কিছু রাজ্যে একাধিক মুসলিম মুখকে প্রার্থী করেছে তারা।

সর্বশেষ খবর