সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে একই কারণে ১১ প্রসূতির মৃত্যু হয়নি

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে সিজার-পরবর্তী ১১ প্রসূতির মৃত্যুর খবরে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। গঠিত হয়েছিল ১০ সদস্যের ‘ডেথ রিভিউ কমিটি’। গতকাল দুপুরে কমিটির সদস্যরা তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, একক কারণে ১১ প্রসূতির মৃত্যু হয়নি। মৃতদের মধ্যে চারজন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত, ছয়জনের ক্রনিক ডিজিজ (কিডনি সমস্যাসহ নানা জটিলতা) এবং একজন প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মারা যান। তদন্তে সিজার ও সিজার-পরবর্তী চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনজেকশন এবং ওষুধে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। ডেথ রিভিউ কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ-চমেকের অধ্যক্ষ ডা. শাহেনা আক্তার বলেন, ‘আমরা প্রসব-পরবর্তী ১১ মৃত্যুর বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলা এবং ওষুধ প্রশাসনের সংগৃহীত স্যাম্পলের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে কিছু কারণ নির্ধারণ করে একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছি। সঙ্গে এ ব্যাপারে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এখানে প্রসব-পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ক্রনিক ডিজিজ ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এসব বিষয় বর্ণনা করে আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরে একটি প্রতিবেদন পাঠাব। অধিদফতর বিষয়গুলো নিয়ে মাঠ পর্যায়ের হাসপাতালে বাস্তবায়নে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১১ প্রসূতির মধ্যে ছয়জন রোগী মারা গেছেন চিকিৎসার পর ডিআইসি-ডেসিমিনেটেড ইন্ট্রাভাসকুলার কোয়াগুলেশন (রক্ত জমাট না বাঁধা) ও প্রসব না হওয়ায়। এসব রোগীর গর্ভাবস্থায় কিছু সমস্যা ছিল, যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, জ্বর, মিসড এবরসান, ফুসফুসে সংক্রমণ ইত্যাদি। এমন অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অন্যদিকে চারজন রোগী অপারেশনের পর ডাইলেটেড কার্ডিওমাইপ্যাথিজনিত (হার্টের মাংসপেশি নেতিয়ে পড়া) কারণে মারা গেছেন। বর্তমানে গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত চেকআপ, যেমন- হার্ট-কিডনি-লিভারের অবস্থা পরীক্ষা করা হয় না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া একজন রোগীর প্রসব-পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। সে রোগীরও ডিআইসি হয়েছে বলে চিকিৎসা রেকর্ডে ছিল। ডেথ রিভিউ প্রতিবেদনের সুপারিশের মধ্যে ছিল- গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, গর্ভাবস্থায় ও প্রসবকালীন সেবার তত্ত্বাবধান জোরদার করা, রুটিন পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করা, যেমন- হার্ট-কিডনি-লিভার ও রক্তের জমাট বাঁধাজনিত কোনো অসুবিধা আছে কি না, যা সাধারণ অপারেশনে করা হয়। অপারেশনের আগে-পরে অ্যানেসথিসিয়া সেবা নিশ্চিত করা, রোগীর ফলোআপ জোরদার করা, সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি করা, পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ নার্স-মিডওয়াইফ থাকা, রোগীর তথ্য যথাযথ সংরক্ষণ করা ও রোগীর সামগ্রিক অবস্থার বিষয়ে স্বজনদের অবগত থাকা। গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে চট্টগ্রামের তিনটি হাসপাতালে অস্বাভাবিকভাবে ১১ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারজন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ছয়জন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে একজন। এ ছাড়া চলতি এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামের বেসরকারি দুটি হাসপাতালেও মারা যান দুই প্রসূতি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে স্বাস্থ্য অধিদফতর গত ২৮ মার্চ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষকে সভাপতি এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালককে সদস্য সচিব করে ১০ সদস্যের ‘ডেথ রিভিউ’ নামে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর