বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সংঘাত

মধ্যরাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অস্ত্রের মহড়া, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, গাছ কাটার ছবি তোলায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে হুমকি

প্রতিদিন ডেস্ক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ফের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে দুই পক্ষ মহড়া দিয়েছে রামদা, রডসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাদার বখশ হলের সামনে ঘটে এ ঘটনা। এর আগে ১১ মে সোহরাওয়ার্দী হলে অতিথি কক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে রাতভর সংঘর্ষে জড়ায় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষ। এতে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই সময় সাত ছাত্রলীগ কর্মী আহত হন। অন্যদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস সংলগ্ন নুরজাহান ছাত্রী মেসে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বিরোধের জেরে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় সাত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদিকে গাছ কাটার ছবি তোলায় ঠিকাদার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থীকে হুমকি দিয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : সোমবার মধ্যরাতে সোহরাওয়ার্দী হলে নেতা-কর্মী নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ ঢোকেন। পথে হল ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত নেতা আতিকুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়। আতিকুরের অভিযোগ-নিয়াজ মোর্শেদ বহিরাগতদের নিয়ে হলে ঢুকে তাকে হত্যার হুমকি দেন। হলে হাত-পা ভেঙে ফেলতে চান। রাত ২টার দিকে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীরা লাঠিসোঁটা, রড, রামদাসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে হলের সামনে শেষরাত পর্যন্ত মহড়া দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতিরিক্ত পুলিশ এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অনাবাসিক ২০ শিক্ষার্থীকে বের করে দেয়।হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছেন। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, তিনিই (নিয়াজ) দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ আহমেদ নকীব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র মোটেও কাম্য নয়। এতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। অবিলম্বে এ বিশৃঙ্খলা বন্ধ করা জরুরি।’ হল প্রাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনাবাসিক ২০ শিক্ষার্থীকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘উদ্ভূত সমস্যা একটি সংগঠনের। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা নিরসনের চেষ্টা চলছে।’

তদন্ত কমিটি : গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসনের এক সভায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘১১ মে সংঘর্ষ ও ১৩ মে মধ্যরাতে হলে উদ্ভূত পরিস্থিতি হল প্রশাসনের নজরে এসেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া হলের অনাবাসিক সব শিক্ষার্থীকে ১৬ মে দুপুর ১২টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস-পাশর্^বর্তী নুরজাহান ছাত্রী মেসে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফারিয়া খাতুনের গত চার মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল। সোমবার বিকালে তার কাছে মেস ম্যানেজার বিবেক বিশ্বাস বিদ্যুৎ বিল চাইলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ফারিয়া বিষয়টি তার বন্ধু আবু হানিফ পিয়াসকে (একই বিভাগ ও শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী) জানান। সন্ধ্যায় পিয়াস ১০-১২ বন্ধু নিয়ে মেস ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাদের বের করে দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আলী, আবু হানিফ পিয়াস, নাঈম রেজা, হৃদয় আবির, স্থানীয় আশিক খানসহ অন্তত সাতজন আহত হন। প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘আমি এখনো কোনো পক্ষেরই লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) গবেষণাগার নির্মাণের জন্য কেটে ফেলা গাছের ছবি তোলায় দুই শিক্ষার্থীকে হুমকি ও তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ঠিকাদার নাঈম খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দফতরের পরিচালক রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দোষ স্বীকার করে এ ঘটনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে নাঈম খান দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ছাত্রদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাটি আরও পর্যালোচনা করা হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ভুক্তভোগী ও শিক্ষার্থীরা জানান, চুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র সংলগ্ন স্থানে গাছ কেটে কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের নির্মাণকাজ চলছে। এনকে ট্রেডার্সসহ দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ কাজ করছে। সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে কাটা গাছগুলোর ছবি তুলতে যান চুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোভন লাল সরকার। তখন শোভনকে ছবি তুলতে বাধাদান ও তার সঙ্গে বাজে আচরণ করেন ঠিকাদার নাঈম খান ও তার সহযোগীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শোভন লাল সরকার বলেন, ‘অভিযুক্ত ঠিকাদার নাঈম খান আমাকে বলেন, এখানে শিক্ষার্থীরা কেউ তার অনুমতি না নিয়ে ছবি তুলতে কিংবা দাঁড়াতেও পারবে না। ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাম্মাউল ইসলাম এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেন। তখন ঠিকাদার নাঈম ও তার সহযোগীরা আমাদের ধাক্কা দেন এবং অশোভন আচরণ করেন।’

সর্বশেষ খবর