বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

চোখে পানি মুখে হাসি ফিরলেন ২৩ নাবিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চোখে পানি মুখে হাসি ফিরলেন ২৩ নাবিক

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের ফুরাল অপেক্ষার পালা। জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়া ২৩ নাবিক ফিরেছেন ঘরে। গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি)-এর ১ নম্বর জেটিতে ফিরে আসা নাবিকদের বিরোচিত সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম বলেন, ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে, এর চেয়ে আনন্দের কিছু হতে পারে না। নগর পিতা হিসেবে আমি খুশি। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ যারা নাবিকদের মুক্তির পেছনে ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’ কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেছেন, জিম্মিদশা থেকে মুক্ত নাবিকরা এখন আরও সাহসী। কারণ তারা ভয়কে জয় করে দেশে ফিরেছেন। তাদের আরও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। বাঙালি সাহসী বীরের জাতি। তারা এসব জিম্মিদশাকে ভয় পায় না। আজকে আমাদের আনন্দের দিন।

জানা যায়, গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরের কুতুবদিয়া থেকে এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের নিয়ে বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ১ নম্বর জেটির উদ্দেশে রওনা দেয় এমভি জাহান মনি-৩। তার আগে থেকেই জেটিতে জড়ো হয়েছিলেন নাবিকদের স্বজনরা। জাহাজটি বন্দরের নিকটবর্তী এলাকায় এলে বন্দরের তিনটি টাগবোট পাহারা দিয়ে নিয়ে আসেন নাবিকদের বহন করা জাহাজকে। জাহান মনি-৩ দৃষ্টিসীমানায় আসার পর জেটিতে জড়ো হওয়া সবার মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। বহুদিন পর বুকের ধনকে বহনকারী জাহাজকে দেখতে পেয়ে নাবিকদের মা-বাবার কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। জাহাজ কাছাকাছি এলে নাবিকরা হাত নেড়ে উচ্ছ্বাসের জবাব দেন। বিকাল ৪টা ২ মিনিটে জাহাজ এনটিটি-১ নোঙর করে। ৪টা ১৮ মিনিটে ক্যাপ্টেন আবদুল রশীদের নেতৃত্বে একে একে জেটিতে নেমে আসেন নাবিকরা। এ সময় আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জিম্মিদশা থেকে মুক্ত নাবিকদের জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। নাবিকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অনলাইনে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। নাবিকদের বরণ করে নেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক করিম উদ্দিন, সারোয়ার জাহান, শাহরিয়ার জাহান রাহাত, চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক প্রমুখ। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে নামা নাবিকরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ অন্যতম। বাবাকে ফিরে পেয়ে উৎফুল্ল চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ইয়াশরা ফাতেমা। ইয়াশরা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘আমার খুবই ভালো লাগছে বাবাকে পেয়ে।’ বন্দিদশা থেকে মুক্ত হওয়া আতিকুল্লাহ খান বলেন, ‘আজকে আমাদের সবার জন্য আরেকটা ঈদ। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমার একটাই কথা, সবাইকে ধন্যবাদ।’

এমভি আবদুল্লাহর নাবিক মো. সাজ্জাদ হোসাইনের বাবা গাজু মিয়া বলেন, ‘গত ঈদ আমাদের জন্য ছিল দুর্বিষহ। আমার পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন কেউ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি। আমার ছেলেকে ফিরে পাওয়া ঈদের আনন্দ উপভোগ করছি।’ চতুর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমদের মা জোছনা বেগম বলেন, আজ আমাদের জন্য ঈদ। তাই ছেলের পছন্দের খাবার গরুর মাংস, কই মাছ, শিমের বিচি রান্না করেছি।’ জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, সবার দোয়ায় আমরা সবাই সুস্থভাবে ফিরে এসেছি, এটাই বড় পাওয়া। এখন আমরা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হব, এরচেয়ে আনন্দের কিছু হতে পারে না।’ গত ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাওয়ার পথে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। গত ১৪ এপ্রিল জাহাজটি জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয়। জাহাজটি চট্টগ্রাম ভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং করপোরেশনের। জাহাজটি সাধারণ পণ্য পরিবহন করে থাকে।

সর্বশেষ খবর