শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভারতে কী হলো এমপি আনারের

কীভাবে নিখোঁজ সন্ধানে দিল্লি কলকাতা হাইকমিশন, কথা বলছে ঢাকা আলোচনায় সীমান্ত এলাকার হুন্ডি সোনা ব্যবসা, শেষ লোকেশন ঝাড়খণ্ড

মির্জা মেহেদী তমাল ও সাখাওয়াত কাওসার

ভারতে কী হলো এমপি আনারের

সীমান্ত জেলা ঝিনাইদহের এমপি ও শাসক দলের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজিম আনারের নিখোঁজ রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ভারতে নিখোঁজ হওয়ার পর ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারছে না দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার নিখোঁজ হওয়ার তদন্ত করতে গিয়ে বেশকিছু বিষয় সামনে চলে এসেছে। তিনি কি আদৌ ভারতেই আছেন, নাকি দেশে ফিরেছেন-এ নিয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। তার বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালান, মাদক কারবার এবং হুন্ডির অভিযোগ বহুদিনের। এসব বিষয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের তদন্তের আওতায় নিয়েছে। এ ছাড়া নারীঘটিত কোনো বিষয় রয়েছে কি না সেটিও তদন্ত হচ্ছে। সর্বশেষ ৪ লাখ ২০ হাজার রুপি নিয়ে এমপি আনারের উধাও হয়ে যাওয়া এবং একটি মেসেজ নিখোঁজের রহস্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আনোয়ারুলের বিষয়ে বিক্ষিপ্তভাবে তথ্য আসতে থাকে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে গত রাতে সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পুলিশের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশও এমপি আনোয়ারুল আজিমের নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করেছে। কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের অফিস থেকে কলকাতায় অবস্থিত বিদেশমন্ত্রকের শাখায় বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই এমপি কোথায় আছেন তা জানার এবং তাকে উদ্ধার করার জন্যও সাহায্য চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এ নিয়ে দিল্লিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। কলকাতাতেও পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেখানে একটি মিসিং ডায়েরি করা হয়েছে।

এদিকে এমপি আনোয়ারুলের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন জানান, গত ১৪ মে থেকে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আমরা খুবই টেনশনে আছি। তবে সব উপায়ে চেষ্টা করছি। বাবা নিখোঁজ থাকার বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে আমরা পরিবারের লোকজন কলকাতায় যাব। এরই মধ্যে আনারের ভাতিজাসহ তিনজনকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হয়েছে।

ভারতের নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ গত রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ভারত সরকারের পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। ভারত সরকারের গভীর আন্তরিকতার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। তারা গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি তদন্ত করে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুখবর দিতে পারেনি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নয়াদিল্লি হাইকমিশন এবং কলকাতা উপ-হাইকমিশন সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশ সদর দফতর এবং ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি বিশেষভাবে খতিয়ে দেখছে। তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। ভারতীয় সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে যেসব তথ্য চাওয়া হচ্ছে আমরা তাদের তা সরবরাহ করছি। তদন্তের স্বার্থেই দুই দেশের তথ্য কম্বাইন্ড করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সম্ভাব্য সবগুলো কারণ সামনে রেখেই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

কলকাতা থেকে প্রতিনিধি দীপক দেবনাথ জানান, রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার আগে শেষবার ভারতের ঝাড়খন্ডে মোবাইল লোকেশন পাওয়া গেছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বলেন, ‘নিখোঁজ সম্পর্কিত অভিযোগপত্রে এমপির যে দুটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল, সেই নম্বর ট্রেস করে মুজাফফরপুরে তার লোকেশন পাওয়া যায়। এ ছাড়া যে গাড়িতে ওই এমপি উঠেছিলেন সেই গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসা করেও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু জানাতে চাননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

আনোয়ারুল আজিমের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফ জানান, ১২ মে চিকিৎসার জন্য গিয়ে এমপি আনার পশ্চিমবঙ্গের নিউটাউন এলাকায় তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে উঠেছিলেন। পরদিন ১৩ মে হোয়াটসঅ্যাপে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। ১৪ মে একবার কথা হওয়ার পর তার সঙ্গে আর কেউ কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। পারিবারিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ব্যবসায়িক কারণ, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অথবা চিকিৎসার জন্য আনোয়ারুল আজিম আনার প্রায়ই ভারতে যেতেন। একই সূত্রগুলো জানায়, আনারের ১৪ মে নিখোঁজ হওয়ার আগমুহূর্তে এমপি তার ম্যানেজারের কাছে ৪ লাখ ২০ হাজার রুপি চান। ওই টাকা নেওয়ার পর থেকেই তার কোনো সন্ধান মিলছে না। তিনি কেন, কী উদ্দেশ্যে হঠাৎ এতগুলো ভারতীয় রুপি নিলেন সে বিষয়েও কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আগে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আনোয়ারুল আজিম একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন। তিনি ভারতীয় কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। একটি প্রাইভেট কারে ওঠেন। এরপর থেকেই তার খোঁজ নেই। আনার পশ্চিমবঙ্গের নিউটাউন এলাকায় বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার দিন সকালেও গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। গোপাল বিশ্বাসকে আনার বলেছিলেন, দুপুরে বাইরে খাবেন। বাসায় ফিরতে রাত হবে। এরপর গোপাল বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে একটি এসএমএস আসে যে ‘আমি জরুরি কাজে দিল্লি যাব। ২/৩ দিন পর ফিরে এসে যোগাযোগ করব।’ পরিবারের সন্দেহ এই বার্তা আনারের লেখা নয়। গোপাল বিশ্বাস এ ব্যাপারে বরানগর থানায় মিসিং ডায়েরি করেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর