শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

কিরগিজস্তান ছাড়ছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দাবি করেছে দেশটির সরকার। হামলাকারী ও ইন্ধনদাতাদের উদ্দেশ করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কিরগিজ প্রেসিডেন্ট সাদির জাপারভ। আটক করা হয়েছে হামলায় জড়িত অনেককে। ঘটেনি নতুন হামলার ঘটনাও। তবে এখনো আতঙ্কে রয়েছেন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দেশটিতে পড়তে যাওয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী। যে কোনো সময় হামলার আশঙ্কায় তারা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বিশেষ ফ্লাইটে দেশটি ছেড়েছেন। ২০ জনের মতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীও ফিরে এসেছেন দেশে।

গত ১৩ মে বিশকেকে স্থানীয়দের সঙ্গে মিসরীয় শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয়। পরে মিসরীয় শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের মারধর করে। কয়েকদিন পর ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ভিডিও দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে সব বিদেশি শিক্ষার্থীর ওপর ব্যাপক হামলা চালায় স্থানীয়রা। গায়ের বর্ণ দেখে হামলা করা শুরু করে। হোস্টেলে ঢুকে হামলা চালায়। বিশকেকে গত ১৭-১৮ মে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলায় অন্তত ৩০ জন আহত হন। পরে শহরজুড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনার পর দেশটি ছাড়তে শুরু করেছে বিদেশি শিক্ষার্থীরা। গতকাল ১৭৯ জন পাকিস্তানি বিশকেক থেকে পাকিস্তান ফিরে যান। এর আগে রবিবার রাতে ৩৫০ জনের বেশি পাকিস্তানি শিক্ষার্থী নিজ দেশে ফিরে যান। এদিকে কিরগিজস্তানের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাদের সবাই মেডিকেল শিক্ষার্থী। তারাও আতঙ্কে দিন পার করছেন। আগামী ১২, ১৬ ও ২৬ জুন চার্টার্ড ফ্লাইটে তাদের দেশে ফেরার কথা। তবে চার্টার্ড ফ্লাইটের অপেক্ষায় না থেকে, তারা ইতোমধ্যে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।

কিরগিজস্তান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল বিকালে নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখন পর্যন্ত সেখানে বাংলাদেশি ছাত্রদের কোনো গুরুতর আহত বা হতাহতের খবর নেই। পাশের দেশ উজবেকিস্তানের তাসখন্দে অবস্থানরত আমাদের রাষ্ট্রদূতকে সেখানে যেতে বলা হয়েছে। তিনি স্থানীয় সময় বিকালে বিশকেকে পৌঁছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে ক্যাম্পাস ভিজিট করবেন এবং কিরগিজ পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। নতুন করে কিরগিজস্তানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়নি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

এদিকে কিরগিজস্তানে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ডা. জেরিত ইসলাম গতকাল জানান, এখন আর কেউ আক্রমণ করছে না। তবে সবার মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছে। অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন। তাই অনেকেই চার্টার্ড ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা না করে দেশে ফিরতে চাইছেন। যারা চলে যেতে চাইছেন তাদের আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি। নিরাপত্তা দিয়ে বাসে করে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত ২০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে দেশে পাঠানো হয়েছে। সব শিক্ষার্থীই নিজ নিজ দেশে চলে যাচ্ছেন। তবে বাংলাদেশি যেসব শিক্ষার্থী হোস্টেলে আছেন, সবাই নিরাপদে আছেন। যারা ফ্ল্যাটে থাকেন তাদেরও নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্টের কঠোর হুঁশিয়ারি : বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলায় জড়িতদের এবং এর পেছনে ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্ট সাদির জাপারভ। গতকাল জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলাকারীদের আটক করেছে এবং ঘটনার বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করেছে। একটা অংশের উসকানিতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা এমন এক ঘটনা ঘটিয়েছে যা দেখে পুরো দেশ হতবাক। ১৩ মের ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও ভিডিও যাচাই না করেই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পরিণতি আমরা সবাই দেখলাম। তিনি বলেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যদি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারত এবং প্রকৃত ঘটনা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে পারত, তাহলে হয়তো এসব ঘটত না। এর মাধ্যমে একটা গোষ্ঠী পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, সব ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। আমি সরাসরি বলতে চাই যে, যারা ক্ষমতায় আসতে পারেনি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযানকে সমর্থন করে না, তারা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ও ভুয়া অ্যাকাউন্ট দিয়ে এ ধরনের উসকানিমূলক তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে, হামলাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ অস্ত্রও বহন করছিল। আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সংঘর্ষ ছাড়াই পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে আদেশ দিয়েছি। আর যদি কোনো লুটপাট, পুলিশের ওপর হামলা বা ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।

 

সর্বশেষ খবর