সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিদেশি বিনিয়োগ কমছেই নানা সংকটে উৎকণ্ঠা

পরিবেশ উন্নয়নের পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের ♦ ছয় বছরে বিদেশি বিনিয়োগ ১৭০২ কোটি ডলার

শাহেদ আলী ইরশাদ

বিদেশি বিনিয়োগ কমছেই নানা সংকটে উৎকণ্ঠা

বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, কর ব্যবস্থায় ভোগান্তি আর নীতির ধারাবাহিকতা না থাকায় এক বছরের ব্যবধানে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমছে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। পরিকল্পনা করে বিদেশি বিনিয়োগের পরিস্থিতি উন্নয়ন না করলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। দেশের ব্যবসার পরিবেশ কেমন, সেটা মূল্যায়ন করে এমন মতামত দিয়েছে উদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা।  দেশে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের চলমান ব্যবসার মুনাফা পুনরায় বিনিয়োগ অথবা নতুন করে বিনিয়োগ করাকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের হিসাবে নেওয়া হয়। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কার্ডের হিসাবে ২০২৩ সালে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। গত বছর বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কম। ২০২২ সালে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। হিসাব বলছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১ হাজার ৭০২ কোটি ডলার। দেশে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ২০৪১ সাল নাগাদ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৬৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল সরকারি এবং বাকি ১৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বেসরকারি উদ্যোগ গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারি বেসরকারি ৩৯টি অঞ্চলের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। চট্টগ্রামের মীরেরসরাই, ফেনীসহ মোট ১১টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। এসব অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য নানারকম সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। কিন্তু তারপরও কেন কমছে বিদেশি বিনিয়োগ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি একচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, সার্বিকভাবে বিনিয়োগের পরিবেশ ঠিক না হলে শুধু জমি দিয়ে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যাবে না। যদি আমদানি বাধাগ্রস্ত থাকে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অভিজ্ঞতা সুখকর না হয়, তাহলে তো আর লাভ হবে না। ম্যাক্রো ইকোনমি ভালো নেই। ডলার সংকটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল আমদানিতে কিছুটা হলেও বিধিনিষেধ আছে। যেসব বিদেশি দেশে ব্যবসা করছে তারা মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যেতে পারছে না। এটাও বিদেশি বিনিয়োগ না আসার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের সার্বিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতিও কমে গেছে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগ কমে ২০৫৪ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। ২০২২ সালে স্থিতি ছিল ২০৭৫ কোটি ডলার। এমন বাস্তবতায় বেসরকারি বিনিয়োগের ২৭ দশমিক ৫ শতাংশের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, ভিশন ২০৪১ ও অষ্টম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় যেসব লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে আমরা তার কাছাকাছিও নেই। এ বিষয়ে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, আমাদের বিদ্যমান অবকাঠামো এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে সাপোর্ট করছে না। আমাদের অনেক সুন্দর সুন্দর নীতিমালা আছে। এমনকি আমাদের লজিস্টিক নীতিমালাও আছে। কিন্তু এসব নীতিমালার বাস্তবায়ন হয় না। এগুলো  আমাদের আক্রান্ত করছে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ইউটিলিটি সেবাগুলো নিশ্চিত করা যায়নি। এসব সেবা নিশ্চিত না হলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। কাস্টমস, ভ্যাট কর্তৃপক্ষ যেভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার করে, তা বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের আক্রান্ত করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সর্বশেষ খবর