শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

রেললাইনে ছিন্নভিন্ন ছয় লাশ, মৃত্যু নিয়ে রহস্য

নরসিংদী প্রতিনিধি

রেললাইনে ছিন্নভিন্ন ছয় লাশ, মৃত্যু নিয়ে রহস্য

নরসিংদীর রায়পুরায় পৃথক ট্রেনে কাটা পড়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মেইল ট্রেনে কাটা পড়ে পাঁচজন ও পৌনে ১২টার দিকে কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে আরও একজনসহ মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়। রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দার রেলগেট এলাকায় দুই কিলোমিটার অদূরে পলাশতলী ইউনিয়নের খাকচর কমলপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রেল পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি, রায়পুরা ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল এসে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে। একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। বিকাল ৬টা পর্যন্ত নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে লাশের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। নিহত সবাই পুরুষ। তাদের বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ২৫-এর মধ্যে হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সব লাশ কাছাকাছি হওয়ায় মৃত্যুর কারণ নিয়ে জনমনে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দার রেলগেট এলাকায় পলাশতলী ইউনিয়নের কমলপুরে রেললাইনের পাশে ছিন্নবিচ্ছিন্ন পাঁচটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। রেল পুলিশ, পিবিআই, রায়পুরা থানা পুলিশ ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধারে কাজ শুরু করেন। একই সঙ্গে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেন। তবে কী কারণে বা কীভাবে এই ঘটনা ঘটেছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি রেল পুলিশ ও রেল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে দুপুরে পৌনে ১২টার দিকে উৎসুক এক ব্যক্তি পাঁচজন নিহতের খবরে ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় মেথিকান্দার রেলগেট এলাকায় ঢাকা থেকে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। ট্রেনে কাটা পড়ে তার লাশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হলেও পাঁচজনের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। সর্বশেষ স্টেশনে থাকা সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। ভোরে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মেইল ট্রেনটি মেতিকান্দা স্টেশন অতিক্রম করার সময় সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ট্রেনটির ছাদে কয়েকজন যাত্রী ছিল। এই যাত্রীরাই মারা গেছে কি না সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ।

অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, কিছুদিন পরপরই এই এলাকার চরাঞ্চলে ভয়ংকর টেঁটাযুদ্ধসহ সংঘর্ষ বাধে। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালে সুমন মিয়া নামে এক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও তার সমর্থরা। এরই মধ্যে সুমন হত্যা মামলা অন্যতম অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবিদ হোসেন রুবেল জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরে আসে। এলাকার আধিপত্য ফিরে পেতে ওই সময় প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায় রুবেল ও তার সমর্থকরা। ওই সময় এলাকায় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো পক্ষ নিহতদের হত্যার পর লাশ রেললাইনে ফেলে গেছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অন্যদিকে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে কি না সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী দেলোয়ার হোসেন বলেন, সকালে রেললাইনের পাশে লোকজনের ভিড় দেখে এগিয়ে আসি। এসে দেখি রেললাইনে মানুষের শরীরের বিচ্ছিন্ন কিছু অংশ ও রক্ত। একটু সামনে এগোতেই আরেকটি লাশ দেখা যায়। পরে আরও একটু সামনে গেলে আরও চারটি লাশ দেখা যায়। এটি পারাপারের জন্য কোনো রাস্তা নয়। তাই এই মৃত্যুগুলো রহস্যজনক মনে হচ্ছে। নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে এসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শরীরগুলো একত্র করেছি। এর পরই পরিচয় শনাক্তের জন্য নরসিংদীর পিবিআই সদস্যদের খবর জানিয়েছি। বেলা সাড়ে ১১টায় তারা ঘটনাস্থলে এসে লাশ শনাক্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মেথিকান্দা স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আশরাফ আলী বলেন, তারা ট্রেনের ছাদ থেকে পিছলে পড়ে কাটা পড়েছেন, নাকি রেললাইনে বসে থাকা অবস্থায় কাটা পড়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিহত ব্যক্তিরা স্থানীয় কেউ নন বলে জানা গেছে। লাশ উদ্ধারের আগে ওই রেললাইন দিয়ে আরও তিনটি ট্রেন চলাচল করেছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রেলওয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছে পিবিআই। তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। তাছাড়া লাশের সুরতহাল করা হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে ঠিক কীভাবে এই পাঁচজন ট্রেনে কাটা পড়লেন, বা মারা গেছেন তা তদন্ত করে এর কারণ অনুসন্ধান চলছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রেলওয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অনির্বাণ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সামসুল আরেফীন, রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শফিকুল ইসলাম, রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন ও ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি আবদুল আলীম।

পরিচয় পাওয়া গেছে : নিহত ছয়জনের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। দুপুরে পৌনে ১২টার দিকে মেথিকান্দার রেলগেট এলাকায় ঢাকা থেকে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম পরিমল সূত্রধর (৬০)। তিনি শিবপুরের যোশর এলাকার সুরেন্দ্র সূত্রধরের ছেলে। তবে সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে পাঁচজন নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতের ছেলে বিপুল সূত্রধর জানিয়েছেন, রোগী দেখার জন্য সকালে রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন আমার বাবা। সেখান থেকে কীভাবে তিনি মেথিকান্দা স্টেশন এলাকায় এসেছেন, তা বুঝতে পারছি না।

সর্বশেষ খবর