শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সারা দেশের পরিস্থিতি অশান্ত

মহানগর নগর জেলা উপজেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাত, সিলেটে শিক্ষার্থী-পুলিশ-ছাত্রলীগ ত্রিমুখী সংঘর্ষ

প্রতিদিন ডেস্ক

সারা দেশের পরিস্থিতি অশান্ত

সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

অশান্ত ছিল গতকাল সারা দেশের পরিস্থিতি। মহানগর, নগর, জেলা শহর ও উপজেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে থেমে থেমে পুলিশের সংঘাত হয়েছে। সিলেটে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থী-পুলিশ-ছাত্রলীগ ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় ঘটেছে হতাহতের ঘটনা।

চট্টগ্রাম : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি আন্দোলনকারীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করতে চাইলে তাদের ধাওয়া করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করেছে চট্টগ্রামজুড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। বিকালে বহদ্দারহাট এলাকায় পুলিশ বক্সে কে বা কারা আগুন দিয়েছে। এসব ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। নিহত একজনের নাম ইমাদ। তিনি পটিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অপর নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি। দিনব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধ শত। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ এক শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এদিকে বিকালের পর থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গুলিবিদ্ধ আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত ২৭ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, পুলিশ, পথচারী এবং ব্যবসায়ী। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন জানান, আহত একজনকে বহদ্দারহাট এলাকা থেকে হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন। দুপুরে হঠাৎ করেই স্থানীয় ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। প্রথমে একদল নেতা-কর্মী আসেন বহদ্দারহাটের মেয়রের বাড়ি থেকে। পরে আরেক দল আসে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার সড়ক হয়ে। এ সময় তাদের হাতে কিরিচ, রামদাসহ দেশি অস্ত্র দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনে শাহ আমানত সেতু এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। তাদের ধাওয়া দিয়ে রাহাত্তারপুলের দিকে নিয়ে যায় পুলিশ। এর পর কর্ণফুলী সেতুর দক্ষিণ এলাকা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা আসতে থাকেন নতুন ব্রিজের দিকে। এ সময় তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে পুলিশের। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। অবস্থান নেন বহদ্দার হাট ও বাদুরতলা এলাকায়। এ সময় আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পুলিশ সদস্যদের পিছু হটতে দেখা যায়। প্রায় আধ ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। একপর্যায়ে চাঁন্দগাঁও থানার সামনে অবস্থান নেন তারা। এরপর থানায় হামলার ঘটনা ঘটে।

সাভার : দফায় দফায় সংঘর্ষে গতকাল রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকা। নিহত হন একজন। আহত হন শতাধিক। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৪৫ জন। আটক করা হয়েছে ২৫ শিক্ষার্থীকে। গুলিবিদ্ধদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সাভারে সামনে অবস্থান নেন। আন্দোলনরত কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সাভার। এ সয়ম গুলিতে নিহত হন ইয়ামিন নামে এক শিক্ষার্থী। দুপুরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই শিক্ষার্থী মিরপুর এমআইএসটিতে অধ্যয়নরত ছিলেন। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। আহত আরও ১০০ জনকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছুড়ে পুলিশের হামলার পাল্টা জবাব দেন।

মাদারীপুর : মাদারীপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে শকুনী লেকের পানিতে পড়ে দীপ্ত দে নামে এক আন্দোলনকারী কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে। পুলিশ লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে ছয়জনকে। এদিকে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। মাদারীপুর শহরের লঞ্চঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন এবং এসপি অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সৈয়দপুর : চলমান কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল সারা দেশে চলা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে নীলফামারীর সৈয়দপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১০ পুলিশসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।  টায়ার ও কাঠ জ্বালিয়ে বিভিন্ন স্থানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে চারটি মোটরসাইকেল।

রংপুর : গতকাল দিনভর উত্তাল ছিল রংপুর। কমপ্লিট শাটডাউনে রাস্তায় রাস্তায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নেমে পড়েন। এ সময় তাজহাট থানা, আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও কাউন্সিলর অফিস ভাঙচুর করা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একাধিক মোটরসাইকেল। এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। আন্দোলনের কারণে দোকানপাট, অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধসহ নগরীতে অটোরিকশা, রিকশা চলাচল সীমিত ছিল। এ ছাড়া প্রাইভেট কারসহ দূরপাল্লা ও আন্তজেলা রুটে কোনো বাস চলাচল করেনি।

কিশোরগঞ্জ : সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল দিনব্যাপী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিভিন্ন এলাকা। সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অনেকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে শহরের রথখলা এলাকা দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল গুরুদয়াল সরকারি কলেজের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে পিছু হটা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে এবং রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে তারা। শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেলে জবাব দিতে থাকে। পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গুলি ও ইটপাটকেলে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ইটপাটকেলে সাংবাদিক ফারুকুজ্জামানসহ কয়েকজন পুলিশ আহত হন।

ময়মনসিংহ : চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ময়মনসিংহে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বেলা ১১টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নগরীর টাউন হল মোড়ে জড়ো হয়ে সেখানে অবস্থান নেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতীকী কফিন নিয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক নতুন বাজার, গাঙ্গিনারপাড়, স্টেশন রোড প্রদক্ষিণ করে পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় প্রধান সড়কগুলোর সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গতকাল ভোর থেকেই ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। মাঠে ছিলেন ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়াও বিপুলসংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ নগরীতে টহল দেয়।

ফরিদপুর : ফরিদপুরে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে কমপক্ষে ২০ জনের মতো। সকাল ১০টার দিকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বেধড়ক পিটুনি দেয় পুলিশ। ওই সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জিলা স্কুল ও পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঢুকে পড়েন। পরে পুলিশ ওই দুটি স্কুলে ঢুকে আন্দোলনকারীদের বেদম পেটায় ও কয়েকজনকে আটক করে। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তারা স্টেশন রোড ধরে দৌড়ে পালিয়ে কেউ কেউ ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়, ইশান বালিকা বিদ্যালয়, জিলা স্কুল, পুলিশ লাইনস স্কুলে গিয়ে আশ্রয় নেন। পুলিশ পরে ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাদের অনেকের মাথায় হেলমেট এবং হাতে কাঠ ও লোহার পাইপ ছিল।

নাঙ্গলকোট : কমপ্লিট শাটডাউন চলাকালে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা উপজেলা সদরের লোটাস চত্বর এলাকা থেকে মিছিল বের করে বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেলগেট এলাকায় পৌঁঁঁছলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আহত হন ১৫ জন।

খুলনা :  আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-হত্যার প্রতিবাদে খুলনায় প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় কাঠের টুকরো, গাছের গুঁড়ি ও ইট ছড়িয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গলিপথের প্রবেশমুখে বাঁশ বেঁধে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। খুলনা-যশোর রোডের নতুন রাস্তা মোড়, শিববাড়ি মোড়, পিটিআই মোড়, বাবু খান রোড ও সাউথ সেন্ট্রাল রোডে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সড়কে অতিরিক্ত পুলিশ-বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে শহরজুড়ে। সিরাজগঞ্জ : বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের কড্ডা এলাকায় আন্দোলনকারীরা প্রায় চার ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।

পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

নেত্রকোনা : নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে দিনভর ঘটেছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। মদনে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় আট পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরসহ সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন- ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করেছে।

নোয়াখালী : আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মাইজদী, বেগমগঞ্জ, সুবর্ণচরসহ বিভিন্ন স্থানে মিছিল করে। বেগমগঞ্জ বাংলাবাজারে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় গাছ ফেলে যানবাহন বন্ধ করে দেয়। পরে পুলিশ তা সরিয়ে নেই।

দিনাজপুর : দিনাজপুর গতকাল সকালের দিকে শান্তিপূর্ণ থাকলেও দুপুরে দিকে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় জেলা শহরের চারুবাবুর মোড়সহ আশপাশের এলাকা। এ সময় আহত হন ৫০ জন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলার আশুগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। জেলার সদর ও সরাইলে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে সরাইলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন।

মাগুরা : মাগুরায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল দুপুরে আন্দোলনকারীরা প্রথমে শহরের মাগুরা-যশোর সড়কের ভায়না এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করার সময় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে কিছু শিক্ষার্থী ভায়না মৎস্য অফিসের সামনে মাগুরা-যশোর সড়কে অবস্থান নেন। তারা কোটা সংস্কারের দাবি তুলে নানা স্লোগান দেন। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় গুলিবর্ষণ করে আন্দোলনকারীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছে। রাবার বুলেট বিদ্ধ সাইফসহ ৫-৬ জন আহত হয়েছেন। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ কয়েকজন পুলিশও আহত হয়েছেন। গতকাল বিকাল ৩টার পর থেকে কয়েকটি পয়েন্টে আন্দোলনকারীদের সমবেত হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ প্রতিরোধ সৃষ্টি করে।

গাজীপুর : গাজীপুরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন। দুপুর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় ও কোনাবাড়ী এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অবরোধের কারণে ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বগুড়া : কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বগুড়া। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে থানা রোড দিয়ে সাতমাথায় প্রবেশ করলে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণে সাতমাথা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহত হয়েছেন শতাধিক। পুলিশ প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। আহতদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

নাটোর : নাটোর শহরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহত হন ২০ জন। সকাল থেকেই নাটোর শহরের প্রেস ক্লাব চত্বরে জড়ো হতে থাকেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। একই সময় ছাত্রলীগ সেখানে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। সকাল থেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠি ও হকিস্টিক হাতে প্রেস ক্লাব চত্বরে উপস্থিত হন।

মৌলভীবাজার : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকা শাটডাউনের সমর্থনে মৌলভীবাজারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে।

হবিগঞ্জ : কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হবিগঞ্জ শহর। দুপুর ১২টা থেকে শহরের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে একটানা চার ঘণ্টা চলে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ। এতে শিক্ষার্থী, পুলিশ ও পথচারীসহ আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক। আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে।

টাঙ্গাইল : সর্বাত্মক শাটডাউনে টাঙ্গাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত স্থানীয় সাংবাদিকসহ ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

শেরপুর : কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে শেরপুর কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। গুটিকয়েক অটোরিকশা চললেও মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে পুলিশ ও র‌্যাবের একটি টহল টিম সারা শহর প্রদক্ষিণ করছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগ।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৩ জন আহত হয়েছেন।

নীলফামারী : নীলফামারীতে সংঘর্ষে ১৮ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয় সাতটি মোটরসাইকেল। গতকাল সকালে জেলা শহরের চৌরঙ্গি মোড়, পৌর বাজার, পিটিআই মোড় ও ডিসি অফিস চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

মানিকগঞ্জ : কোটাবিরোধী আন্দোলনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বেলা ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা শহরের দিকে আসতে চাইলে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। ইটের আঘাতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন।

লক্ষ্মীপুর : কোটা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি শাটডাউনের অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় কোটা প্রথা বিলুপ্তের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয় তারা। আন্দোলনরত অধিকাংশ শিক্ষার্থীর হাতেই লাঠিসোঁটা দেখা গেছে।

জয়পুরহাট : পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুলিশ শিক্ষার্থীসহ  ১০  জন আহত হয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী চলা এ ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ায় আহতদের বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়েছে।  

যশোর :  কোটা সংস্কার ও আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বেলা ১১টা থেকে যশোরে বিক্ষোভ শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী যশোরের জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। সেখান থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর একটি বিশাল মিছিল মুজিব সড়ক হয়ে যশোর রেল স্টেশনে পৌঁছায়। রেললাইনের ওপর কাঠ ফেলে ২০ মিনিট অবরোধ করে রাখে তারা। পরে পুলিশ গিয়ে রেললাইনের ওপর থেকে কাঠ সরিয়ে দেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ শহরের চাঁচড়া মোড়ে গিয়ে বেনাপোল, ঢাকা, খুলনা ও ঝিনাইদহে যাওয়ার বাইবাস সড়কগুলো অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় কোটা সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কুমিল্লার কোটবাড়ী বিশ্বরোডে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ অন্তত ৫০০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলে একটি সূত্র জানায়। এ ছাড়া সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। আড়াইটার দিকে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে যানবাহন চলা বন্ধ রয়েছে। বিকাল সাড়ে ৩টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোটবাড়ী এলাকায় থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১২টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কোটবাড়ী বিশ্বরোডে জড়ো হয়। দুপুর ১টার দিকে শুরু হয় সংঘর্ষ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর