সোমবার, ২২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে নিহত আরও ১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে নিহত আরও ১৭

কারফিউ জারির দ্বিতীয় দিনেও গতকাল রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জেলায় সড়ক অবরোধের চেষ্টা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। রাজধানীর রায়েরবাগ, যাত্রাবাড়ী, মিরপুরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ হয় চিটাগাং রোডে। এসব ঘটনায় অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহতদের মধ্যে নরসিংদীতে দুজন, সিদ্ধিরগঞ্জে পাঁচজন, সাভারে একজন রয়েছেন। দুর্বৃত্তরা এদিন গাজীপুর সিটি করপোরেশন মেয়রের বাসভবনে দফায় দফায় হামলা চালায়। তবে অন্যান্য দিনের চেয়ে গতকাল ঢাকার বাইরে পরিস্থিতি ছিল অনেকটাই শান্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেছে। সকাল থেকে যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া ও রায়েরবাগ, দনিয়ায় পিকেটাররা অবস্থান নেন। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা প্রতিহতের চেষ্টা করলে ওই এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপের পাশাপাশি গুলি ছোড়ে। পাশাপাশি হেলিকপ্টার থেকেও টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। তারা হলেন- দোকান কর্মচারী ইমরান (১৬), গার্মেন্টস শ্রমিক রাকিব (২১) এবং আমিন (১৬)। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছে ৬২ জন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৪৫ জন। এর আগে, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সংঘর্ষে আহত পুলিশের পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা গেছেন। বাড্ডা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত রফিকুল ইসলাম গতকাল ঢামেক হাসপাতালে মারা যান। গাজীপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত জিসান গতকাল ঢামেক হাসপাতালে মারা গেছেন। এ ছাড়া উত্তরায় মারা গেছেন আরও একজন।

প্রগতি সরণিতে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছেন। এ ছাড়া উত্তরা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আজমপুর রেললাইনে অবস্থান নেন। সেখান থেকেও পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন।

গতকাল সকাল ৭টা থেকে রামপুরা এলাকার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে পিকেটাররা। এ সময় তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। রামপুরায় বিকাল থেকে ফের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। রামপুরার বিভিন্ন অলি-গলিতে আশ্রয় নিয়ে তারা বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ চেষ্টা করছে। থেমে থেমে চলা এ সংঘর্ষে ওই এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া মহাখালীতেও বিক্ষোভ হয়।

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মিলন মিয়া (৩০) নামে এক মাছ ব্যবসায়ী ও আকাশ নামে এক হকার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। নিহত মিলন মিয়া সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা এলাকার তাহের মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া। নিহত আকাশের বাবার নাম আকরাম হোসেন। তিনি নয়াআটি মুক্তিনগর এলাকার আলেক মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া। নিহত অন্য দুজন হলেন মো. সজিব (২৫) ও রুবেল মিয়া (৩০)। এদিকে শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাতে সুমাইয়া আক্তার সুমি (২০) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। তার স্বামীর নাম জাহিদ। তিনি গার্মেন্ট কর্মী। তার বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ থানার চরন্দপুর এলাকায়। তারা সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লার এনায়েত উল্লার বাড়ির ভাড়াটিয়া।

শনিবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মৌচাক এলাকায় ১২টি যানবাহনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় সানারপাড় এলাকায় সাবেক এমপি হাজী সেলিমের মালিকানাধীন একটি গোডাউনে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং মাদানীনগর এলাকায় ফজর আলী গার্ডেন সিটি মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে ও ইলেকট্রনিক শো-রুমে লুটপাট করে মালামাল নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

সাভার (ঢাকা) : শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত সোবহানবাগ এলাকায় সড়কে অগ্নিসংযোগ করতে চাইলে পুলিশ তাদের লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। এতে শেখ মোহাম্মদ (৩৭) নামে এক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি হাসপাতালে গতকাল সন্ধ্যার পর তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া গতকাল সকালে সোবহানবাগ এলাকায় বিএনপি নেতা খোরশেদের বাড়িতে অভিযান চালাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হন। পুলিশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকে আটক করে। অন্যদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শিমুলতলা এলাকায় গতকাল বেলা ১১টার দিকে মিছিল বের করে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে সংঘর্ষ বাধে। টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে আহত হন ১৩ জন। তারা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় দুপুরে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এতে নয়জন আহত হন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্নœ পয়েন্টে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। বিজিবি ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে তারা সরে যায়। এদিকে সাভারে গত কয়েকদিনের সহিংসতার ঘটনায় সাভার মডেল ও আশুলিয়া থানায় পৃথক আটটি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় কয়েক হাজার আসামি করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে দুর্বৃত্তদের সঙ্গে পুলিশে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

নরসিংদী প্রতিনিধি : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদী সদর উপজেলার মেহেরপাড়ায় গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শত শত লোক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা টায়ার জ্বালিয়ে সড়কে আগুন দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। এ সময় চারজন নিহত হন। এদের দুজনের নাম নাহিদ (১৮) ও রাব্বি (২৫)। বাকি দুজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীরা সহিংসতার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিহত করে।

মাদারিপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। রবিবার ভোর রাতে (২১ জুলাই) এ ঘটনা ঘটেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নাশকতাকারীদের এই হামলায় প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর শহরের শকুনী লেকের দক্ষিণ পাড়ে মাদারীপুর পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়ামটি ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ কোটি টাকা খরচে নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধন করেন। গত তিন দিন ধরে মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা সরকারি ও বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এমপির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এরই ধারাবাহিকতায় ভোর রাতে (২১ জুলাই) দুর্বৃত্তরা মাদারীপুর পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়ামটি ভাঙচুর করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। এতে পুরো অডিটোরিয়ামটি পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রবিবার ভোর রাতে দুর্বৃত্তরা মুক্তিযোদ্ধা অডিটরিয়ামে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয়রা খবর দিলে ফায়ার সার্ভিস প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শেখ আহাদুজ্জামান জানান, আমরা খবর পেয়েই দুর্ঘটনা স্থলে আসি। দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আগুন লাগার সূত্রপাত জানা যায়নি। মাদারীপুর সদর থানার ওসি এইচ এম সালাহ উদ্দিন জানান, অগ্নিকাে র ঘটনায় পুলিশ ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছে। ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।

মাদারীপুর পৌরসভার সচিব খন্দকার ফিরোজ ইলিয়াস জানিয়েছেন, দুষ্কৃতকারীদের অগ্নিসংযোগে ৮ কোটি টাকা খরচে নির্মাণ করা অডিটোরিয়ামটি পুড়ে গেছে। এতে কমপক্ষে ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিসংযোগের বিষয়টি আমরা স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে অবিহত করেছি। তার পর প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে কারফিউ জারি করার পর কোথাও কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। আন্দোলনকারীদেরও দেখা মেলেনি কোথাও। দিনভর নগরজুড়ে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে বেড়েছে বিভিন্ন যানবাহন ও পথচারীর সংখ্যা। গতকাল রবিবার সিএমপি সূত্র জানিয়েছে, নাশকতা করার দায়ে গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১ জনকে। কারফিউ শিথিল করার পর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (জনসংযোগ) কাজী তারেক আজিজ বলেন, কারফিউ জারির দ্বিতীয় দিন চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় কোনো ধরনের পিকেটিং বা সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। গত ২৪ ঘণ্টায় আন্দোলন চলাকালীন যারা নাশকতা করছে ভিডিও ফুটেজ দেখে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে বায়েজিদ থানায় একজন, চান্দগাঁও থানায় ৫ জন ও পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ জনকে।

সরেজমিন গতকাল রবিবার দুপুরের পর দেখা গেছে, দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারের প্রবেশমুখ শাহ আমানত সেতু এলাকায় মানুষের ভিড়। গন্তব্যে যাওয়ার জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে এবং ছোট ছোট যানবাহনে মানুষ নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাচ্ছে। এ ছাড়া হাতেগোনা কয়েকটি বাস বান্দরবান ও কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ পথচারী সিএনজি অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, রিকশা করা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাচ্ছে। এ ছাড়া নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুরসহ বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। এ ছাড়া কারফিউ শিথিল সময়ে পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, কাঁচা বাজারে ভিড় জমাতে দেখা গেছে। এদিকে গতকালও নগরীর সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি প্রধান প্রধান সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর গাড়ি। দিনভর মানুষ ঘর থেকে বের না হলেও দুপুরের পর থেকে দোকানপাটে মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

নগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন কক্সবাজার এলাকার মাজেদা খাতুন। তিনি বলেন, ইপিজেড এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করি। এখন কারফিউয়ের কারণে সবকিছু বন্ধ রয়েছে। বেতনের টাকায় বাসা ভাড়া, খাওয়া হয়ে যেত অন্য সময়ে। কিন্তু এখন কারফিউর কারণে সবকিছুর দাম বাড়ছে। বাসায় না থাকা যে কদিন ছুটি থাকে বাড়িতে চলে যাব। কিন্তু ইপিজেড থেকে এখানে আসতেই অনেক টাকা চলে গেছে। এখন দেখছি কিছু গাড়ি চলাচল করছে। কারফিউ কদিন থাকে বুঝতেছি না। পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার আসব।

চকবাজার এলাকায় কাঁচাবাজার করতে আসা আজিজুল হাকিম বলেন, সকাল থেকে কারফিউর কারণে বাসা থেকে বের হইনি। কারফিউ শিথিল করার খবর পেয়ে বাজার করতে এসেছি। এরই মধ্যে এসে দেখি বাজারে মানুষের যে ভিড়। শিথিল সময়ে বাজার করার জন্য মানুষ জটলা বেড়েছে। দ্রুত সময়ে এ সমস্যা সমাধান জরুরি।

খুলনা : সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি নিয়ে আদালতে রায় ঘোষণার পরও খুলনায় বিভিন্ন সড়কে পুলিশের শক্ত অবস্থান রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে কেউ ঘর থেকে বের হলে পুলিশি চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে। গন্তব্য নিশ্চিত হওয়ার পরই যেতে দেওয়া হচ্ছে। অন্যথায় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

নগরীর খুলনা-যশোর রোড, শিববাড়ি মোড়, মজিদ সরণি, সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, এমএ বারী রোড, খানজাহান আলী রোড, ডাকবাংলা ও পিকচার প্যালেস মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্টে পুলিশকে কড়াকড়ি অবস্থানে দেখা গেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোথাও জড়ো হতে দেখা যায়নি।

হামলা-ভাঙচুর আশঙ্কাায় দোকানপাট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। থমথমে পরিস্থিতি রয়েছে সর্বত্র।

এদিকে কারফিউ বিধিমালা লঙ্ঘনসহ সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির কারণে খুলনায় গত দুই দিনে ৪৩ জনকে আটক করে পুলিশ। তবে অধিকাংশকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা খুলনায় বরাবরই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। আদালতে রায় ঘোষণার পরও সড়কে শক্ত অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। কোটা আন্দোলনের আড়ালে কেউ নাশকতা বা সন্ত্রাসী কর্মকা  করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বগুড়া : কারফিউ জারির দ্বিতীয় দিন গতকাল রবিবার সকাল থেকে বগুড়া শহর ছিল শান্ত। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। সেনাবাহিনীর টহল ছিল জোরদার। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখে শহরকে। জেলা প্রশাসন থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়। বিকাল ৪টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলার ১২টি উপজেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কারফিউ শিথিল হলে ঘর থেকে বাইরে আসেন অনেকে। কারফিউ চলাকালীন বাস-ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। শহরে ছোট ছোট যান চলাচল করলেও বড় কোনো যানবাহন চোখে পড়েনি। শহরের বিভিন্ন বিপণিবিতাণ ও শপিংমল বন্ধ ছিল।

জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতার কারণে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। গত শনিবার কারফিউ জারির পর গতকাল রবিবার যৌথ বাহিনীর টহলের ফলে বগুড়ার জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। শহরের গলিতে রিকশা চলাচল করলেও জেলা শহর থেকে উপজেলায় কোনো দূরপাল্লার যানবাহন ছেড়ে যায়নি। জেলাজুড়ে কোথাও রাজনৈতিক সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া শহরের কোথাও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্রদের দেখা যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ছিল জোরদার। এদিকে ঢাকায় উচ্চ আদালতে কোটা সংস্কারের রায় ঘোষণার পর পাড়ায় পাড়ায় ছাত্র ও অভিভাবকদের মধ্যে স্বস্তি দেখা যায়।

রংপুর : কারফিউ জারির দ্বিতীয় দিনেও রংপুরের পরিস্থিতি থমথমে ছিল। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছে রংপুর। এদিকে তাজহাট থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ ছাড়া নগরীর সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পৃথক আরেকটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশি অভিযানে এ পর্যন্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা লিটন পারভেজ, জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন যুবসংহতির নেতা আরিফ  হোসেন রয়েছেন। রবিবার কোথাও আন্দোলনকারীদের দেখা যায়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনের নামে একদল দুর্বৃত্ত তাজহাট থানায় থামলা চালায়। এ সময় ২০-২৫টি মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই দিন রাতে ডিবি অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশের দুটি স্থপনায় হামলার ঘটনায় রবিবার  দুপুরে পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে। মামলার এজাহারে ২০০ থেকে ৩০০ জনের নাম দিয়ে অজ্ঞাত ৬-৭ হাজার জনকে আসামি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন। এদিকে আওয়ামী লীগ জেলা ও মহানগর অফিস, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস, পরিবার পরিকল্পনা অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় পৃথক পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

সর্বশেষ খবর