সোমবার, ২২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সেনা টহল, কারফিউ অব্যাহত

চিরুনি অভিযানে নামবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেনা টহল, কারফিউ অব্যাহত

রাজধানীতে গতকাল তৎপর সেনা সদস্যরা

কোটাবিরোধী আন্দোলন সামনে রেখে নাশকতায় মদতদাতা, বাস্তবায়নকারী এবং অভিযানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে হচ্ছে তিনটি পৃথক তালিকা। তালিকায় উঠে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করেই শুরু হচ্ছে চিরুনি অভিযান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নিজেদের তালিকা টার্গেট করে অভিযান চালাবে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তৈরি হবে সমন্বিত তালিকা। এসব তালিকায় উঠে আসছে তাদের যাবতীয় সব তথ্য। তখন প্রয়োজনে যৌথ অভিযানের বিষয়টিও ভাবনায় রয়েছে সরকারের শীর্ষ কর্তাদের।

জানা গেছে, ধ্বংসাত্মক এবং ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কারফিউ ঘোষণা করে সরকার। নামানো হয় সেনাবাহিনী। গত দুই দিনে পরিস্থিতি অনেকটা অনুকূলে এলেও নেপথ্য মদতদাতা, বাস্তবায়নকারী এবং  অভিযানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে হচ্ছে বিশেষ তালিকা। তবে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে পুঁজি করে কৌশলে নাশকতাকারীরা অংশ নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে। ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের দিকে ধাবিত করানো হয়েছে আন্দোলনকারীদের। অর্থসহ নানা কৌশলে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে। এসব কাজের নেপথ্য মদতদাতা হিসেবে দেশি-বিদেশি চক্রের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তারে চিরুনি অভিযান শুরু হবে। এ ব্যাপারে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের এও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- ‘এইবারই সফল হতে না পারলে, হাতে চুড়ি পরে হাঁটতে হবে’। এ সংক্রান্ত অডিও ক্লিপও তাদের হাতে এসেছে। এগুলো নিয়ে এরই মধ্যে বিশ্লেষণ চলছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। নাশকতাকারীদের আইনের আওতায় আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জামায়াত-বিএনপিই নাশকতাকারী ও দুষ্কৃতকারী। এদের একজনকেও ছাড় দেওয়া হবে না। যা করা দরকার সবকিছুই করা হবে। এজন্য স্পেশাল ড্রাইভ তো হবেই। নরমাল ড্রাইভেও এই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

সতর্ক অবস্থানে সেনাবাহিনী : দুই ঘণ্টা বিরতির পর গতকাল বিকাল ৫টা থেকে আবারও কারফিউ শুরু হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিহত করতে রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনা সদস্যদের কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে। সড়কে চলছে সেনা টহল। রাস্তায় কাউকে সন্দেহ হলেই তল্লাশি করা হচ্ছে। যাচাই করা হচ্ছে পরিচয়।

বিভিন্ন অলিগলি থেকে কোনো দুষ্কৃতকারী বের হয়ে যাতে নাশকতায় লিপ্ত হতে না পারে এজন্য রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও সংঘাতময় এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনা সদস্যদের সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনাগুলোর সামনে ছিল অধিক সেনা সদস্যের উপস্থিতি। জননিরাপত্তার কথা ভেবে রাজধানীর বেশ কয়েকটি প্রধান সড়ক বন্ধ করে দেন সেনা সদস্যরা। ঢাকার বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ছিল সেনাবাহিনীর উপস্থিতি।

গত শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে চলমান পরিস্থিতিতে সারা দেশে কারফিউ ও সেনা মোতায়েনের বিষয়টি জানানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সংঘাত নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকের অধীনে সেনাবাহিনী কাজ করবে। এরপর আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী ক্রম অবনতিশীল সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ রাষ্ট্রের প্রভূত ক্ষতিসাধিত হয়েছে। এহেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অসামরিক প্রশাসনের অনুরোধে সরকার শুক্রবার রাত ১২টা থেকে দেশব্যাপী সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রাজধানীতে অল্প কিছু ব্যক্তিগত যান ছাড়া রাস্তায় তেমন কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। অলিগলিতে দোকানপাট খোলা থাকলেও মূল সড়কের পাশের দোকানপাট ছিল বন্ধ। ঢাকার বাইরেও রাস্তাঘাট ছিল অনেকটা সুনসান। তবে কারফিউর আওতামুক্ত ছিল অ্যাম্বুলেন্স, গণমাধ্যমের গাড়ি, ফায়ার সার্ভিস ও জরুরি পরিষেবার গাড়ি। গতকাল ফাঁকা সড়কে এসব গাড়িকে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে কয়েকদিনের ভয়াবহ তান্ডবের পর সড়কে সেনা সদস্যদের অবস্থানে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকটাই স্বস্তি দেখা গেছে। গতকাল কুড়িলে তল্লাশির মুখে পড়া সবজি ব্যবসায়ী হালিম বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা আমাকে তল্লাশি করেছেন। পরিচয়, কোথায় যাব, কেন যাব এগুলো শুনে ছেড়ে দিয়েছেন। গত কয়েকদিন রাস্তায় নামতে সাহস পাইনি। সবজি আনতে পারিনি। আমরা গরিব মানুষ, পরিস্থিতি শান্ত থাকলেই খুশি।

পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আগামীকাল থেকে (আজ) ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণঞ্জ ও নরসিংদী কারফিউ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ বহাল থাকবে। এই জেলাসমূহে কারফিউর বিষয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। বাকি জেলাগুলোতে কারফিউ থাকার সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসকরা। তারা পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবেন। গতকাল রাত ৯টায় ধানমন্ডির বাসায় বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিক ব্রিফ করেন। এ সময় তিনি জানান, কাল (আজ) দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে।

সর্বশেষ খবর