বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আদালতের মাধ্যমে সরকারের এই উদ্যোগ আন্দোলনের শুরুতেই গ্রহণ করা হলে নিরীহ ছাত্র-জনতার এতগুলো প্রাণ হারাতে হতো না। এত ভয়াবহ রক্তপাত, এত মানুষ মারা যেত না। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এসব নোংরা খেলা বাদ দিয়ে ছাত্রদের ন্যায়সংগত সব দাবি পূরণ করে অবিলম্বে দেশে শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক করুন। গতকাল বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ইন্টারনেট শাটডাউনের মাধ্যমে গোটা দেশকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের ভয়ে। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে গোটা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এখন উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর জন্য সরকার নিজেদের রক্ষা করতে বিরোধী দলের ওপরে দোষ চাপাচ্ছে। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, জনগণের যে দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করে দেশবাসীকে স্বস্তি দিন। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন। চলমান এই আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে লাগাতার অংশ নেওয়ার জন্যও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে চলমান আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্মিলিতভাবে অগণিত ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অসংখ্য নেতা-কর্মী। গুরুতর আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গুম করেছে ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় নেতাকে। এই প্রেক্ষাপটে আজ (গতকাল) দেশের সর্বোচ্চ আদালত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি করার জন্য। সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তারা সংবিধানের ১০৪ ধারা মোতাবেক পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করেছেন।এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক প্রধান দল হিসেবে আমরা শুরুতেই বলেছিলাম ছাত্রদের এই স্বতঃস্ফূর্ত দাবি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার জন্য। দেশের দায়িত্বশীল সব নাগরিক সরকারকে একই আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেননি। আদালতের মাধ্যমে সরকারের এই উদ্যোগ আন্দোলনের শুরুতেই যদি গ্রহণ করা হতো তাহলে নিরীহ ছাত্র-জনতার এতগুলো প্রাণ হারাতে হতো না। দেশের এই ভয়াবহ রক্তাক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। বরং সরকার নিজেই সরকারি ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে ছাত্র আন্দোলনকারীদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে লেলিয়ে দিয়েছে নিরীহ ছাত্রদের ওপর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের অন্যতম নীতিনির্ধারক ওবায়দুল কাদের নিজেই ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য। এ সময় তিনি (ওবায়দুল কাদের) যে ভাষা ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করেছিলেন, তা ছিল একটি নিরীহ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংসতায় পরিণত করার সহিংস যাত্রাবিন্দু।