রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

মন্ত্রী মেয়র এমপি, বিএনপি নেতাদের বাসায় হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

মন্ত্রী মেয়র এমপি, বিএনপি নেতাদের বাসায় হামলা

চট্টগ্রাম নগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের মিছিল থেকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১০ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নগরীতে কয়েকটি পুলিশ বক্স এবং বেশকিছু ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাও ভেঙে ফেলা হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর নিউমার্কেটে বিক্ষোভ শেষ করে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পথে পথে এসব হামলা-ভাঙচুর করা হয়। সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে শিক্ষামন্ত্রী ও চসিক মেয়র মহোদয়ের বাসা লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়েছে। খবর পেয়ে আমাদের টিম ঘটনাস্থলে গেছে। এর আগে মহিউদ্দিন বাচ্চু এমপির অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নিউমার্কেট থেকে বহদ্দারহাটের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে কয়েকটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়। নিউমার্কেট এলাকায় আমাদের সিসি ক্যামেরাগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’ এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় বিপুল জনসমাগমের কারণে নিউমার্কেটের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা কার্যত আন্দোলনকারীদের দখলে চলে যায়। বিকাল ৩টা থেকে নিউমার্কেট মোড়ে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। আধা ঘণ্টার মধ্যেই হাজারো আন্দোলনকারীর জমায়েত হয়।

এ সময় জিপিও মোড়, সদরঘাট মোড়, স্টেশন রোড এবং আমতল মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে আন্দোলনকারীরা নিউমার্কেট মোড় অবরুদ্ধ করে রাখেন। নিউমার্কেট মোড় ঘিরে ব্যস্ততম চারমুখী সড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভস্থল থেকে পুলিশ বক্স ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তবে পুরো এলাকায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহনশীল থাকতে দেখা গেছে।

সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে বিক্ষোভ শেষে মিছিল নিয়ে টাইগারপাস, লালখান বাজার হয়ে জিইসি মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। লালখান বাজার আমিন সেন্টার অতিক্রম করে ওয়াসার মোড় যাওয়ার পথে সড়কের বাঁয়ে পেট্রল পাম্পের পাশে চট্টগ্রাম-১০ আসনের এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে হামলা করেন মিছিলকারীরা। এ সময় তারা ওই কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। অফিসের চেয়ার-টেবিলসহ আরও বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। আইটি রুমের কম্পিউটার, টেলিফোন সেট ভাঙা অবস্থায় দেখা গেছে। ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুকে নিয়ে সেখানে যান। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয় ঘুরে দেখেন।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর খুলশী থানার ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকা অতিক্রম করছিল আন্দোলনকারীদের মিছিল। সেখান থেকে শতাধিক লোক চশমা হিলে মেয়র গলিতে ঢুকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসভবনে হামলা করে। তবে মূল ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এ সময় বাসায় থাকা মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। শিক্ষামন্ত্রীর মা বেগম হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বাসায় আক্রমণ হয়েছে। ইট-পাথর মেরে বাসার দরজা-জানালা ভাঙচুর করেছে। দুটি গাড়ি বাসার সামনে রাখা ছিল। সেগুলো ভেঙে দিয়েছে।’ এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিছিল নগরের বহদ্দারহাট ও দুই নম্বর গেট এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে আটজন গুলিবিদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এদিকে আটজন গুলিবিদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশের ওপর হামলা করে ওয়াকি-টকি ও মোবাইল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। এ দুই নম্বর গেট-বহদ্দারহাট মোড়ে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ আটজন ওয়ার্ড থেকে পালিয়ে যায়। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বলেন, চলমান আন্দোলন-সহিংসতার ঘটনায় আজ সন্ধ্যা থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আটজন হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে হামলা চালায়। এ সময় চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধরা হাসপাতাল ছেড়ে যান। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপকমিশনার ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, চমেক হাসপাতালে বিক্ষোভকারীরা হামলা করে পুলিশের এক কনস্টেবলকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশের ওয়াকি-টকি এবং মোবাইল লুট করে। পরে অবশ্যই কনস্টেবলকে ছেড়ে দেয়, মোবাইল ও ওয়াকি-টকি উদ্ধার হয়।

খসরু মীর নাছির শাহাদাতের বাসায় হামলা আগুন  : চট্টগ্রামে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির উদ্দীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর বাসায় হামলা ও আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন বলেন, আমার আব্বা অসুস্থ থাকার কারণে তিনি চট্টগ্রামের বাসায় অবস্থান করছেন পরিবার নিয়ে। সন্ত্রাসীরা গেট ভেঙে বাসায় ঢুকে একটি প্রাডো, একটি জিপ ভাঙচুর করেছে। বাসার মূল দরজায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করেছে, তবে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়।

আমীর খসরুর পুত্র ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, আমরা পুরো পরিবার ঢাকায় অবস্থান করছি। আব্বা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে এখনো সাক্ষাৎ করতে পারিনি। তিনি অসুস্থ বলার পরও ওষুধ পর্যন্ত দিতে দিচ্ছে না। এমন সময় চট্টগ্রামের বাসায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বাসায় পরিবারের কোনো সদস্য ছিল না। বাসার কেয়ারটেকাররা জানিয়েছেন হামলা ও অগ্নিসংযোগের কথা। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ জানান, গত ১০ দিন ধরে বাসায় থাকতে পারছি না পুলিশের অত্যাচারে। এরই মধ্যে আমার পাঁচলাইশ আবাসিকের বাসায় হামলা চালানোর খবর পেয়েছি। বাসায় আমি না থাকলেও স্ত্রী, সন্তান ও পুত্রবধূ বাসায় ছিল। সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর করার পর গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।

নগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইদ্রিস আলী জানান, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের বাসায় অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ সময় বাসার নিচের পার্কিংয়ে থাকা ১০-১২টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণের ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিসংযোগের কারণে ধোঁয়ায় পুরো ভবনের বাসিন্দারা আটকা পড়ে। পৌনে ৯টার দিকে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার বাসায়ও হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা এবং অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে। এরপরই নগরীর মেহেদীবাগ এলাকায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসযোগ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর