মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

পলাতকদের পছন্দ যুক্তরাজ্য

ভারতে পালিয়ে যাওয়া ২৪ নেতা সেখানে, কেউ কেউ গেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর গা ঢাকা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতা-কর্মী। এরপর সুযোগে বুঝে অনেকে পালাতে থাকেন পাশের দেশ ভারতে। যাদের পাসপোর্টে অন্যান্য দেশের ভিসা ছিল তারা পরবর্তীতে ভারত থেকে অন্য গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। বিশেষ করে যাদের ব্রিটিশ পাসপোর্ট কিংবা দেশীয় পাসপোর্টে ভিসা লাগানো ছিল তারা যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ভারত ছাড়েন। ইতোমধ্যে সিলেটের প্রায় ২৪ জন নেতা যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউ কেউ চলে গেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। অনেকে আবার দীর্ঘমেয়াদে ভারতে থাকার উপায় খুঁজছেন।

সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকার পতনের দিন বিকালে সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা ভারতে পাড়ি জমান। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন করে বৈধ পথে ভারতে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক শ নেতা-কর্মী সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে চলে যান। সীমান্ত পারাপারে তাদের সহায়তা করে দুই পাড়ের চোরাকারবারিরা। সীমান্ত পেরিয়ে দীর্ঘ পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে তারা পৌঁছান ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে। শিলংয়ের পুলিশ বাজারের পাশে কয়েকটি হোটেল ও গেস্ট হাউস ভাড়া করে তারা সেখানে অবস্থান করেন। শিলংয়ে সিলেটের নেতাদের সঙ্গে জড়ো হন দেশের অন্যান্য সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্যও রয়েছেন। শিলংয়ে প্রথম আশ্রয় নিলেও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই ভারত ছাড়ার প্রস্তুতি নেন। অনেক নেতার ব্রিটিশ পাসপোর্ট থাকায় এবং কারও কারও পাসপোর্টে ভিসা থাকায় তারা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাতে থাকেন।

সূত্র জানায়, ভারত হয়ে সর্বপ্রথম যুক্তরাজ্যে পৌঁছান সিলেট সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সিলেট-৩ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। এ দুজনই ব্রিটিশ নাগরিক। এরপর যারা ভারতসহ বিভিন্ন গন্তব্য থেকে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রণজিৎ সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোবাশ্বির আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহিদুর রাহমান চৌধুরী জাবেদ, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ হান্নান, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাহাত তরফদার, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাহির, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল, যুক্তরাজ্য যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন ওরফে শিবলু, বাঘা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ, যুবলীগ নেতা সামস উদ্দীন। এ ছাড়া মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম তুষার কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ, যুক্তরাজ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর শাফি এলিম চৌধুরী। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি এমদাদ রহমান বর্তমানে অবস্থান করছেন দুবাইয়ে।

এ ছাড়া এখনো ভারতে যারা অবস্থান করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল লতিফ রিপন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসার আজিজ, জৈন্তাপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী ও কোষাধ্যক্ষ জালাল আহমদ।

সূত্র জানায়, অন্য দেশের ভিসা না থাকায় যারা ভারতে আটকা পড়ছেন তারা রয়েছেন বিপাকে। দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় তারা ভারতে দীর্ঘদিন অবস্থানের চিন্তাভাবনা করছেন। বৈধ কিংবা অবৈধ কীভাবে দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান করা যায় সেটা নিয়ে তারা পরিকল্পনা করছেন। তুলনামূলক কম খরচ, নিরাপত্তা এবং দেশের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার সুবিধার কথা বিবেচনা করে ভারতে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন তারা। ইতোমধ্যে কয়েকজন নেতা শিলং থেকে কলকাতা ঘুরে এসেছেন। সূত্র জানায়, সিলেট সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে অবস্থানের জন্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা শিলংকেই বেছে নিতে আগ্রহী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর