রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

আমাদের শিশু আমাদের দায়িত্ব

আমাদের শিশু আমাদের দায়িত্ব

গতকাল ইডব্লিউএমজিএল কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজন করে ‘আমাদের শিশু আমাদের দায়িত্ব’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক। সামিয়া রহমানের সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, নারী উদ্যোক্তা, সাংবাদিকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। ওই বৈঠকের চুম্বকাংশ তুলে ধরেছেন— লাকমিনা জেসমিন সোমা, আকতারুজ্জামান, মাহবুব মমতাজী ও তানভীর আহমেদ ছবি তুলেছেন : রোহেত রাজীব

 

সবাই দ্রুত বড়লোক হতে চায়

— সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি

শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যত। তাদের যেভাবে আমরা গড়ে তুলব শিশুরা সেভাবে পরিচালনা করবে এ সমাজকে, এ রাষ্ট্রকে। পরিবারে বাবা-মা’র ব্যবহার, ঝগড়া দেখে শিশুরা। বাবা-মা একে অপরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তর্কাতর্কি করেন। এরপর বাচ্চা কোন ভাল কথা বললেও বাচ্চার সাথে বিরুপ আচরণ করেন মা। পরিবারে যদি কোন শিশু দাদী, নানী বা ফুফু’র সাথে হিংসা করতে শেখে এটিই শিশু ভবিষ্যতে ধারণ করে। মেয়েটি বড় হয়ে ননদ, দেবরকে সহ্য করতে পারে না। পরিবারে যিনি উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার উপার্জনে আমরা সন্তুষ্ট থাকিনা। সব সময় পাশের জনের সাথে তুলনা করি। সবাই দ্রুত বড়লোক হতে চায়। চাহিদাটা এমন পর্যায়ে পৌছে যায় যে, গাড়ি থাকতেই হবে, নিয়মিত নতুন নতুন জিনিস, ব্রান্ডের জিনিস থাকতে হবে। এ ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা যেন না হয় তা নিয়ে ভাবতে হবে।

 

শিশুরা প্রাগৈতিহাসিককাল থেকেই নির্যাতিত হচ্ছে

—নূরজাহান বেগম মুক্তা

যাদের ওপর নির্ভর করে দেশ এগিয়ে যাবে, যারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ সেই শিশুদের এভাবে ঝরে পড়া আমাদের শঙ্কিত করে। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, আমাকে তোমরা একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি শিক্ষিত জাতি দেব। আজ যেন মনে হয়  শিশুরা বলছে, তোমরা আমাদেরকে একটি সুস্থ শৈশব দাও, আমরা তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেব। শিশুরা প্রাগৈতিহাসিককাল থেকেই নির্যাতিত হচ্ছে। কারণ, তাদের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা শিশু হত্যা করে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। আজ বিচার হচ্ছে। সম্প্রতি ঘটনাগুলোর পেছনে আমরা প্রতিহিংসা, অতিরিক্ত উচ্চাশা এবং সামাজিক অবক্ষয়সহ আরও অনেক কারণ দেখতে পাই। তাই শুধু আইন নয়, শিশু নির্যাতন বন্ধে সবার মানসিকতারও পরিবর্তন করতে হবে।

 

শিশুদের পারিবারিক নিরাপত্তা দিতে হবে

—পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্

সম্প্রতি শিশু অধিকার ফোরাম তথ্য দিয়েছে— ২০১৫ সালে শুধু বাবা বা মা ৪০টি শিশুকে হত্যা করেছে। সঙ্গত কারণেই শিশুর নিরাপত্তার বিষয়টি সারা দেশে আলোচিত হচ্ছে, যার সমাধান জরুরি। সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে সবার মধ্যেই একটি অসহিষ্ণুতা কাজ করছে। মানুষ নিজেকে যেন খুব বেশি ক্ষমতাশালী মনে করছে। কেউ কেউ অসহায়ও বোধ করছেন। ফলে কেবল শিশু হত্যাই নয়, সমাজে এমন অনেক ঘটনাই ঘটছে। বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের ওপর এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছেন বাবা-মা। জিপিএ-৫ এর মতো দৈত্য-দানব চাপিয়ে দিচ্ছে। মানসিকভাবে দৈন্য হয়ে পড়ছেন অভিভাবকরা। সে কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল দিতে হবে। শিশুদের পারিবারিক নিরাপত্তা দিতে হবে। সামাজিক আন্দোলন বেগবান করতে হবে।

 

আধুনিক মূল্যবোধের উন্নয়ন দরকার

— নাঈমুল ইসলাম খান

আমাদের দেশ অগ্রসরমান। আমরা এখন একটি ট্রানজিটশন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ সময়ে শাশ্বত মূল্যবোধ থেকে সরে এসে সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে। কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই সময়ে সামাজিক কাঠামোতেও পরিবর্তন এসেছে। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের আধুনিক মূল্যবোধের উন্নয়ন করতে হবে। ট্রানজিটশন সময়কালে দ্রুততার সঙ্গে মূল্যবোধের উন্নয়ন দরকার হয়। এখনো কন্যাসন্তানরা সমমর্যাদা বোধ করে না। সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া শিশু নির্যাতনগুলোর দ্রুত বিচার করতে হবে। এ ছাড়া যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে তাকে অপরাধী চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার করতে হবে। রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেই শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়টি আরও পাকাপোক্ত করতে হবে।

 

পারিবারিক বন্ধনগুলো এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

— নঈম নিজাম

শিশু নির্যাতন নিয়ে রাজনীতি নয় বরং এ নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন বেগবান করতে হবে। সবাইকে এ আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে। দলীয় বিষয়ের ঊর্ধ্বে থেকে এ কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ারও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্ব আরও বাড়াতে হবে। সমাজকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে সবাইকে। সমাজে আজ কোথাও যেন একটি অস্থিরতা রয়েছে। এ অস্থিরতার কারণেই ‘মা’ শব্দটিও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এখন শিশুর প্রতি নির্যাতন হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। অথচ এ বিষয়টি নিয়ে আমরা স্বস্তির মধ্যে ছিলাম। আগে সামাজিক দায়-দায়িত্ব ছিল, পারিবারিক বন্ধন ছিল। পারিবারিক বন্ধনগুলো এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং দায়িত্ববোধের জায়গাগুলো এখন মনে হয় কমে গেছে। এ থেকে দ্রুত উত্তরণ দরকার।

 

পরিবারের কারণে শিশুদের বিকাশ হয় না

— অ্যাড. এলিনা খান

শিশু নির্যাতন দুভাবে হচ্ছে। এক হলো মানসিক, দুই হলো শারীরিক। পরিবার তার ওপর অনেক কিছু চাপানোর কারণে সে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। এতে তার সুস্থ বিকাশ হয় না। শারীরিক ও মানসিক চাপে শিশুরা নির্যাতিত হতে হতে বড় হচ্ছে। এক্ষেত্রে মূল্যবোধ আর নৈতিকতার বিষয়টি দেখলে পরিবারের পিতামাতার মধ্যেই তা নষ্ট হচ্ছে। বাচ্চার ভালো রেজাল্ট, ভালো স্কুল এসব চিন্তায় গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে যায়। তাদের এসব গণ্ডি থেকে বের হতে হবে। কন্যা শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে পরিবারের মধ্যে। আবার ছেলে শিশুরা সম্পদের কারণে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজন দ্বারা হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণের শিকার হয়। যখন অপরাধী ধরা পড়ে তখন তার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে আমরা তা জানতে পারি। আমাদের এ থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে।

 

সামাজিক স্থিতিশীলতা খুবই দরকার

— নাসরিন আউয়াল মিন্টু

শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। আমরা শিশুদের কী শেখাচ্ছি। আজ আমরা টিভি খুলতে ভয় পাই। নিউজ পেপার খুলতে ভয় পাই। এখন যেভাবে শিশুদের মারা হচ্ছে, তাতে আমাদের সমাজ আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো কেন হচ্ছে? কেন হবে? আমাদের স্কুল আছে অসংখ্য। কিন্তু কোনো খেলাধুলার মাঠ নেই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় না। শিক্ষার্থীদের হাতে এক্সট্রা কারিকুলাম তুলে দেওয়া হয় না। আমাদের এত হিংসা, এত লোভ কেন? আমাদের ভালো ভালো আরও স্কুলের দরকার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে হাউস ওয়াইফরা শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভালো শিক্ষক নেই। আমাদের সামাজিক স্থিতিশীলতা এখন খুবই দরকার। শিশু নির্যাতনের কারণগুলো থেকে সমাজের উত্তরণ ঘটানো জরুরি।

 

পরিবার, সমাজ ও গণমাধ্যমের দায়িত্ব আছে

— সামিয়া রহমান

সাম্প্রতিককালে গণমাধ্যমে দেখছি একের পর এক শিশু হত্যা, নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, হিংস্রতা। এটি কী আসলে গণমাধ্যমের অতিরিক্ত প্রচার বা প্রসার নাকি মানবিক বোধশূন্য সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছি আমরা? নাকি শিশুরা নিষ্পাপ, নিরীহ বলে তাদের শক্তির দম্ভ প্রকাশ করছি? এ প্রশ্নগুলো আপনাদের কাছে ছুড়ে দিতে চাই আমি। আমাদের দায়িত্বহীনতা নাকি ব্যস্ততা। সেটি আসলে শিশু নিষ্ঠুরতা বা নির্যাতন বাড়াচ্ছে কিনা? সামাজিক এত বেশি অস্থিরতা বাড়ার আসল কারণ কী? ‘মা’ শব্দটি একটি প্রতিষ্ঠান। একটি ঘটনা বা হত্যায় এই প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা বা মূল্যায়ন করতে পারি কি না? এক্ষেত্রে আমাদের সমাজের দায়িত্ব, পরিবারের দায়িত্ব এবং গণমাধ্যমের দায়িত্ব এখানে চলে  আসে। এ সমস্যা সমাধানে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।

 

সমস্যা সমাধানে সবার ঐক্য দরকার

— শামা ওবায়েদ

শিশু নির্যাতন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। জানুয়ারি মাসেই শুধু দেখা গেছে ২৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, থানায় ১৭২৭টি শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। সমাজ থেকে এর সমাধানের উপায় বের করতে হবে। শিশু নির্যাতনের ঘটনায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তদন্ত সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। মামলার বাদীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশকে চার্জশিট ঠিকভাবে দিতে হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি দিতে হবে। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকলে শাস্তি হবে না— এই ধারণার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। যৌথ পরিবারে আমরা শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো দেখতাম না। কিন্তু একক পরিবারে তা বেশি ঘটছে। আর এর সমাধানের জন্য সবার ঐক্য দরকার।

 

তুমুল গণসচেতনতা এবং গণপ্রতিরোধ দরকার

— মোহন রায়হান

শিশুকালে পড়েছি— ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুরই অন্তরে। আমরা যদি কবির এই পঙিক্তর ভিতর দৃষ্টিপাত করি, তাহলে অনেক কিছু খুঁজে পাই। এই শিশুদের ভিতরই কেউ লেখক, কেউ কবি, শিল্পী, রাষ্ট্রনায়ক বা খেলোয়াড় হবেন। একটি উন্নত সমৃদ্ধ জাতির ভবিষ্যৎ এই শিশুরাই। সুতরাং এই শিশুদের যদি আমরা শিশুকাল থেকেই তাদের চিন্তা-চেতনা ধ্যান ধারণায় আদর্শ মনন ও মানসিকতায় দেশপ্রেম এবং মানবপ্রেম হতে দিতে না পারি তাহলে আমাদের তারা ভবিষ্যতে জাতিকে শোভা এবং ছায়া প্রদানকারী কোনো মহীরুহে পরিণত হতে পারবে না। শুধু আলোচনা দিয়ে, আইন করে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে শিশুর নিরাপত্তা বিধান হবে না। তুমুল জনসচেতনতা এবং গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

 

প্রতিকার না হলে প্রতিহিংসার জন্ম হয়

— ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা

সমাজে বিচ্ছিন্ন ঘটনা একটি-দুটি ঘটে। কিন্তু এসব ঘটনা যখন একের পর এক ঘটতেই থাকে তখন কোনো ব্যক্তিকে দায়ী করা যায় না। পুরো সমাজই এসব ঘটনার জন্য দায়ী হয়ে যায়। সমাজটি যদি অসুস্থ না হয় ধারাবাহিকভাবে একটির পর আরেক ঘটনা ঘটে যেতে পারে না। ব্যক্তির বিচারের চেয়ে তখন সমাজের চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১২ মাসে ৩৮০ শিশুকে খুন করা হয়েছে। এটি সুস্থ সমাজের পরিচয় হতে পারে না। এ ঘটনা ঘটার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে— আমরা একটি বিচারহীনতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অপরাধ হচ্ছে কিন্তু এর প্রতিকার মিলছে না। দুটি বিচার হয়েছে। কিন্তু এর আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটে গেছে, যার কোনো বিচার আমরা দেখিনি। কেউ যখন নিজে অন্যায়ের শিকার হয়, অবিচারের শিকার হয় কিন্তু প্রতিকার দেখে না তখন তাদের মধ্যে প্রতিহিংসার জন্ম হয়। মানুষ মনে করে আমার ওপর অন্যায় হয়েছে আমি কেন আমার চেয়ে দুর্বলের ওপর অন্যায় করব না?

 

রাষ্ট্র ও সমাজ দায় এড়াতে পারে না

—শাহ্নাজ মুন্নী

কিছুদিন আগে একটি গল্প লিখেছি। গল্পটি এরকম— হঠাৎ করে পৃথিবী যেন শিশুহীন হয়ে গেল। রাতারাতি শিশুরা গম্ভীর হয়ে গেল, তাদের বয়স যেন বেড়ে গেল, নারীদেরও সন্তান হচ্ছে না। প্রায় প্রত্যেকেই কঠিন কঠিন মুখ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চারদিকে কোনো শিশু নেই। শিশুহীন সেই পৃথিবী কি মানুষের বাসযোগ্য হবে? আমরা কী এমন পৃথিবীতে সত্যি ঠিকভাবে থাকতে পারব? এটি কল্পিত গল্প ছিল। এখন আসলেই যেন পৃথিবী শিশুহীন হয়ে পড়ছে। শিশুদের জন্য চাই সুন্দর পৃথিবী। উন্নত দেশগুলোর মতো আমরা এখনো শিশুদের গুরুত্ব দিতে শিখিনি। শিশুদের কথা ভাবি না। আমাদের সংস্কৃতিতেই আছে— একসময় স্কুলে মার খেয়ে বড় হয়েছে, অভিভাবকরা বলেছেন না মারলে হয় না। শিশুরা নির্যাতিত হয়, কারণ শিশুরা দুর্বল। তারা প্রতিবাদ করতে পারে না। তাদের নির্যাতন করা সহজ। এ জন্য তারা বেশি নির্যাতিত হয়। শিশু নির্যাতিত হলে তার দায় এই সমাজকেই নিতে হবে। রাষ্ট্রও এই দায় এড়াতে পারে না।

 

সমাজে সচেতনতাবোধ জাগাতে হবে

—ফাহিমা খানম চৌধুরী মনি

শিশু নির্যাতন বন্ধে ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, এমপিসহ জনপ্রতিনিধিরা সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। জনপ্রতিনিধিরা সব জায়গায় যেতে পারেন। রাজনীতিবিদরাই সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। যে শিশু ভালো ফলাফল করছে তাকে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। আর যে খারাপ করছে তাকে ধমক দিচ্ছি। এটি করলে হবে না। মিডিয়ার কারণে নির্যাতনের খবর আমরা জানতে পারছি। সমাজে সচেতনতাবোধকে জাগিয়ে তুলতে হবে। যৌথ পরিবারে ঝগড়া করতে পরিবারের সদস্যরা ইতস্তত বোধ করে। এভাবে বাচ্চারা পরিবার থেকে শিখে। পারিবারিক বন্ধন এভাবেই গড়ে ওঠে। মেয়ে হলে তো সেটি আরও অনিরাপদ। এটি নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয় সবসময়। শিশুদের মানসিক বিকাশের সময় দিতে হবে। শিশুদের প্রতিযোগিতায় জড়ালে অপরাধ বাড়ার আশঙ্কা থাকে। শিশু নির্যাতনের ঘটনায় আমরা সবাই দায়ী উল্লেখ করে এ শিক্ষক ও রাজনীতিক বলেন, বাচ্চাদের নিজেদের মতো করে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। মানুষের আচার-ব্যবহারও আরও উন্নত করতে হবে।

 

মায়ের ওপর যেন মানসিক চাপ না দেওয়া হয়

— সুলতানা রহমান

শিশুরাই ভবিষ্যৎ। শিশুরা না থাকলে মানব সভ্যতাই থাকবে না। প্রতিযোগিতামূলক এই সমাজে টিকে থাকতে হলে, ভালো মানুষ হতে হলে শিক্ষা জরুরি। এখন ভালো মানুষকে বলা হয় বোকা। একটি ঘটনা— গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এক ভদ্রলোক নিজ গাড়ি থেকে নেমে সাহায্য করতে নেমেছেন। অথচ রাস্তায় গাড়ি রেখেছেন বলে পেছনের গাড়ির চালক তাকে গালাগালি করে চলে গেলেন। আহতকে সাতটি হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তিনি মারা যান। আসলে আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেই তেমন ব্যবস্থা কি আছে যে দুর্ঘটনায় পড়লে আপনি সাহায্য পাবেন? শিশুরা তাদের নিজস্বতা রাখতে পারছে না। অভিভাবকরা চাপিয়ে দিচ্ছে বলে তারা তাদের মতো করে বিকশিত হতে পারছে না। শিশুদের রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সব সমস্যার সমাধান করতে চাইলে দরকার সত্যিকারের যোগ্য নেতৃত্ব। এ ছাড়া মা-কে মহত্ব দিতে গিয়ে যেন তার ওপর মানসিক চাপ না দেওয়া হয় সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। কারণ তিনিও রক্ত মাংসেরই মানুষ।

 

যারা অংশ নিলেন

সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি

সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ     

নূরজাহান বেগম মুক্তা

সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ

পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্

সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ

নাঈমুল ইসলাম খান  

সাংবাদিক

নঈম নিজাম

সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

অ্যাড. এলিনা খান

প্রধান নির্বাহী, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন

নাসরিন আউয়াল মিন্টু

প্রেসিডেন্ট, উইমেন এন্টারপ্রেইনার অ্যাসোসিয়েশন

সামিয়া রহমান

হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, নিউজ টোয়েন্টিফোর

শামা ওবায়েদ

রাজনীতিক   

মোহন রায়হান

কবি  

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা

আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট

শাহ্নাজ মুন্নী

চিফ নিউজ এডিটর, নিউজ২৪

ফাহিমা খানম চৌধুরী মনি

শিক্ষক, মাস্টার মাইন্ড স্কুল

সুলতানা রহমান

অ্যাসাইন্টমেন্ট এডিটর, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি

সর্বশেষ খবর