সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ডায়াবেটিসে ওষুধের ব্যবহার

অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরী

ডায়াবেটিসে ওষুধের ব্যবহার

ডায়াবেটিস এক ধরনের বিপাকজনিত রোগ। এই রোগে সাধারণত রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে রোগীকে কিছু নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে চলতে হয়— যেমন নিয়মিত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম ও ওষুধ গ্রহণ। তবে সেইসঙ্গে তাকে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গেরও যথেষ্ট যত্ন নিতে হয়, নতুবা দেখা দেয় নানা ধরনের জটিলতা। এই জটিলতাগুলোর মধ্যে হূদরোগ, কিডনি রোগ, চক্ষুর সমস্যা, নার্ভের সমস্যা, পচনশীল রোগসহ মুখের ভিতরের মাড়ির রোগের জটিলতা। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের মুখের যত্নের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে তাদের ওষুধপত্র ব্যবহারেও সচেতন থাকা দরকার।  যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের মাড়ির রোগ একটি প্রধান সমস্যা, তাই তাদের ছয় মাস পর পর দাঁত মুখ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। মাড়ির শল্য চিকিৎসা, দাঁত উঠানো ইত্যাদি কাজের আগে অবশ্যই নিম্নলিখিত ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি—

১. ডেন্টাল সার্জারি যেমন দাঁত উঠানোর আগে রক্তের শর্করার পরিমাণ মেপে দেখা। যেমন অভুক্ত অবস্থায় ৬ মি: মোল ও নাস্তার দুই ঘণ্টা পর ৭.৮ মি. মোল থাকাই বাঞ্ছনীয়। তবে নাস্তার দুই ঘণ্টার পর ৮-৯  মি: মোল থাকলেও এ ধরনের ডেন্টাল সার্জারি করা যায় সতর্কতার সঙ্গে। যেমন ওষুধ ইনসুলিন বা ট্যাবলেট নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া (ডাক্তারের পরামর্শে)। কিন্তু যদি নাস্তার দুই ঘণ্টা পর রক্তের সুগার ১০-১২ মি: মোলের মতো বা বেশি থাকে তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ইনসুলিনের মাত্রা বা ট্যাবলেটের পরিমাণ বাড়িয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। পরবর্তী সময়ে সার্জারি শেষ হয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন পর্যন্ত তা চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আবার রক্তের সুগার এবং পরিমাণ দেখে বাড়তি ওষুধের মাত্রা স্বাভাবিক করতে হবে।

২. দাঁতের যে কোনো চিকিৎসায় যেমন মাড়ির রোগের সার্জারি ও অন্যান্য অপারেশন বা দাঁত তোলার ক্ষেত্রে অন্তত দুদিন আগে রোগীর ইতিহাস জেনে কার্যকর গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক এবং তা অপারেশনের সময় থেকে সাত দিন পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। তবে ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়ার আগে অবশ্যই জানা প্রয়োজন তার কিডনিসংক্রান্ত কোনো জটিলতা আছে কিনা। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে— যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের হূদরোগের ঝুঁকি থাকে সেহেতু অনেকেই অ্যাসপিরিনি গ্রুপের ওষুধ গ্রহণ করেন, অনেকে আবার ক্লপিড গ্রুপের ওষুধ গ্রহণ করেন যেহেতু তাদের রক্তের প্রবাহ বাড়ানোর প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে ইতিহাস জেনে মুখ ও দাঁতের অপারেশনের অন্তত পাঁচ দিন আগে ও অপারেশনের পর পাঁচ দিন ওই জাতীয় ওষুধ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বন্ধ রাখা প্রয়োজন।

৩. ডায়াবেটিস রোগীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনিয়মিত সুগার থাকার কারণে মুখের ভিতর এক ধরনের জীবাণু অতিরিক্ত বংশ বিস্তার করে। এই জীবাণু বংশ বিস্তারের ফলে মুখে সাদা ক্ষত বা ঘায়ের মতো লক্ষ করা যায়। এই সাদা ক্ষত জিহ্বার ওপর ও দুই গালের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এই ঘা বা ক্ষতকে বলা হয়। Oral Candidiasis। এ ধরনের ক্ষত দূর করতে বাজারে যে মলম পাওয়া যায় তার নাম  মাইকোরেল ওরাল জেল। এই জেল এক চামচ মুখের ভিতরে নিয়ে কিছুক্ষণ পর গিলে ফেলা প্রয়োজন এবং এভাবে তিন সপ্তাহ ব্যবহার করলে মুখের এই সাদাটে হলুদ বর্ণের ক্ষতকে দূর করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি, সেইসঙ্গে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম এই তিনটি  নীতিকে পালন করা প্রয়োজন। মুখের ভিতরে যে কোনো ধরনের প্রদাহ যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকার কারণে বাড়ে, তেমনি ডায়াবেটিসে রক্তের সুগারও নিয়ন্ত্রণে আসবে না যতদিন এই মাড়ির প্রদাহ বা দাঁতের কারণে সৃষ্ট ইনফেকশন দূর না হবে। তাই ডায়াবেটিসে ওষুধের ব্যবহার ও প্রয়োগ নিয়ে সতর্ক হতে হবে।

লেখক : অধ্যাপক এবং অনারারি সিনিয়র

কনসালটেন্ট, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর