মানবদেহের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে আলাদা আলাদা হরমোন নিঃসৃত হয়ে থাকে। প্রতিটি হরমোনের কার্যকারিতা মানবদেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিপাকীয়/জৈব রাসায়নিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। থাইরক্সিন থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত এক ধরনের হরমোন। আয়োডিন জাতীয় লবণ এ হরমোন উত্পাদনে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। মস্তিষ্ক ও শারীরিক গঠনে এ হরমোন প্রভূত ভূমিকা পালন করে থাকে। মানুষের বুদ্ধি বিকাশের জন্য এ হরমোন অত্যাবশ্যকীয়। থাইরক্সিন শরীরে মজুদ থাকা শক্তির উত্তমরূপে ব্যবহারে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গলার সামনে চামড়ার নিচে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে যদি কোনো কারণে থাইরয়েড হরমোন (থাইরক্সিন) অপর্যাপ্ত পরিমাণে নিঃসৃত হয়, এ অবস্থাকে থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা বলা হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে অটুইমিয়্যুন ডিজিজ অন্যতম। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই এ অবস্থাকে বংশগত অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্য কারণগুলো হলো অপারেশন করে থাইরয়েড গ্রন্থি কেটে ফেলা, রেডিয়েশন থেরাপি ইত্যাদি।
লক্ষণসমূহ : খুব অল্প শীতেই কাবু হয়ে যাওয়া বা শীত সহ্য করার ক্ষমতা কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়া, খুব বেশি ক্লান্তি বোধ করা, নখ ও চুল ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, মাথার চুল কমে যাওয়া, নখ ফেটে যাওয়া, চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া, খুব বেশি দুর্বলতা অনুভব করা, কাজকর্মে অনীহা, মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিকের সমস্যা দেখা দেওয়া ইত্যাদি।
খাবারের প্রতি অনীহা : অল্প খাদ্য গ্রহণে পেট ভরে যাওয়া, হজমে গোলমাল দেখা দেওয়া। সারা শরীরের পশম ঝরে পড়া, বিষণ্নতা, মানসিক অস্থিরতা, ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। হূিপণ্ডের গতি কমে যেতে থাকে। রক্তচাপের বৃদ্ধি ঘটে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে রোগীর হূিপণ্ডে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ হয়ে থাকে। যার ফলে বুক ধড়ফড় করা, প্রাথমিক অবস্থায় পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট হওয়া, অল্প পরিশ্রমে কাবু হয়ে যাওয়া, বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হওয়া, যা সারা বুকে, বাহু ও গলায় ছড়িয়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে সঙ্গে রোগীর শারীরিক ওজন বৃদ্ধি ঘটে। বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে ব্যথা অনুভূত হওয়া, রোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাত-পায়ের গিরা ফুলে যাওয়া, মেয়েদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্ব দেখা দেওয়া।রোগ নির্ণয় : রক্তে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ নির্ণয় করা, অন্যান্য গ্রন্থির হরমোন পরিমাপ করা, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নির্ণয় করা ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রদানের কৌশল নির্ধারণ হয়।
ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী, ঢাকা।