সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইনহেলারের সাতকাহন

অধ্যাপক ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন

ইনহেলারের সাতকাহন

বাংলাদেশের লাখো মানুষের কাছে হাঁপানি বা অ্যাজমা একটি মারাত্মক ও যন্ত্রণাদায়ক ব্যাধি। অনেকেই ধারণা করে থাকেন, হাঁপানি বা অ্যাজমার কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসাব্যবস্থা নেই, যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয় তার দ্বারা হাঁপানির উপসর্গের প্রকোপ বৃদ্ধিতে বাধা দেওয়া যায় মাত্র, ওষুধ সেবন বন্ধ করে দিলেই সে উপসর্গ আবার দেখা দেয়। বর্তমানে এ ধারণাটি ভুল, কারণ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বর্তমানে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির অনেক অত্যাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। যদিও এ রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়, তবে যথোপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। হাঁপানি রোগীদের সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থার আওতায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় অ্যাজমা রোগীদের মুখে খাবার ওষুুধের চেয়ে ইনহেলার বেশি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। কারণ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই, কম পরিমাণ ওষুধ লাগে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে খুব দ্রুত শ্বাসকষ্টের পরিমাণ কমে যায়। ইনহেলার অ্যাজমা রোগীর এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা কিনা রোগী শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে টেনে নেয় এবং ওষুধ শ্বাসনালিতে পৌঁছায়। অনেকেই মনে করেন, ইনহেলার হাঁপানির সর্বশেষ চিকিৎসা। ইনহেলার একবার ব্যবহার করলে পরবর্তীতে শ্বাসকষ্টের পরিমাণ কমানোর জন্য আর অন্য কোনো ওষুধ কাজে আসবে না। তাদের জেনে রাখা ভালো, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের প্রথম চিকিৎসা হচ্ছে ইনহেলার। ইনহেলার শ্বাসকষ্ট লাঘবে খুব দ্রুত কাজ করে, যেখানে সেবনযোগ্য ট্যাবলেট বা বড়ি খেলে ২০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। একটা কথা অবশ্যই জানা দরকার, ইনহেলার ব্যবহারে যথোপযুক্ত ফল পাওয়া যাবে যদি এর ব্যবহার বিধি সঠিকভাবে জেনে নেওয়া যায়। ছোট কোনো ক্যানিস্টার বা কৌটায় সাধারণত ওষুধ থাকে। সব সময় ইনহেলার ব্যবহারের ফলে তা ঝাঁকিয়ে নিলে ভালো। শ্বাস নেওয়া এবং ক্যানেস্টারে চাপ দেওয়া আগে পরে হলে ইনহেলার ব্যবহারের কোনো ফল পাওয় যাবে না। ঠিক শ্বাস নিতে আরম্ভ করার সময় ক্যানেস্টার চাপ দিতে হবে। যাতে ওষুধ সরাসরি শ্বাসনালিতে পৌঁছায়। মুখের দেড় থেকে দুই ইঞ্চি সামনে ইনহেলার মাইথপিস রেখে শ্বাস গ্রহণ করলে ওষুধের অধিকাংশ পরিমাণ শ্বাসনালিতে যায়। শ্বাসের সঙ্গে ওষুধ টেনে নেওয়ার পর ১০-২০ সেকেন্ডের মতো শ্বাস বন্ধ করে রাখতে হবে। শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা রোগীদের খুব তাড়াতাড়ি শ্বাসকষ্টের পরিমাণ লাঘবের জন্য সাধারণত সালবিউটামল উনহেলার সিরাপ, ট্যাবলেট দেওয়া হয়। এবং এর কার্যকারিতা থাকে প্রায় ৪ ঘণ্টার মতো। এছাড়া যে ওষুধই ব্যবহার করা হোক না কেন তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।

লেখক : অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ,

ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর