মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভুল ধারণা থেকে যত ভুল

ডা. নুসরাত জাহান

কেস ১ : রোগীর বয়স ৩৪ বছর, দুই বাচ্চার জননী, তার সমস্যা এক বছর ধরে তলপেট ও  মাজাব্যথা, সাদা স্রাব এবং অনিয়মিত মাসিক। কোনো ধরনের জন্ম নিরোধক ব্যবহার না করার কারণ হিসেবে জানাল, খাবার বড়ি খেয়ে মুটিয়ে যাওয়ার ভয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেননি।

কেস ২ : রোগীর বয়স ২১ বছর, বিয়ের সাত মাস না হতেই অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ করেছেন। এখন এম আর করানোর উদ্দেশ্যে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছেন। তার ধারণা ছিল জন্মনিরোধক পিল খেলে পরবর্তীতে বাচ্চা কনসিভ করতে সমস্যা হতে পারে, তাই পিল খাননি। সাধারণ মানুষের মাঝে জন্মনিরোধক পিল সম্পর্কে কত ভুল ধারণা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে খাবার পিল জন্ম নিরোধক হিসেবে একটি শত ভাগ কার্যকরী পদ্ধতি এবং অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যুক্ত। বর্তমানে যেসব স্বল্পমাত্রার পিল পাওয়া যায় তা দীর্ঘদিন খেলেও মুটিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। এই পিল গর্ভধারণের পথেও কোনো বাধা নয়। এ পিল খাওয়াকালীন এটি ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু উৎপাদন বন্ধ করে গর্ভধারণ করতে বাধা দেয়। পিল সেবন বন্ধ করার দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ডিম্বাণু স্ফুটন আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে এবং দ্রুত গর্ভধারণ হয়।  জন্মনিয়ন্ত্রন ছাড়াও পিল সেবনের আরও অনেক উপকার রয়েছে। যেমন— * অনিয়মিত মাসিকে পিল সেবন একটি কার্যকরী চিকিৎসা। এটি শরীরের হরমোনের অস্বাভাবিক তারতম্যকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে এবং মাসিক নিয়মিত করে।  * এটি ডিম্বাশয়ের সিস্ট তৈরিতে বাধা দেয়। * এটি মাসিকের রক্তক্ষরণ কমিয়ে রক্তশূন্যতা রোধ করে। * এই পিল জরায়ু মুখের মিউকাসকে ঘন করে জরায়ুতে জীবাণুর প্রবেশ প্রতিহত করে, এভাবে এটি জরায়ুকে জীবাণু সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। * দীর্ঘদিন পিল সেবনকারীদের ডিম্বাশয় ও অ্যান্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। তবে কিছু ক্যান্সার যেমন জরায়ু মুখের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার দীর্ঘদিন পিল ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায় বলে মনে করা হয়। তবে এটি তথ্য-প্রমাণ দ্বারা সুনিশ্চিত নয়। এছাড়া প্রথমদিকে পিল সেবনকারীদের মাথা ঘোরা এবং বমি ভাব হতে পারে, যা তিন মাসের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে পিল ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ বা নিষেধাজ্ঞা থাকে? — ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং তীব্র মাইগ্রেন * নিজের বা ফ্যামিলিতে কারও স্তন ক্যান্সার, রক্ত জমাট বাঁধার ইতিহাস থাকলে * পরিবারে অল্প বয়সে স্ট্রোকের ইতিহাস থাকলে।

লেখক : সহকারী আধ্যাপক (অবস-গাইনি)

ডেলটা মেডিকেল কলেজ, মিরপুর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর