বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

হাঁটবেন কেন?

হাঁটবেন কেন?

মানুষ যত কাজ করে তার মধ্যে হাঁটা নিঃসন্দেহে প্রধান কাজ। তাই কেউ যদি হাঁটা বন্ধ করে দেয় তবে তার শারীরিক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। ফলশ্রুতিতে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট বয়সের অনেক আগেই মানে তুলনামূলকভাবে আরও কম বয়সে এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। হাঁটা এমন একটি কর্মকাণ্ড যার জন্য কোনোরূপ প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। কোনোরূপ আয়োজনের দরকার হয় না, শুধু দরকার ব্যক্তির শারীরিক যোগ্যতার ও মানসিক সিদ্ধান্তের। সুস্থ সবল সব ব্যক্তির হাঁটার যোগ্যতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কেউ যদি দীর্ঘ সময় হাঁটা থেকে বিরত থাকেন তবে তার ওজন বৃদ্ধি ঘটবে, পায়ের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়বে, পায়ের অস্থিমজ্জা বা জোড়ার বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে হাঁটার যোগ্যতা কমে যাবে, না হাঁটলে রক্তে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটবে, রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যক্তি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। রক্তনালি ও হৃৎপিণ্ডে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে এর সঙ্গে ডায়াবেটিস ও চর্বির মাত্রা বৃদ্ধি হয়ে ব্যক্তি উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই শারীরিক যোগ্যতা থাকতে থাকতে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন অথবা হাঁটার অভ্যাস বজায় রাখুন, তা না হলে এসব প্রাণঘাতী রোগ আপনাকে আক্রমণ করতে পারে। হাঁটা এমন একটি শারীরিক কর্মকাণ্ড যার প্রভাবে শরীরের বিভিন্ন ধরনের মাংসপেশি সচল হয়। মাংসপেশি সচল হওয়ার ফলে রক্ত চলাচলের বৃদ্ধি ঘটে রক্তনালির সংকোচন ও প্রসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে হার্টের রক্তপাম্প করা সহজ হয়, মানে অল্প শক্তি ব্যয় করে অধিক রক্তপাম্প করতে পারে। রক্তনালির সংকোচন ও প্রসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটায় উচ্চরক্তচাপ সৃষ্টি ব্যাহত হয় মানে রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায় বিরাজ করে। হাঁটার জন্য যে শক্তি ব্যয় হয় তার ফলে ওজন বৃদ্ধি রহিত হয় মানে ব্যক্তির স্বাভাবিক শারীরিক ওজন বজায় থাকে। অধিক শক্তি ব্যয় হওয়ায় রক্তে চর্বি ও সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থায় বিরাজ করে। হাঁটার মতো পরিশ্রমের ফলে মানুষের খাদ্য গ্রহণে অরুচি, অনিদ্রা দূরীভূত হয়। হাঁটা যেমন উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে তেমনি এটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ামুক্ত এবং এর জন্য আর্থিক ব্যয়ের প্রয়োজন নেই বরং হাঁটা একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি যার কোনো বিকল্প নেই। তবে যারা এসব রোগে গুরুতর আক্রান্ত হয়ে গেছেন তাদের হাঁটার যোগ্যতা কমে যায়, তাই শারীরিক যোগ্যতা বজায় থাকা অবস্থায় আপনি হাঁটা শুরু করেন, তা না হলে পরবর্তীতে হাঁটতে না পারায় এসব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। তবে যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাঁটতে হবে, তা না হলে হাঁটতে গিয়ে যে কেউ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারেন যাতে হিতে বিপরীত হবে। ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি হৃদরোগে আক্রান্ত না হয়ে থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ব্যক্তি তার শারীরিক দক্ষতা মোতাবেক হাঁটতে পারবেন। তবে যাদের দীর্ঘদিন যাবৎ হাঁটার অভ্যাস নেই তারা প্রাথমিক অবস্থায় ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করবেন। এ ছাড়া হাঁটার অভ্যাস শুরু করলে হাঁটার যোগ্যতা অবশ্যই দিন দিন বৃদ্ধি ঘটবে।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট

(কার্ডিওলজি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর