বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্থূলতা : নীরব ঘাতক

স্থূলতা : নীরব ঘাতক

অতিরিক্ত ওজন বা মুটিয়ে যাওয়া (obesity) এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার ফলে বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হয়ে জটিলতা তৈরি করে এবং আয়ু কমিয়ে দেয়। বর্তমানে উন্নত দেশে এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। সারা দুনিয়ায় যুবাদের ৫০ কোটিরও অধিক এ সমস্যায় আক্রান্ত। আমাদের দেশেও সংখ্যা নেহাতই কম নয়। বিশেষ করে শিশু-যুবাদের এক বিরাট অংশ ইতিমধ্যে স্থূলতায় আক্রান্ত হয়েছে। 

আপনি কি স্থূল : ওজন কেজিতে নিয়ে, মিটারে আপনার উচ্চতার বর্গকে দিয়ে ভাগ দিন। যদি ফলাফল ৩০ কিংবা ততধিক হয়, তাহলে স্থূল বা মোটা। সাধারণত এ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই স্থূলতার শ্রেণিবিন্যাস করা হয়ে থাকে। বয়স ২৫-৩০ এর মধ্যে হলে ওজন বেশি, কিন্তু স্থূল নয়। ১৮.৫-২৫ এর মধ্যে স্বাভাবিক ওজন। ১৮ এর নিচে হলে শীর্ণকায় ধরা হয়ে থাকে।

স্থূলতার কারণ কী : স্থূল বা মুটিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বেশি খাওয়া, শারীরিক কাজ কম করা, হরমোনজনিত, বংশগত, মানসিক সমস্যা এবং কিছু ওষুধ সেবন চিহ্নিত করা হয়েছে। যে কারণেই হোক প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ বা কোনো কারণে ক্যালোরি কম খরচ হলে বাড়তি অংশ শরীরে জমা হয়। এটাই স্থূলতার মূল কারণ। অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্তরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া স্বীকার করতে চান না; কিংবা তারা বেশি খাচ্ছেন তা উপলব্ধি করতে পারেন না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অবস্থাপন্নরা আক্রান্ত হয় বিধায়, এটি সামাজিক রোগ হিসেবেও

চিহ্নিত করা হয়।

জটিলতা : উচ্চ রক্তচাপসহ নানা ধরনের হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, অস্থির প্রদাহ, পিত্তথলিতে পাথর, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, স্ট্রোক, ঘুমে ব্যাঘাত, নানা ধরনের ত্বকের রোগ ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

চিকিৎসা : চিকিৎসকরা সাধারণত খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনে পরিবর্তন এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থূলতায় আক্রান্তরা খুব অল্প সময়ে চিকিৎসায় বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। চিকিৎসকের কাছ থেকে আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের রুটিন তৈরি করে নিন এবং উপদেশ মেনে চলুন। এসবের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়া গেলে মুখে খাবার ওষুধ দেওয়া হয়। কিছুতেই কাজ না হলে সার্জারির মাধ্যমে পাকস্থলীতে অপারেশন করা হয়ে থাকে। হরমোনজনিত বা অন্য কোনো কারণ থাকলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। মনে রাখবেন সার্জারি বা লেজারের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশের চর্বি অপসারণ কোনো স্থায়ী সমাধান বা চিকিৎসা নয়। এগুলো ক্ষণিকের সমাধান। অনেকটা সেলুনে দাড়ি শেভ করার মতো। এগুলোর শরণাপন্ন হওয়ার আগে চিন্তা করে নিন।

প্রতিরোধ : যাদের বংশগতভাবে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের কৈশোর থেকেই খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ত্রিশের পরে সাধারণত আর শরীরের বৃদ্ধি ঘটে না, কাজেই তখন থেকেই ক্যালোরির কথা মাথায় রেখে খাওয়া এবং ব্যায়াম করা উচিত। নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার কাটা বা ব্যায়ামের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ করে ফেলা উচিত। মনে রাখবেন আপনার প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি খাবার গ্রহণ না করলে স্থূল হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ প্রতিকার নয়, এসব ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম। তাই প্রাথমিক অবস্থায় স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের আরও যত্নবান হতে হবে।

ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ,

(জাকার্তা প্রবাসী চিকিৎসক)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর