শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হৃদরোগের ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

হৃদরোগের ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’

বিশ্ব হার্ট দিবস ছিল গতকাল। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে দিনটি। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘হৃদরোগ জয়ের শক্তি ছড়িয়ে দিন সর্বত্র’। হার্ট মানুষসহ সব জীবজন্তুর সমস্ত শক্তির কেন্দ্রবিন্দু। শরীরের এই অঙ্গটি আপনাকে ভালোবাসতে দেয়, হাসতে দেয়, সর্বোপরি বাঁচিয়ে রাখে। তাই হার্টের রোগের ঝুঁকিসমূহ জানুন, হার্টকে ভালোবাসুন, আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হোন এবং অন্যকেও অনুপ্রাণিত করুন। বিজ্ঞানের অবিস্মরণীয় উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানেরও অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। কলেরা, ডায়রিয়া, বসন্ত, যক্ষ্মা, হামসহ বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি সহজেই চিকিৎসায় নিরাময় এবং প্রতিরোধযোগ্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ পানি, খাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা পদ্ধতি, কার্যকরী টিকা কর্মসূচি, সর্বোপরি মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সংক্রামক ব্যাধি কমে যাচ্ছে, মানুষের গড়-আয়ু বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে বার্ধক্যজনিত রোগ যেমন অস্টিওপরোসিস, অস্টিওআর্থ্রোসিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি বাড়ছে এবং হয়ে উঠছে বড় ঘাতক। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে হৃদরোগ এবং স্ট্রোক সবচেয়ে বড় ঘাতক ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অসংক্রামক রোগের ১২.৫ ভাগ মৃত্যু হয় হৃদরোগে, যার মধ্যে শতকরা ৮২ ভাগ মৃত্যু হয় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগণের। কারণএর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং অনেক  ব্যয়বহুল। অনেক রোগীর পক্ষে এই ব্যয় বহন করা অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।

হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালির রোগসমূহ : মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হার্ট বা হৃৎপিণ্ড। হৃদরোগের ঝুঁকির ব্যাপারটি নির্ভর করে আপনি কীভাবে জীবনযাপন করছেন তার ওপর। অতিরিক্ত ধূমপান, শুয়ে-বসে সময় কাটানো, শরীর চর্চাহীন জীবন এবং চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণে শরীরে চর্বি জমা হয়ে ধমনিগুলো সরু হতে থাকে। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে রক্ত চলাচলের পথ বা ধমনির ভিতর রক্ত প্রবেশের পথ আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে হৃৎপিণ্ডকে অক্সিজেন দিতে ব্যর্থ হলেই ঘটতে পারে হার্ট অ্যাটাক।

হৃদরোগের রিস্ক ফ্যাক্টর : বিভিন্ন কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যাকে বলা হয় রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকিসমূহ। কিছু কিছু সহজেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য আর কিছু অনিয়ন্ত্রণযোগ্য। অনিয়ন্ত্রণযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো হলো—বয়স, লিঙ্গ ও বংশগত। নিয়ন্ত্রণযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে রয়েছে ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য, ডায়াবেটিস, মুটিয়ে যাওয়া, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, চর্বি জাতীয় খাদ্য বেশি এবং আঁশ জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া, মানসিক চাপ, মদ্যপান, জন্মনিয়ন্ত্রক পিল খাওয়া ইত্যাদি। কী করে বুঝবেন হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন কিনা? কিছু কিছু লক্ষণ অনুভব করলে হৃদরোগ হতে পারে বলে ধারণা করতে পারেন। নিম্নে কিছু টিপস দেওয়া হলো— মাঝে মাঝে সামান্য বুকে ব্যথা বা চাপ চাপ ভাব অনুভব করেন। বিশেষ করে পরিশ্রম বা হাঁটাচলা, সিঁড়িতে ওঠানামা করলে এমনকি খাওয়ার সময়ও বুকের ব্যথা বা চাপ অনুভূত হয়, আবার বিশ্রাম নিলে কমে যায়। হঠাৎ খুব বেশি বুকের মাঝে ব্যথা অনুভূত হওয়া, যা বাম হাতের দিকে এমনকি গলা বা চোয়ালেও ছড়িয়ে যায়। হঠাৎ কাশি বা তীব্রতর শ্বাসকষ্ট, অস্বস্তিবোধ, দুর্বলতা বা ক্লান্তিবোধ হওয়া। বুকের ব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব এমনকি বমি হওয়া, শরীরে অতিরিক্ত ঘাম, হঠাৎ মাথা ঘুরানো এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা এবং হূিক্রয়ার ছন্দ বেড়ে যাওয়া। কোনো রকম ব্যথা ছাড়াও হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভূত হওয়া। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত নাও হতে পারে। তবে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম ঝরা, মাথা ঘোরা ও ক্ষণিকের জন্য চেতনাহীন হয়ে পড়াটাই এই রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ। হঠাৎ করে পেটে ব্যথা বা গ্যাস, বমি, বদ হজম, যাকে অনেকেই সাধারণ গ্যাস্ট্রিক মনে করে অবহেলা করেন।

যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো মনে হয় : উপরের যেকোনো লক্ষণ অনুভূত হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত, বিশেষ করে যারা আগে থেকেই হৃদরোগে ভুগছেন। বুকে মারাত্মক ব্যথা হলে যদি কোনো নিকটস্থ হাসপাতাল বা ক্লিনিক থাকে, তবে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর অনুরোধ করুন। আপনি একা থাকলে সাহায্যের জন্য প্রতিবেশীকে ডাকুন এবং পাশ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনুরোধ করুন, নিজে গাড়ি চালিয়ে না যাওয়াই ভালো। তবে নিছক প্রয়োজন হলে শেষ আশ্রয় হিসেবে গাড়ি চালিয়ে চলে যাবেন। যদি আগেই আপনার হৃদরোগ সম্পর্কে জানা থাকে, তবে বুকে ব্যথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে অথবা ট্যাবলেট জিহ্বার নিচে নিতে পারেন। ৩০০ মিলিগ্রামের একটি অ্যাসপিরিন বড়ি কিছু খাওয়ার পর খেতে পারেন।  লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর