বিশ্ব হার্ট দিবস ছিল গতকাল। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে দিনটি। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘হৃদরোগ জয়ের শক্তি ছড়িয়ে দিন সর্বত্র’। হার্ট মানুষসহ সব জীবজন্তুর সমস্ত শক্তির কেন্দ্রবিন্দু। শরীরের এই অঙ্গটি আপনাকে ভালোবাসতে দেয়, হাসতে দেয়, সর্বোপরি বাঁচিয়ে রাখে। তাই হার্টের রোগের ঝুঁকিসমূহ জানুন, হার্টকে ভালোবাসুন, আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হোন এবং অন্যকেও অনুপ্রাণিত করুন। বিজ্ঞানের অবিস্মরণীয় উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানেরও অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। কলেরা, ডায়রিয়া, বসন্ত, যক্ষ্মা, হামসহ বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি সহজেই চিকিৎসায় নিরাময় এবং প্রতিরোধযোগ্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ পানি, খাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা পদ্ধতি, কার্যকরী টিকা কর্মসূচি, সর্বোপরি মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সংক্রামক ব্যাধি কমে যাচ্ছে, মানুষের গড়-আয়ু বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে বার্ধক্যজনিত রোগ যেমন অস্টিওপরোসিস, অস্টিওআর্থ্রোসিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি বাড়ছে এবং হয়ে উঠছে বড় ঘাতক। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে হৃদরোগ এবং স্ট্রোক সবচেয়ে বড় ঘাতক ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অসংক্রামক রোগের ১২.৫ ভাগ মৃত্যু হয় হৃদরোগে, যার মধ্যে শতকরা ৮২ ভাগ মৃত্যু হয় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগণের। কারণএর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং অনেক ব্যয়বহুল। অনেক রোগীর পক্ষে এই ব্যয় বহন করা অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।
হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালির রোগসমূহ : মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হার্ট বা হৃৎপিণ্ড। হৃদরোগের ঝুঁকির ব্যাপারটি নির্ভর করে আপনি কীভাবে জীবনযাপন করছেন তার ওপর। অতিরিক্ত ধূমপান, শুয়ে-বসে সময় কাটানো, শরীর চর্চাহীন জীবন এবং চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণে শরীরে চর্বি জমা হয়ে ধমনিগুলো সরু হতে থাকে। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে রক্ত চলাচলের পথ বা ধমনির ভিতর রক্ত প্রবেশের পথ আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে হৃৎপিণ্ডকে অক্সিজেন দিতে ব্যর্থ হলেই ঘটতে পারে হার্ট অ্যাটাক।
যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো মনে হয় : উপরের যেকোনো লক্ষণ অনুভূত হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত, বিশেষ করে যারা আগে থেকেই হৃদরোগে ভুগছেন। বুকে মারাত্মক ব্যথা হলে যদি কোনো নিকটস্থ হাসপাতাল বা ক্লিনিক থাকে, তবে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর অনুরোধ করুন। আপনি একা থাকলে সাহায্যের জন্য প্রতিবেশীকে ডাকুন এবং পাশ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনুরোধ করুন, নিজে গাড়ি চালিয়ে না যাওয়াই ভালো। তবে নিছক প্রয়োজন হলে শেষ আশ্রয় হিসেবে গাড়ি চালিয়ে চলে যাবেন। যদি আগেই আপনার হৃদরোগ সম্পর্কে জানা থাকে, তবে বুকে ব্যথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে অথবা ট্যাবলেট জিহ্বার নিচে নিতে পারেন। ৩০০ মিলিগ্রামের একটি অ্যাসপিরিন বড়ি কিছু খাওয়ার পর খেতে পারেন। লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।