বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

যে কারণে অতিরিক্ত ঘাম হয়

যে কারণে অতিরিক্ত ঘাম হয়

চামড়ার নিচে ঘর্মগ্রন্থি নামক এক ধরনের গ্রন্থি থাকে তা থেকে ঘাম নামক এক ধরনের তরল পদার্থ নিঃসৃত হয়ে চামড়ার ওপরে জমে মানুষের চামড়াকে ভিজিয়ে দেয়। এ অবস্থাকে মানুষ ঘাম হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। ঘামে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে পানি তার সঙ্গে আরও থাকে লবণ, ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটিনিন এবং আরও অনেক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যাদের বর্জ্য পদার্থ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। ঘাম একটি অতীব জরুরি কর্মকাণ্ড, যদি কোনো কারণে কারও ঘাম হওয়া বন্ধ হয়ে যায় তবে সেই ব্যক্তি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তাই ঘাম হওয়া শারীরিক সুস্থতার একটি অপরিহার্য কর্মকাণ্ড। গরমকালে বেশি পরিমাণ ঘাম উৎপন্ন হয় কারণ ঘামে পানি বাষ্পীভূত হওয়ার সময় শরীর থেকে তাপ গ্রহণ করে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে তাই শীতকালে খুব বেশি ঘাম হতে দেখা যায় না। আরও অনেক কারণে মানুষের শরীরে ঘাম হয়ে থাকে। যেমন- টেনশন, ভীতি, উত্তেজনা, অত্যধিক কায়িকশ্রম, শক্তি প্রয়োগের কাজ করা, যৌন উত্তেজনা, অজানা কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা হওয়া এবং মোকাবেলা হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের সময়, দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতি ও কর্মকাণ্ড সম্পাদনের সময়, কোনো বিপদ থেকে পালিয়ে বাঁচার সময় ইত্যাদিই প্রধান কারণ। এত গেল সুস্থ মানুষের ঘাম হওয়ার কথা, মানুষ যখন শারীরিক অথবা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন তার শরীর অত্যধিক ঘেমে যেতে পারে। এমনি বিনা পরিশ্রমে বা বিশ্রাম গ্রহণের সময় অথবা খুব অল্প পরিশ্রমে তা হয়ে থাকে। যে কোনো কারণে রক্তচাপ অত্যধিক কমে গেলে যেমন- ডায়রিয়ায় বেশি পরিমাণে বমি হওয়া, রক্তক্ষরণ হলে, হার্ট অ্যাটাক হলে, হার্টের হৃত্স্পন্দনের অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে, খুব বেশি বাতব্যথার প্রবণতা দেখা দিলে মানবদেহ বেশ কিছু হরমোন নিঃসরণ করে। যেমন- ইপিনেফ্রিন, নরইপিনেফ্রিন ও ডোপামিন। এসব হরমোনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীর অত্যধিক ঘেমে যেতে পারে এবং অত্যধিক ঘাম শুকানোর জন্য শরীর থেকে অনেক তাপ শোষণ করে নেওয়ার ফলে শরীর অত্যধিক ঠাণ্ডা হয়ে যায়। যারা হৃদরোগে ভুগছেন তারা একটু তাড়াহুড়া করে কাজ করতে গেলে, ভারী কাজ করতে গেলে খুব সহজেই শরীর অত্যধিক ঘেমে যেতে পারে তার সঙ্গে নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসা, মাথা হালকা অনুভূতি, বুকব্যথার অনুভূতি হওয়া, অস্থিরতা দেখা দেওয়ার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। বুকের ব্যথা শ্বাসকষ্টের সঙ্গে যদি কারও শরীর অত্যধিক ঘাম হয় তবে হার্ট অ্যাটাকের মতো ভয়াবহ অসুস্থতাকে বিবেচনায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে কারও কারও বমি বমি ভাব বা বমিও হতে পারে। আপনি অনেক দিন থেকে হৃদরোগে ভুগছেন, হার্টে রিং পরেছেন অথবা বাইপাস অপারেশন করেছেন এবং নিয়মিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসাধীন আছেন কিন্তু অনেক সময় আপনার শরীর অত্যধিক ঘেমে যায়। বিশেষ করে খাওয়ার সময়, সিঁড়ি বেয়ে একতলা বা দুইতলা উঠতে গেলে, পরিধেয় পোশাক পরিবর্তনের সময় তবে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি কারণ এতে বোঝা যাচ্ছে যে অসুস্থতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে অথবা চিকিৎসা অপ্রতুল হচ্ছে। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন এক্ষেত্রে যদি অল্প পরিশ্রমে অত্যধিক ঘামতে থাকেন তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেরি করবেন না কারণ আপনার ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। জটিলতা হিসেবে  হৃৎপিণ্ড আক্রান্ত হচ্ছে বলেই ধরে নিতে পারেন। তাই এসব ক্ষেত্রে অবহেলা না করে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমশের হার্ট

কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী।

সর্বশেষ খবর