সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস কাল

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস কাল। প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়। International Diabetes Fedaration (IDF)-এর উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য—  ‘নারী ও ডায়াবেটিস : স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ আমাদের অধিকার।’ IDF- অতি বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রতিপাদ্য বিষয়টি ঠিক করেছে, কেননা ডায়াবেটিস পৃথিবীব্যাপী একটি ব্যাপক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতে মোট  ডায়াবেটিস রোগীর কমপক্ষে ১৬.২ শতাংশ শুধু গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এ হার মোট ডায়াবেটিস রোগীর ২৩.৬ শতাংশ। বাংলাদেশে এর চেয়ে বেশিও হতে পারে। প্রায় ১৯৯ মিলিয়ন নারী ২০১৬ সালে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ছিলেন। যা ২০১৪ সালে ৩১৩ মিলিয়নে উন্নীত হবে। অন্যদিকে প্রতি পাঁচজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলা প্রজনন সময়কালের মধ্যে আছেন। যা প্রায় ৬০০ মিলিয়ন। প্রতি বছর ২.১ মিলিয়ন (২১ লাখ) মহিলা শুধু ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। যেসব মহিলার ডায়াবেটিস আছে তাদের হার্ট অ্যাটাক ও এ ধরনের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি, যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের তুলনায় ১০ গুণ বেশি। আর যাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস আছে তাদের গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। প্রতি ৭টি প্রসবের মধ্যে ১টি মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দ্বারা আক্রান্ত। এর অর্ধেকেরই বেশি ৩০ বছরের কম বয়সী প্রসূতিদের ক্ষেত্রে ঘটে। যাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আছে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে এদের অর্ধেকেরও বেশি টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত হবেন, অধিকাংশ গর্ভকালীন  ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলার বসবাস অনুন্নত দেশগুলোতে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে তো বটেই উন্নত দেশেও গর্ভবতীর ডায়াবেটিস তার নিজের ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য ব্যাপক ঝুঁকির কারণ। আর বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অন্যতম বাধা হলো জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও এর কারণে বর্ধিত মাতৃমৃত্যু। তাই IDF যতটুকু উদ্যোগ নিয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ উদ্যোগ বাংলাদেশে অতি জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া উচিত। এ বছর IDF কিছু নির্দেশনা দিয়েছে, উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো— * চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থাপনার সর্বস্তরে নারীদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। * ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলাদেরও পর্যাপ্ত অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সুনিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে চিকিৎসা উপাদান (ওষুধপত্র, যন্ত্রপাতি) ডায়াবেটিস চিকিৎসা বিষয়ক শিক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ফলোআপ ব্যবস্থাপনা * যারা ডায়াবেটিস নিয়ে সন্তান ধারণ করতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য সব উদ্যোগ নিতে হবে যাতে গর্ভধারণের আগে থেকেই গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন সময়ের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। * সব বালিকা ও নারীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় শারীরিক শ্রম সম্পাদনের উৎসাহ দিতে হবে। * ডায়াবেটিস প্রতিরোধ নীতিমালা ও পরিকল্পনায় নারীদের সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি এবং প্রাক-গর্ভকালীন ও গর্ভকালীন এবং নবজাতকের ও শৈশবকালীন পুষ্টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। *  গর্ভকালীন সেবা আদর্শ মাত্রায় উন্নীত করার জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে এতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া তাগিদ থাকতে হবে। * গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় মহিলা ও প্রসূতি সেবাদানকারী  প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা। নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দানকারীদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রেরণের শিক্ষা দিতে হবে। ‘নারী ও ডায়াবেটিস, স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ আমাদের অধিকার’ এটি শুধু ডায়াবেটিস বিষয়ক কোনো চিন্তাভাবনা নয়, বরং সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জনগোষ্ঠী তৈরিতে প্রাথমিক এবং অনায়াসে পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব এমন একটি দিকনির্দেশনা।

ডা. শাহজাদা সেলিম, সহকারী অধ্যাপক

অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ

মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর