সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্লাড প্রেসারের জটিলতা

ব্লাড প্রেসারের জটিলতা

হৃৎপিণ্ড সংকোচনের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে রক্তনালির মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত সরবরাহ করে থাকে। হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি সংকোচন করে তার সঙ্গে সংযুক্ত বড় বড় রক্তনালিতে রক্তের চাপ বৃদ্ধি করে এ চাপের প্রভাবে রক্ত বড় বড় রক্তনালি থেকে শরীরের দূরবর্তী অংশে ছোট ছোট রক্তনালিতে প্রবাহিত হয়। আমরা জানি, তরল পদার্থ অধিক চাপযুক্ত স্থান থেকে কম চাপযুক্ত স্থানের দিকে প্রবাহিত হয়। ঠিক এভাবেই হৃৎপিণ্ড থেকে চাপের প্রভাবে রক্ত প্রতি মুহূর্তে সারা দেহে প্রবাহিত হয়ে থাকে, এ প্রক্রিয়া মাতৃগর্ভ থেকে মানুষের মৃত্যু অবধি বিরামহীনভাবে চলতে থাকে। অন্যভাবে বলতে গেলে হৃত্স্পন্দন (হৃৎপিণ্ডের সংকোচন) ও রক্ত প্রবাহই জীবন, যা থেমে গেলে জীবনের অবসান ঘটে বা মৃত্যু হয়। রক্তনালি মানবদেহে এমনভাবে বিস্তৃত যা শরীরের প্রতিটি অংশে রক্ত সরবরাহ করতে সক্ষম মানে দেহের প্রতিটি কোষের পাশে কোনো না কোনো রক্তনালি বিদ্যমান থাকে, যার মাধমে প্রতিটি কোষ প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি আহরণ করে থাকে এবং কোষে উৎপাদিত বর্জ্য পদার্থ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড আবার রক্তনালিতে ফেরত দিয়ে থাকে, এভাবেই রক্ত সরবরাহের মাধ্যমে একটি প্রাণীর প্রতিটি অঙ্গ বেঁচে থাকে এবং তার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে থাকে। প্রতিটি রক্তনালি এমনভাবে তৈরি যাতে করে তার ভিতর রক্ত প্রবাহ (পরিমাণ) বৃদ্ধি পেলে রক্তনালি ইলাস্টিকের মতো প্রসারিত হয়ে অধিক পরিমাণ রক্ত ধারণ করতে পারে, এর ফলে রক্তনালিতে চাপ বৃদ্ধি পায়। এভাবেই চাপের ফলে রক্তনালির মধ্যে প্রতিনিয়ত রক্ত প্রবাহ সৃষ্টি হয়। উচ্চ রক্তচাপ এক ধরনের রক্তনালির অসুস্থতা যার ফলে রক্তনালি তার ইলাস্টিসিটি বা সংকোচন ও প্রসারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ইলাস্টিসিটির মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে রক্তনালি রক্ত পাম্প প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রক্তনালির ইলাস্টিসিটি নষ্ট হলে রক্তপ্রবাহের জন্য হৃৎপিণ্ডকে আরও অধিক চাপ প্রয়োগ করতে হয়। যার ফলে বড় বড় রক্তনালিতে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এ অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। দীর্ঘ সময় রক্তচাপের মাত্রা বেশি থাকার ফলে হৃৎপিণ্ড অধিক চাপের বিপরীতে বেশি বেশি কাজ করতে করতে পরিশ্রান্ত হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে হার্ট ফেইলুর বা হৃৎপিণ্ডের অকার্যকারিতা নামক অসুস্থতার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ড দেহের প্রয়োজনমাফিক রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়, এর প্রাথমিক অবস্থায় ব্যক্তির শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়, ব্যক্তির পরিশ্রম করা বা কর্মসম্পাদন করার যোগ্যতা কমতে থাকে। অসুস্থতা আরও বেশি হলে হাত-পা-মুখ ফুলে যায়, পেট ফেঁপে যায়, পেটে অত্যধিক গ্যাস উৎপন্ন হয়ে থাকে, রোগী স্বাভাবিক চলাফেরায় অসামর্থ্য হয়ে পড়ে। কারও কারও পরিশ্রমে বুক ব্যথা, ধড়ফড়ের মতো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়। কারণ উচ্চ রক্তচাপের ফলে রোগীর শরীরে কোনো উপসর্গ পরিলক্ষিত হয় না বললেই চলে। তবে দীর্ঘদিন যাবৎ রক্তচাপ বেশি থাকার ফলে হৃৎপিণ্ডের প্রভূত ক্ষতিসাধিত হয়। হৃৎপিণ্ডের ক্ষতিসাধিত হওয়ার পরই তার উপসর্গ রোগী বুঝতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হার্টকে ধ্বংস করার পরই রোগীর শরীরে তার উপসর্গ দেখা দেয়, এর আগ পর্যন্ত যেহেতু কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না, তাই রোগী উচ্চরক্তচাপ নিয়ে দীর্ঘ সময় স্বাভাবিক জীবনধারণ করতে থাকে। ঠিক এ কারণেই রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর