শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইসিপি কী এবং কেন?

ইসিপি কী এবং কেন?

এক্সটার্নাল কাউন্টার পালসেশন বা থেরাপি পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ কাটাছেঁড়া বিহীন। এ পদ্ধতিতে শরীরের বাইরে থেকে এয়ার পাম্পের সাহায্যে হার্টের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রক্ত পাম্প করে থাকে। রোগীর হার্ট নিজে যতটুকু রক্ত পাম্প করতে সক্ষম এই থেরাপির মাধ্যমে তা ২০০% থেকে ৩০০% রক্ত পাম্প করে রক্তপ্রবাহকে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি করে। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহের রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে রক্তনালি প্রসারিত হয়, ছোট ছোট ব্লক দূরীভূত হয়। হার্টের রক্তনালি ব্লক হওয়ার কারণে ব্লক থেকে দূরবর্তী অংশে রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয়ে থাকে। এই থেরাপিতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধির ফলে ব্লকের চতুর্দিকে চুপসানো রক্তনালি প্রসারিত হয়ে যায় এবং এসব রক্তনালির আয়তন বর্ধিত হয়ে ব্লকের বাইপাস রক্তনালি হিসেবে কাজ করে। ফলশ্রুতিতে ব্লককে বাইপাস করে রক্তপ্রবাহ দূরবর্তী অংশে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়।  কোনোরূপ ব্যথা-বেদনা, কাটাছেঁড়া, কোনো রকম সুই ফোঁড়ানো ছাড়াই এবং হাসপাতালে ভর্তিবিহীন অবস্থায় এ থেরাপি নেওয়া সম্ভব। রক্তচাপ মাপার জন্য এক ধরনের কাফ (বন্ধনী) ব্যবহার করা হয় এবং চাপ নির্ণয়ের সময় তাতে পাম্প করে বাতাস ঢোকানো হয় যা আমরা সবাই জানি, ঠিক একই ধরনের কিন্তু বড় সাইজের বেশ কিছু কাফ পা, উরু ও নিতম্বে পরিয়ে তাতে হৃদযন্ত্রের সংকোচন ও প্রসারণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাপগুলোতে বাতাসের চাপ সৃষ্টি ও চাপ অপসারণ করে পাম্প সৃষ্টি করা হয়। যার ফলে রক্তনালিতে চাপের তারতম্যের কারণে শরীরের রক্তপ্রবাহে চাপ ও গতি এবং পরিমাণে ২০০% থেকে ৩০০% বৃদ্ধি পায়। যা কিনা সারা শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি, রক্তের মাধ্যমে পৌঁছে দিয়ে হার্টের কাজকে বহুলাংশে সহায়তা করে। যার ফলে হার্টের কাজের চাপ কমে যাওয়ায় হার্ট আংশিকভাবে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারে। হার্টের কাজের চাপ (Work Load) কমার ফলে হার্ট পুনঃগঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সারা দেহে রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে অনেক শারীরিক অক্ষমতা দূর করার ফলে প্রচণ্ড দুর্বল এবং বয়স্ক রোগীরা কর্মচঞ্চলতা ফিরে পায় এবং অনায়াসে প্রয়োজনীয় শারীরিক কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া এবং অত্যাবশ্যকীয় কর্মসম্পাদন করতে পারে। সর্বোপরি, ইসিপি থেরাপি প্রচণ্ড দুর্বল এবং বয়স্ক রোগীদের শারীরিক যোগ্যতা বৃদ্ধি করে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা আনয়নেও সাহায্য করে থাকে। ইসিপি থেরাপি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করে তা হলো, রক্তচাপ ও রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। ফলে ছোট অকেজো রক্তনালি খুলে গিয়ে হার্টের রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে বুকের ব্যথা প্রশমন করে। হার্টের রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধির ফলে হার্ট তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে পায়।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমশের হার্ট

কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর