বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

অধ্যাপক ডা. মো. জুলহাস উদ্দিন

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া যেহেতু মশাবাহিত ভাইরাস রোগ সেহেতু রোগের বিস্তার, রোগের লক্ষণাদি তথা রোগটির সম্পর্কে সম্মক ধারণা থাকলে এ রোগ থেকে অনেকাংশে নিরাপদে থাকা সম্ভব। বাৎসরিক ৪০০ মিলিয়ন ইনফেকশনের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ইনফেকশন ক্লিনিক্যালি প্রকাশ পায়। তন্মধ্যে ডেঙ্গু হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করা একটি রোগ। এশিয়া, প্যাসিপিক, আফ্রিকা এবং আমেরিকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।

ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার জীবাণু এডিস নামক মশা দ্বারা বাহিত হয়। মশাটি সাধারণত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থির এবং স্বল্প গভীর জলাধারে বংশ বিস্তার করে। জমে থাকা পরিষ্কার পানি যেমন- ফুলের টব, এয়ারকুলার বা ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানি, ফেলে দেওয়া ডাব বা নারিকেলের খোসা, টিনের কন্টেইনার, গাড়ির টায়ার ইত্যাদির মধ্যে জমে থাকা পানি যা বৃষ্টির সিজনেই বেশি সম্ভাবনা তাই এই সময়টাতেই (মে-জুন থেকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত) রোগের সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। মশটি শুধু দিনের বেলায় গোধূলি লগ্নেই কামড়িয়ে থাকে। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। একমাত্র ইনফেকটেড মশা কামড়ালেই রোগটি হয়। চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাস প্রজাতি আছে। এক প্রজাতি দিয়ে রোগ হলে সেরে যাওয়ার পর ওই নির্দিষ্টের বিপরীতে আজীবন প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হবে কিন্তু আরও বাকি তিন প্রকারের প্রজাতি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের উপসর্গ ও লক্ষণাদি দুটোতেই ২-১ দিনের High fever থাকবে, সঙ্গে প্রচণ্ড কোমর ব্যাথা, জিহ্বা শুকানো ইত্যাদি (ডেঙ্গু) এবং যদি জয়েন্টের ব্যথা বিশেষ করে পায়ের এবং হাতের ছোট জয়েন্টগুলো ফুলে যায় (চিকুনগুনিয়া) আক্রান্ত হয়েছে বলে সন্দেহ করতে হবে। সুতরাং এই সিজনে অল্প সময়ের উচ্চমাত্রার জ্বর, সঙ্গে উপরোক্ত উপসর্গগুলো থাকলেই নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রিপোর্ট করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার আগেই প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ যেমন-এসপিরিন, ডিসপিরিন, ক্লোফেনাক, ইন্ডোমাথাসিন ইত্যাদি সেবন করা যাবে না কারণ তাতে রক্ত ক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এমনকি যারা হার্ট ব্রেইন অসুখের জন্য তথাকথিত Blood thinner ব্যবহার করেন তারাও সমায়িকভাবে Aspirin/ Clopidogrel সেবনে বিরত থাকবেন। মনে রাখতে হবে এটি অত্যন্ত সাময়িক একটি রোগ সাধারণত ৫-৭ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি প্রধানত : ক্লিনিক্যাল। ল্যাবরেটরির সাহায্য নেওয়া যায় তবে প্রথমেই Dengue NS-1 Antigen করতে হবে কারণ Dengue Antibodz তৈরি হতে ৫-৭ দিন সময় লাগে। এখানে আরও একটি তথ্য সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে জানানো দরকার যে, রক্ত ক্ষরণের ভয়টি জ্বর সম্পূর্ণ সেরে গেলে তার থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাধারণত হয়ে থাকে। পাশাপাশি কোনো ধরনের এন্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করার কোনো প্রয়োজন নেই।

এ রোগে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায় বিধায় প্রচুর ORS এবং ডাবের পানি পান করতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল ব্যবহার করতে হবে। এ রোগে যেমন Antibiotic ব্যবহার করা যায় না তেমনি Antiviral Agent- ও নেই। তবে সু-খবর এই যে, Recently licenced Vaccine is available.

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন, মার্কস

মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর