সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

থাইরয়েড হরমোন

থাইরয়েড হরমোন

‘থাইরয়েড হরমোন’ (থাইরক্সিন) সব কাজের কাজি। থাইরক্সিন থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন যার কার্যকারিতা বর্ণনা করে শেষ করা যায় না। শারীরিক ও মানসিক সব কর্মকান্ড পরিচালনায় মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। গলার সামনের দিকে চামড়ার নিচে অবস্থিত গ্রন্থির নাম থাইরয়েড গ্রন্থি, যার থেকে থাইরক্সিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়ে রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেহের সমস্ত কলা ও কোষে পৌঁছে প্রতি কলা ও কোষের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করে। যদি কোন কারণে রক্তে থাইরক্সিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তখন সমস্ত শারীরিক ও মানসিক কর্মকান্ডে চঞ্চলতা বৃদ্ধি পায় এবং যদি কোনো কারণে রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা কমে যায় তাহলে শারীরিক ও মানসিক সব কর্মকান্ড স্তিমিত হয়ে পড়ে। অনেক কারণে থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য বা ঘাটতি দেখা দিয়ে থাকে, তন্মধ্যে অটোইমিউন কারণকে বড় কারণ বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে, যার সঙ্গে বংশগত প্রভাব অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তার মানে বংশে কারও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে ব্যক্তিরও থাইরয়েড সমস্যা দেখা দেওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। ভাইরাল ইনফেকশন খাদ্যে আয়োডিনের অভাব, বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিশেষ করে ভাইরাল ইনফেকশন যেমন ইনফ্লয়েঞ্জা, কভিড-১৯ এবং হার্পিস ভাইরাস, থাইরয়েড অপারেশন, রেডিও থেরাপি, কেমোথেরাপি ইত্যাদি অন্য কারণের মধ্যে অন্যতম। কারণ যাই হোক না কেন থাইরয়েড সমস্যাকে মূলত দুইভাগে বিবেচনা করা হয়, যেমন থাইরয়েড হরমোন আধিক্য মানে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া যাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলা হয় এবং থাইরয়েড হরমোনের কমতি মানে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কমে যাওয়া যাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলা হয়ে থাকে। থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য বা হাইপারথাইরয়েডিজমে রোগীর শারীরিক ও মানসিক সব ধরনের কর্মতৎপরতার বৃদ্ধি ঘটে থাকে। ফলশ্রুতিতে রোগীর মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়, কোনো কাজেই মন বসে না, চিন্তাচেতনায় অস্থিরতা দেখা দেয়, কাজ-কর্ম, চাল-চলন, কথাবার্তায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়ে দ্রুত কর্মসম্পাদনের প্রবণতা দেখা দেয়। মানসিক অস্থিরতার জন্য ঘুমের ব্যঘাত সৃষ্টি হয়, অতি সহজেই রোগী উত্তেজিত হয়ে পড়ে। অত্যাধিক ক্ষুধা লাগা, চোখে মুখে চঞ্চলতার ভাব পরিলক্ষিত হওয়া, হার্টের অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য খুব সহজেই বুকের ব্যথায় আক্রান্ত হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বৃদ্ধি পাওয়া, মেয়েদের মাসিকের সমস্যা দেখা দেওয়াসহ আরও অনেক ধরনের উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

হাইপারথাইরয়েডিজমে রোগীর শারীরিক ও মানসিক সব ধরনের কর্মতৎপরতার বৃদ্ধি ঘটে থাকে। ফলশ্রুতিতে রোগীর  মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়

থাইরয়েড হরমোনের কমতি বা হাইপোথাইরয়েডিজমে রোগীর মানসিক স্থবিরতা, কর্মতৎপরতা কমে যাওয়া, কাজকর্মে অনীহা, কাজকর্মে চালচলন ও কথাবার্তায় স্থবিরতা দেখা দেয়। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বুদ্ধি-বৃত্তির বিকাশ না ঘটা, হাঁটতে বা কথা বলতে দেরি হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। বাচ্চাদের হাবা-গোবা চেহারা, তোতলামোর মতো উপসর্গও দেখা দিয়ে থাকে। বড়দের বেলায় কানে কমশোনা, প্রশ্নের উত্তর দিতে দেরি করা বা উত্তর দিতে দ্বিধাবোধ করা, চুপচাপ বসে থাকা ইত্যাদি লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। মাথার চুল ঝরে পড়া, মাথা ব্যথা হওয়া, ক্ষুধা-মন্দা দেখা দেওয়া, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যাওয়া অথচ শারীরিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, বুকে ব্যথা হওয়া, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, কোলেস্টেরল বৃদ্ধিজনিত কারণে হার্টের রক্তনালিতে ব্লকের সৃষ্টি হয়ে হৃদরোগের বিভিন্ন লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং যাদের ডায়াবেটিস রোগ পূর্বে নিয়ন্ত্রণে ছিল তাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়ে থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন দুর্বলতা ও মহিলাদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্ব দেখা দিয়ে থাকে। রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নির্ণয় করে, রক্তে সুগারের মাত্রা নির্ণয়, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নির্ণয়, ইসিজি, ইটিটি ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় এবং রোগের তীব্রতা যাচাই এবং জটিলতা নির্ধারণ করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে যে, থাইরয়েডের সমস্যার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে থাকে অনেক জটিল অবস্থায় চিকিৎসার পাশাপাশি অপারেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে। তাই থাইরয়েড নিয়ে সবাইকে সচেতন ও যত্নবান হতে হবে।

-ডা. এম. শমশের আলী, পরিচালক ও চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর