শিরোনাম
রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা

কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা

মানবদেহ থেকে বর্জ্য নিষ্কাশনে মূলত দুটি প্রক্রিয়াকে সাধারণভাবে সবাই জানেন, মূত্র ত্যাগ ও মল ত্যাগ। প্রস্রাব, প্রস্রাবের থলিতে প্রতি মুহূর্তে জমা হতে থাকে, থলে ভর্তি হলে প্রস্রাবের বেগ হয় এবং মানুষ থলে খালি করে থাকে প্রস্রাব করার মাধ্যমে। অনুরূপভাবে মলেরও একটি থলে আছে, তবে থলেটি মল ত্যাগের সুবিধার্থে নলাকার (টিউব) থাকে ডাক্তারি ভাষায় (বৃহদন্ত্র) মলাধার বলা হয়। মলাধার ভর্তি হলে মল ত্যাগের মাধ্যমে সময়ে সময়ে তা খালি করা হয়। আমরা যে সব বস্তুকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি তার একটা অংশ হজমের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে আর বাদবাকি অংশ মলে পরিণত হয়। খাদ্য তন্ত্র বা ফাইবার পেটে হজম হয় না এবং মল তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচ্য। সুস্থ মানুষের প্রতিদিন এমন পরিমাণ মল তৈরি হওয়া উচিত যাতে (মলাধার) মলের থলে অন্তত একবার ভর্তি হয় তাতে দিনে একবার মলত্যাগ করার প্রয়োজন হবে। নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মল অধিক সময় ধরে মলাধারে জমা থাকলে অর্থাৎ নিয়মিত মলত্যাগ না করতে পারলে, মল থেকে পানি শোষিত হওয়ার ফলে পানি বের হয়ে যাওয়ায় মল দিনে দিনে শক্ত আকার ধারণ করে, ফলে ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অসুুস্থ হতে পারে। এর সব কিছুর একমাত্র প্রাকৃতিক সমাধান অধিক মলবর্ধক খাদ্য মূলত শাকসবজি, ফলমূল ও দুধ-দধি ও আস্ত শস্যদানার খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা। এই খাদ্যবস্তুগুলো কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের প্রধান উপাদানও বটে। এছাড়া তিসি খুব ভালো কার্যকর এসব ক্ষেত্রে। তিসিতে প্রচুর দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী। তিসির সাধারণত বেশি তীব্র গন্ধ বা স্বাদ নেই বলে তা সবার কাছেই বেশি গ্রহণযোগ্য হয়। তিসিকে হালকা ভেজে ব্যবহার করতে হয়, তিসি ব্যবহার করে আচার কাসুন্দি তৈরি করা যেতে পারে, ভর্তা করেও খাওয়া যেতে পারে। আবার বেশ কিছু ফলে অধিক পরিমাণে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অঢ়ঢ়ৎরপড়ঃ -কাঠ বাদাম, ঋরমং -আনজির, পেঁপে, আনারস, পেয়ারা, চবধপযবং, চৎঁহবং ইত্যাদি। শাকসবজি ও ফাইবার বা খাদ্যতন্ত্রের প্রাকৃতিক উৎস। অন্যদিকে শস্যদানা (সবশুদ্ধ) যেমন-লালচাল, আটা ও আস্ত ডাল খেলে প্রচুর খাদ্যতন্ত্র/ডায়েটারি ফাইবার পাওয়া যেতে পারে। ইসবগুলের ভুসি, তোকমা দানা, তিসির খৈল, তিসি বাটা, শর্ষে বাটা, তিল ভাজা (ছালসহ) কাসুন্দি কোষ্ঠকাঠিন্য কাটাতে পারে। এসব খাবার প্রথমে শুরু করার সময় অল্প অল্প করে শুরু করতে হবে। বিশেষ করে যারা পূর্বে ফাইবার জাতীয় বা এসব খাবার গ্রহণে বেশি অভ্যস্ত নন। তাদের হলে পেটে গ্যাস উৎপন্ন হয়ে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ১-২ সপ্তাহ সময়ের মধ্যে পেটে গ্যাস উৎপন্ন হওয়া কমে যায়।

আরও কিছু পরামর্শ : মিষ্টি আলু একটু বেশি পরিমাণে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। * কচু, কচুর মুথি, লতা, ডাঁটা ও পাতা পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। * প্রতিদিন ৫ মিনিট করে পেটের জন্য যোগব্যায়াম করুন। শ্বাস নিতে নিতে পেট ফুলান এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পেট ভিতরে ঢুকান। আপনি টয়লেটে বসেও তা করতে পারেন। * ঘৃতকুমারীর শাঁস পানিতে মিশিয়ে খালি পেটে এক থেকে দুই গ্লাস পরিমাণ খাওয়া যেতে পারে। * প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করা এবং এক গ্লাস বেলের জুস খাওয়া বেশ উপকারী।

ইফতারে রাখুন ফলমূল : রমজান মাস তাই এ সময় আরও সচেতন হতে হবে। ইফতারের সময় পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ স্বাস্থ্যসম্মত, কারণ সারা দিন রোজা রাখার ফলে শরীরে পানির অনেক ঘাটতি দেখা দেয়। ইফতারে রাখুন শসা, পেয়ারা, তরমুজ, টমেটো, নাশপাতির মতো ফল।

 -ডা. এম শমশের আলী, চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর