মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী ইস্যু

যুক্তরাষ্ট্রের পথে হাঁটল গুয়াতেমালা

যুক্তরাষ্ট্রের পথে হাঁটল গুয়াতেমালা

যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার গুয়াতেমালাও ইসরায়েলে অবস্থিত নিজেদের দূতাবাস তেলআবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করার জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট জিমি মোরালেস সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপের পরই দূতাবাস সরানোর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট জিমি এক ফেসবুক বার্তায় জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। একই সঙ্গে তিনি তেলআবিবে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস পবিত্র এ শহরটিতে স্থানান্তরের কথা ঘোষণা করেন। ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্বে তুমুল বিক্ষোভ হয়।

জেরুজালেম ইস্যুতে গৃহীত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য ওয়াশিংটনের প্রতি বিভিন্ন দেশ থেকে জোর আহ্বানও জানানো হয়। তাতে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় ট্রাম্পের ঘোষণা অবৈধ করার লক্ষ্যে মিসরের উদ্যোগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গত সপ্তাহে একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। অবশ্য অনেকটা প্রত্যাশিতভাবেই ওয়াশিংটনের ভেটোতে এ প্রস্তাব পাস হয়নি। পরে তুরস্কের উদ্যোগে প্রস্তাবনাটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তোলা হলে ১২৮-৯ (পক্ষে-বিপক্ষে) ভোটে এটি পাস হয়। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ৩৫টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত থাকে। যে নয়টি দেশ প্রস্তাবনাটির বিপক্ষে ভোট দেয় তাদের একটি হচ্ছে মধ্য এশিয়ার তুলনামূলক গরিব দেশ গুয়াতেমালা। জেরুজালেম ইস্যুতে জাতিসংঘে ভোটের আগে-পরে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল যে, যেসব দেশ প্রস্তাবনাটির পক্ষে ভোট দেবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওয়াশিংটনের তরফে ওই দেশগুলোতে আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের এ হুঁশিয়ারিরও বিভিন্ন দেশ কড়া সমালোচনা করেছে।

গুয়াতেমালাকে বছরে বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। তাই পররাষ্ট্র ইস্যুতে দেশটির সিদ্ধান্তের ওপর স্বাভাবিকভাবেই বড় প্রভাব রয়েছে ওয়াশিংটনের। জেরুজালেম ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে প্রস্তাবনাটির বিপক্ষে গুয়াতেমালার ভোটদানই এর চাক্ষুষ প্রমাণ। আর নিজেদের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের কথা জানানোর মধ্য দিয়ে আরেকবার মার্কিন আনুগত্যের প্রমাণ দিল দেশটি। গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট জিমি তার ফেসবুক পোস্টে ইসরায়েলকে তার দেশের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন। উল্লেখ্য, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যকার কয়েক দশকের দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে ‘স্ট্যাটাস অব জেরুজালেম’ ইস্যু। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় জেরুজালেমের পূর্বাংশ দখল করে নেয় ইসরায়েল। এরপর থেকেই শহরটিকে একান্তই নিজেদের রাজধানী হিসেবে দেখে আসছে দেশটি। তবে ফিলিস্তিনিরাও পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চায়। তাই জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্পের ওই ঘোষণায় এ ইস্যু আরও ঘোলাটে হয়। বিবিসি, রাশিয়া টুডে, এএফপি।

সর্বশেষ খবর