বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্বকে নতুন ফ্যাসাদে ফেললেন ট্রাম্প

বিশ্বকে নতুন ফ্যাসাদে ফেললেন ট্রাম্প

ট্রাম্প নিজের খেয়ালখুশি মতো চলেন। কারও ধার ধারেন না। সেটি আবার প্রমাণ করলেন। মনে যা চায় তা-ই করেন এই প্রেসিডেন্ট। প্রায় গোটা বিশ্ব সম্প্রদায়ের পরামর্শ, অনুরোধকে উপেক্ষা করে ইরানের সঙ্গে হওয়া ছয় জাতির পরমাণু সমঝোতা চুক্তি বাতিল করে দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত বিশ্বকে আগুনে নিক্ষেপ করল। তবে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল ও সৌদি আরব। অবশ্য দুই দেশই ইরানের ঘোরতর শত্রু। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইরানসহ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী বাকি পাঁচ দেশ চুক্তি চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্যসহ জার্মানি ও ইরানের মধ্যে ২০১৫ সালে চুক্তিটি সই হয়েছিল। কিন্তু গত পরশু সেই চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সঙ্গে চুক্তির আগে ইরানের বিরুদ্ধে থাকা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আবারও জারি করা হবে বলে জানান তিনি। আর এটা আগামী ১০ দিনের মধ্যে ঘোষণা হতে পারে। ট্রাম্প যেন ইরান চুক্তিতে থাকেন সে জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলসহ বিশ্বনেতারা চেষ্টা করেছিলেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, তেহরান আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে চলবে। চুক্তি ছেড়ে যাওয়ায় ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন তিনি। রুহানি বলেন, ‘চুক্তি থেকে সরে আসায় যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করল।’ পরবর্তী করণীয় নিয়ে তিনি চুক্তির অপর পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন। ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইরানকে ‘সংযত আচরণ’ করতে এবং চুক্তির বিষয়াদি মেনে চলার অনুরোধ করেছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের কার্যালয় থেকে প্রকাশ করা এক যৌথ বিবৃতিতে ইরানের প্রতি এই আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া ওই বিবৃতিতে চুক্তি চালিয়ে যেতে বাকি দেশগুলোকে বাধা না দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ট্রাম্পের ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে দুঃখ প্রকাশ করেছে। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি এখন বিপন্ন।’

এদিকে, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেছেন, তার দেশ ইরান চুক্তি ছেড়ে যাবে না, বরং এ চুক্তি চালিয়ে যেতে সব ধরনের সহায়তা করবে জার্মানি। জার্মানির ব্যবসায়ী নেতারা ট্রাম্পের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ তিনি ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকা কোম্পানিগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।

চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ রাশিয়া ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্তে ‘গভীর হতাশা’ প্রকাশ করেছে। চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি।  এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ইরান চুক্তির ভবিষ্যৎ ‘এক দেশের হাতে নেই।’

এদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ‘মিসগাইডেড’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় বন্ধুরাষ্ট্রসমূহ, নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী— সবাই ইরান চুক্তি কার্যকর হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন। এভাবে একের পর এক সাবেক প্রশাসনের চুক্তি বাতিলের মাধ্যমে বিশ্বপরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে বলেও মনে করেন এই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিবিসি।

সর্বশেষ খবর