সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রামমন্দিরের দাবিতে অযোধ্যায় লাখো হিন্দু, আতঙ্ক

রামমন্দিরের দাবিতে অযোধ্যায় লাখো হিন্দু, আতঙ্ক

রামমন্দিরের দাবিতে অনেকে গদা, তরবারি নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন —এএফপি

ভারতের অযোধ্যায় হাজার হাজার নিরাপত্তারক্ষীর বলয়ের মধ্যে বিভিন্ন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গতকাল বাবরি মসজিদ চত্বরে দ্রুত রামমন্দির নির্মাণের দাবিতে বিশাল জনসমাবেশ করেছে। প্ররোচনামূলক ভাষণ আর বাইরে থাকে আসা হাজার হাজার লোকের জমায়েতে পুরো অযোধ্যায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ‘ধর্ম সংসদ’ নামের সমাবেশ থেকে তাদের নেতা ও সাধুসন্তরা দাবি তুলেছেন, আদালতের অপেক্ষায় না-থেকে সরকারকে অর্ডিন্যান্স বা নির্বাহী আদেশ জারি করে হলেও মন্দির নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অযোধ্যায়ই গতকাল সমান্তরাল আরও একটি সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপির শরিক ও মহারাষ্ট্রের হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনা। ওই সভা থেকে শিবসেনার নেতা উদ্ধব ঠাকরে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মন্দির বানানো না-হলে বিজেপি কিছুতেই ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না। তিনি স্লোগান দিয়েছেন, আগে মন্দির, তারপর সরকার! ১৯৯২ সালে ওই মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করেই ভারতজুড়ে শুরু হয়েছিল রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা। ৪৭’র দেশভাগের পর হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ ওই দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছিলেন। ভিএইচপির ধর্মসভাকে ঘিরে সপ্তাহখানেক ধরেই অযোধ্যার পরিস্থিতি খুব উত্তপ্ত।  আগামী বছরের মে মাসে হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনের আগে অযোধ্যায় হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের এ কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেবে বলেই ধারণা পর্যবেক্ষকদের। শিবসেনার ওই সভায় যোগ দিতে অন্তত ১৫টি ট্রেন ভর্তি করে মহারাষ্ট্র থেকে হাজার হাজার ‘শিবসৈনিক’ অযোধ্যায় গেছেন। গত দুদিন ধরে উদ্ধব ঠাকরে নিজে শহরে রয়েছেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভায়ও প্রায় এক লাখ মানুষের জমায়েত হয়েছে বলে অযোধ্যা থেকে বিবিসির সংবাদদাতারা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের সমর্থকরাও দলে দলে সেখানে যোগ দেন। কট্টর হিন্দুদের এই সমাবেশ নিয়ে অযোধ্যায় মুসলিম বাসিন্দাদের মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরেই আতঙ্ক চলছে।অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড ও বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির সদস্য জাফরইয়াব জিলানি বিবিসিকে বলছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অযোধ্যায় যেভাবে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তাতে শহরের মুসলিমরা ভয়ে সিঁটিয়ে আছেন। অযোধ্যায় নিরাপদ বোধ না-করলে মুসলিমদের লখনৌতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ও অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াডের পাঁচটি কোম্পানি এখন অযোধ্যায় মোতায়েন আছে। ড্রোন দিয়েও সর্বক্ষণ আকাশ থেকে পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ নজর রাখা হচ্ছে। তারপরও উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব অবশ্য মনে করছেন এই নিরাপত্তাও যথেষ্ট নয়, অযোধ্যার যা পরিস্থিতি, তাতে যত দ্রুত সম্ভব সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা দরকার।

সর্বশেষ খবর