আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সব সময় পপুলার ভোট কাজে লাগে না। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় ইলেকটোরাল ভোটে। আর ইলেকটোরাল ভোট নির্ধারিত হয় রাজ্যগুলোর জনসংখ্যা অনুযায়ী। যে রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি সেখানে ইলেকটোরাল ভোটও বেশি। সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে। ফলে এই রাজ্যে ইলেকটোরালের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৫৫। ছোট ছোট কিছু রাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার আছে তিনটি করে ভোট। আলাস্কা এবং নর্থ ড্যাকোটা রাজ্যের হাতেও তিনটি করে ভোট। তবে আটলান্টিক মহাসাগরঘেঁষা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বদক্ষিণ-পূর্বের অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডা। রাজ্যটি দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এ রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ২৯। ভোটের রাজনীতিতে নামটি যখন আসে, তখন রিপাবলিকানদের উচ্ছ্বসিত মুখ আর ডেমোক্র্যাটদের হতাশার চিত্রই ভেসে ওঠে।
দু-একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সারা দেশে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের জোয়ার বইলেও ফ্লোরিডায় সিনেট ও গভর্নর পদে সামান্য ব্যবধানে হেরে যায় দলটি। ২০০০ সালে মাত্র ৫৪০ ভোট বেশি পেয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল-গোরের হোয়াইট হাউসে ওঠার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেন রিপাবলিকান জর্জ ডব্লিউ বুশ।
ফলে অনেকদিন ধরেই এই রাজ্যের ভোট আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে ভূমিকা রাখছে। কারণ গত তিনটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুটিতেই ডেমোক্র্যাটরা জিতে যেতে পারত, যদি ফ্লোরিডায় তারা জয় পেত।২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন সারা দেশের জনপ্রিয় ভোটে এগিয়ে থাকলেও অঙ্গরাজ্যভিত্তিক ইলেকটোরাল কলেজ ভোট বেশি পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হিলারির কপালে যে শনিরদশা লাগতে যাচ্ছে, তা গত নির্বাচনে ফ্লোরিডার ফলাফলেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। চার বছর পর অঙ্গরাজ্যটি আবার আলোচনায়। এই ব্যাটেলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যের ভোটেই চূড়ান্ত হতে পারে প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন। জনমত জরিপও বলছে, এবারও ফ্লোরিডায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর ফ্লোরিডার প্রতি ট্রাম্পের মনোযোগ আরও বেড়েছে। তিনি প্রায়ই রাজ্যে অবস্থিত নিজের মার-এ-লাগো রিসোর্টে ভ্রমণ করেন। অঙ্গরাজ্যটিকে নিজের পক্ষে ধরে রাখতে নিজের নিউইয়র্কের বাসভবনও একরকম ছেড়েই দিয়েছেন। ট্রাম্প ফ্লোরিডাকে নিজের ‘জন্মভূমি’ হিসেবেও পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। নির্বাচনী প্রচারের জন্য রাজ্যটি চষেও বেড়াচ্ছেন তিনি। ভোটের জন্য ফ্লোরিডার গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল প্যানসাকোলা। এটা রক্ষণশীলদের ঘাঁটি। এখানে অনেক সেনা কর্মকর্তার বাস। তারা মূলত রিপাবলিকানদের ভোট দিয়ে থাকেন। ফলে ফ্লোরিডার অন্য এলাকায় দলটি কম ভোট পেলেও অঞ্চলটি তা পুষিয়ে দেয়। গত শনিবার প্যানসাকোলার বিমানবন্দরে সমাবেশ করেন ট্রাম্প। এর এক দিন আগে বাইডেনের পক্ষে ওই রাজ্যেই প্রচারণায় যান সাবেক দুইবারের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মিয়ামির ওই সমাবেশে তিনি বলেন, ‘ফ্লোরিডায় জিতলে খেলা শেষ।’