যুদ্ধ থামার কোনো আলামত নেই। আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান দুই দেশই মরিয়া। এর মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক এলাকা দখল করেছে আজারবাইজান। দেশটি দাবি করেছে, আর্মেনিয়ার একাধিক মিসাইল হামলায় নাগর্নো-কারাবাখ সীমানায় আজারবাইজানের একটি গ্রামে অন্তত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অসংখ্য। যদিও আজারবাইজানের এই দাবি অস্বীকার করেছে আর্মেনিয়া।
গত রবিবার আমেরিকার মধ্যস্থতায় তৃতীয়বার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল দুই রাষ্ট্রই। এর আগে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় দুইবার যুদ্ধবিরতিতে সায় দিয়েছিল দুই দেশ। কিন্তু কোনোবারই কিছু হয়নি। রবিবার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দুটি দেশ। আজারবাইজানের অভিযোগ আর্মেনিয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে প্রথম আক্রমণ চালায়। আর্মেনিয়াও আজারবাইজানের বিরুদ্ধে পাল্টা একই অভিযোগ করে।
মাঠের চেয়ে বেশি লড়াই চলছে মুখে। দুই পক্ষই আশ্রয় নিচ্ছে বাগাড়ম্বরের। নিজেদের ছোড়া গোলায় সাধারণ মানুষ মারা গেলেও দুই পক্ষই অপর পক্ষকে দুষছে যুদ্ধের নিয়ম না মানার জন্য। হামলা নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টা দাবিতে সংকট আরও বাড়ছে। বুধবার রাতে আজারবাইজান সরকারের মুখপাত্র দাবি করেন, আর্মেনিয়া আজারবাইজানের বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা লক্ষ্য করে লাগাতার মিসাইল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই জেরে নাগর্নো-কারাবাখের কাছে একটি অঞ্চলে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৭০ জন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। আর্মেনিয়া অবশ্য আজারবাইজানের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এর আগেও আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছিল। আজারবাইজান জানিয়েছিল, তাদের একাধিক শহর লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে আর্মেনিয়া। আর্মেনিয়া সে কথাও অস্বীকার করেছিল। কিন্তু সংবাদকর্মীদের লেন্সে উঠে এসেছিল গ্যাঞ্জাসহ আজারবাইজানের একাধিক শহরের ভয়াবহতার দৃশ্য।সীমান্ত রক্ষায় যুদ্ধে যাচ্ছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী : এগিয়ে আসছে হানাদার বাহিনী। বিপন্ন জননী জন্মভূমি। তাই দেশমাতৃকার ডাকে সাড়া দিয়ে এবার যুদ্ধে শামিল হতে চলেছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের স্ত্রী অ্যানা হাকোবিয়ান। গত মাসের ২৭ তারিখ থেকে নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এহেন পরিস্থিতিতে শত্রু বাহিনীকে রুখে দিতে মহিলা সেনাদলের নেতৃত্ব দিতে তৈরি হচ্ছেন ৪২ বছরের অ্যানা। একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, আপাতত একটি সেনাঘাঁটিতে ১২ জন মহিলা সৈনিকের সঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন তিনি। কয়েকদিনের মধ্যেই ফ্রন্টের উদ্দেশে রওনা দেবেন তাঁরা। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের সম্মান ও মাতৃভূমি কোনোটাই শত্রুর হাতে তুলে দেব না।” তবে শুধু অ্যানা নয়, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের আরও সদস্য এই লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। ‘পাবলিক রেডিও অব আর্মেনিয়া’ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নিকোল ও অ্যানার পুত্র অ্যাশট পাশিনিয়ানও কারাবাখ অঞ্চলে আজারবাইজানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছেন। উল্লেখ্য, ককেশাস অঞ্চলে চলা এই লড়াইয়ে রীতিমতো বিভক্ত বিশ্ব। আজারবাইজানের পক্ষে রয়েছে তুরস্ক, পাকিস্তানের ও মুসলিম বিশ্বের একাধিক দেশ। আর্মেনিয়ার পক্ষে রয়েছে ফ্রান্সসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ। এই সংঘাতে নিজেদের স্বার্থে জড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা ও রাশিয়া। ফলে যুদ্ধের আগুন শিগগিরই না নিভলে বিশ্বযুদ্ধের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।