ন্যাটোতে যুক্ত হতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। গতকাল ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দফতরে এ আবেদন জমা দেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেন, আমাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এটা একটা ভালো দিন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের কারণে ত্বরান্বিত হওয়া এই আবেদনে নর্ডিক দেশ দুটির ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে; তাদের আবেদনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে মাত্র কয়েক সপ্তাহ লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ও সুইডেন ও ফিনল্যান্ড নিরপেক্ষ ছিল; তাদের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বদল হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণে নামলে নর্ডিক অঞ্চলে জনমতের ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়; সুইডেন, ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আবেদন তারই প্রতিফলন। দুই রাষ্ট্রদূতই নিজ নিজ দেশের জাতীয় পতাকা খচিত সাদা ফোল্ডারে আবেদন জমা দেন। জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেন, ‘ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আবেদনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছি। আপনারা আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদার এবং আপনারা ন্যাটোর সদস্য হলে তা আমাদের সমন্বিত নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করবে।’
ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার আবেদন জমা দিলেও সদস্য হতে জোটের ৩০ সদস্যের সবার সমর্থন পেতে হবে নর্ডিক এ দেশ দুটিকে। এ প্রক্রিয়া শেষ হতে হতে বছরখানেকও লেগে যেতে পারে বলে ভাষ্য কূটনীতিকদের। তবে জেন্স স্টোলটেনবার্গ এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ন্যাটোর অনেক প্রভাবশালী দেশই সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে দ্রুত সদস্যপদপ্রাপ্তির আশ্বাস দিয়েছে। তবে এতে বাগড়া দিয়েছে ন্যাটোর আরেক সদস্য রাষ্ট্র তুরস্ক। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তাদের ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটো সদস্যপদপ্রাপ্তির ব্যাপারে আপত্তি জানাতে দেখা যাচ্ছে। আঙ্কারার আপত্তি সংক্রান্ত ইস্যুটির সমাধান দ্রুত হবে বলে গতকাল আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ন্যাটো মহাসচিব। এর আগে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্টে ভোট হয়। তাতে পক্ষে ব্যাপক সংখ্যক ভোট পড়ে। স্টোলটেনবার্গ ঘোষণায় বলেন, পক্ষে পড়েছে ১৮৮ ভোট। বিপক্ষে পড়েছে মাত্র ৮ ভোট। এর মধ্যদিয়ে বহু দশক ধরে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে এলো। একে এমন অবস্থা থেকে ঐতিহাসিক বিদায় বলে মন্তব্য করা হয়েছে ভয়েস অব আমেরিকার এক রিপোর্টে।এদিকে এই ঘটনায় পশ্চিমাদের সতর্ক করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পর সেখানে যদি সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করে ন্যাটো, তাহলে এর জবাব দেবে মস্কো। তবে এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আজ হোয়াইট হাউসে সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন এবং ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সুলি নিনিস্তোর সঙ্গে তার আলোচনার কথা রয়েছে।