বুধবার, ৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

দুঃসহ কষ্টে আছে শ্রীলঙ্কার শিশুরা

দুঃসহ কষ্টে আছে শ্রীলঙ্কার শিশুরা

শ্রীলঙ্কায় ত্রাণের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে -অনলাইন

গন্ধটাই নাকে আসবে প্রথমে; গরম ভাত, মসুর ডাল আর পালং শাক, ধোঁয়া ওঠা পাত্র থেকে চামচে করে পরিবেশিত হচ্ছে। কয়েক ডজন পরিবার, শিশুদের সঙ্গে নিয়ে মায়েরা থালা হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন; অপেক্ষা, কখন পাতে উঠবে সেই খাবার, যা হয়তো দিনে একবারই মিলবে। ‘আমরা এখানে, কারণ আমরা ক্ষুধার্ত,’ বিবিসিকে এমনটাই বলেছেন চার সন্তানের মা চন্দ্রিকা মানেল। বাচ্চাদের একজনের মুখে তুলে দিতে ডাল আর শাকের সঙ্গে এক লোকমা ভাত মেশাতে মেশাতে তিনি বলছিলেন, কেন এক টুকরো রুটি কেনাও এখন ভয়াবহ সংগ্রামের। চিত্রটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা শ্রীলঙ্কার একটি কমিউনিটি কিচেনের।

চন্দ্রিকা আরও বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন আমি ওদের দুধভাত দিতে পারতাম, আর এখন কোনো সবজিও রাঁধতে পারি না। এসব খুবই দামি।’ শ্রীলঙ্কায় গুরুতরভাবে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা বর্তমানে ৩৫ হাজার। খাদ্যের তীব্র সংকটে থাকা লোকেরা দিনে একবেলা খাবারের জন্য এখানে ভিড় জমান। বৈদেশিক রিজার্ভ কমে আসায় এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতিতে কয়েক মাস ধরে ধ্বংসের মুখে রয়েছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। দেশটির রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষকে এই সংকটের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এর মধ্যে পর্যটনে আঘাত হানা মহামারি ও তেলের দাম বাড়তে দায়ী ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকেই নিয়ে গেছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)-এর ভাষ্যমতে, সব ছাপিয়ে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা রয়েছে মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে। দেশের ৭০ শতাংশ পরিবারে বছরের শুরু থেকে খাদ্য ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে।

এক মাস ধরে এই কমিউনিটি কিচেন পরিচালনা করে আসছেন যাজক মোজেস আকাশ। কলম্বোর একটি গির্জা হলে অবস্থিত এটি। টানা তিন দিন কাঁঠাল খেয়ে বেঁচে থাকা এক মায়ের কষ্ট দেখে এই উদ্যোগ নেন তিনি। যাজক মোজেস বলেন, ‘আমাদের এখানে এমন লোকও আসে যারা গত চার মাসে দু পেট ভাতও খেতে পাননি।’

দেড় বছর সময় চাইলেন প্রধানমন্ত্রী : শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে বের করে আনার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। তবে এ জন্য অন্তত ১৮ মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গত সপ্তাহে আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। রনিল বলেন, আমি দেখলাম দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ, কিন্তু এটা তো আমারই দেশ। তাই ক্ষমতা গ্রহণ করলে সফল হব কি হব না তা ভাবার সময় ছিল না। আমি ক্ষমতা গ্রহণ করলাম এবং এখন আমি দেশকে সফল করতে কাজ করে যাব। আমি এখন আত্মবিশ্বাসী যে, দেশের অর্থনীতির গতিপথ বদলে দিতে পারব।

সর্বশেষ খবর