মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দিল্লির বায়ুদূষণ বিপৎসীমার অনেক ওপরে

দিল্লির বায়ুদূষণ বিপৎসীমার অনেক ওপরে

ফের দিল্লির বায়ুদূষণ মাত্রা যথেষ্ট উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বিরাজ করছে ৪০০ থেকে ৫০০ মাত্রায়। চলতি বছর দিল্লির দূষণমাত্রা কমাতে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার। সব রকম বাজি বিক্রি, পোড়ানো এবং কেনার ওপর জারি করেছিল নিষেধাজ্ঞা। তার ফলও পেয়েছিল হাতেনাতে। ২০১৫ সালের পর এবার দীপাবলির শেষে দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল বেশ কম।

কিন্তু সেই স্বস্তি বেশি দিন টিকল না। দেশটির রাজধানীর বায়ুদূষণের মাত্রা তৈরি করেছে উদ্বেগ। এ জন্য বিজেপি ও আপ উভয় দলের নেতারা একে অপরকে দুষছেন। দূষণের প্রতিবাদে শনিবার আম আদমি পার্টির কর্মীরা দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর বিনয় কুমার সাক্সেনার অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

দিল্লির দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে দূষণের মাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বরং তা আরও বাড়তে পারে। হাওয়ার গতিবেগ এবং অভিমুখের ওপর দূষণের মাত্রা নির্ভর করে। দিল্লির ভিতর হাওয়া যেভাবে বইছে, তাতে দিল্লির ধূলিকণা বাইরে বের হতে পারছে না। আবহাওয়া আচমকাই অনেক শুকনো হয়ে যাওয়ার জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ধূলিকণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণেই দূষণের মাত্রা একধাক্কায় এতটা বেড়ে গেছে। তার ওপর দীপাবলির দূষণ আবহাওয়ার আরও ক্ষতি করেছে।

দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই রবিবার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সমস্ত বাড়ি তৈরি এবং বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ থাকবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নয়। ৫০ থেকে ১০০ মোটামুটি। ১০০ থেকে ২০০ একিউআই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। ২০০ থেকে ৩০০ খারাপ। ৩০০ থেকে ৪০০ অত্যন্ত খারাপ। ৪০০ থেকে ৫০০ একিউআই শ্বাস নেওয়ার যোগ্য নয়।

দিল্লির গড় বায়ুদূষণের মাত্রা এখন ৪০০ একিউআইয়ের ধারে-কাছে। গতকাল সকালে দিল্লির পাঞ্জাবি বাগের একিউআই ছিল ৩৭৫। শাদিপুরে ৪০৬। ওয়াজিরপুরের ৪০৪। এনএসআইটি দ্বারকা ৩৯৯। অশোক বিহার ৪০০। বিমানবন্দর ৩৫৫। নেহরু  নগর ৩৯৭।

দিল্লির পরিবেশবিদ দীপায়ন দে জানান, ‘দূষণের মাত্রা টানা বেশ কিছুদিন এমন থাকলে বাড়ি থেকে বের হওয়াই বিপজ্জনক। এর ফলে ফুসফুসের রোগ হতে পারে। গলার সমস্যা হবেই।’

দীপায়নের বক্তব্য, প্রতি বছরই দূষণের মাত্রা বাড়লে সরকার পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধানের পথে হাঁটে না।

শুধু দিল্লি নয়, পার্শ্ববর্তী পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারেও বায়ুদূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক। উত্তরপ্রদেশের কোথাও কোথাও দূষণের মাত্রা ৫০০ পর্যন্ত ছুঁয়েছে। দিল্লি-নয়ডা সীমানায় থাকেন চিকিৎসক বিষ্ণু দে। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘গত এক মাসে ফুসফুস এবং গলার সমস্যা নিয়ে রোগী আসার পরিমাণ ১০ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।’ বিষ্ণুর বক্তব্য, সাময়িক স্বস্তির জন্য কিছু ওষুধ দিলেও রোগ সারানোর ওষুধ দেওয়া যাচ্ছে না। দূষণের মাত্রা না কমলে ওষুধেও কাজ হবে না। এই পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব বাড়ির ভিতর থাকলেই ভালো।

সর্বশেষ খবর