সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইমরান গ্রেফতারে পাকিস্তানের রাজনীতিতে যে প্রভাব পড়বে

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গত পরশু তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। রায়ের পরই লাহোরে জামান পার্কে তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সড়ক পথে তাকে এটক কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এটক কারাগারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইমরান খানের জন্য কারাগারে ভিভিআইপি সেল প্রস্তুত করা হয়েছে। সেলে কোনো এসি নেই তবে ফ্যানের ব্যবস্থা আছে। পৃথক বিছানা ও টয়লেট আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতারের এ সিদ্ধান্ত আকস্মিক বা অভূতপূর্ব ছিল না, কারণ চলতি বছরের ৯ মের পর আবারও তাকে যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু সত্যি সত্যি তাকে গ্রেফতারের পর দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

কিন্তু এরপর কী হবে : পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মেয়াদ শেষ হতে আর কিছুদিন বাকি, ফলে এর মধ্যেই সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আদালতের রায়ের পর ইমরান খানের আকস্মিক ও তাৎক্ষণিক গ্রেফতারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক রাসূল বখশ রাইস। তার মন্তব্য, ‘মনে হচ্ছে গ্রেফতার আগে হয়েছে, রায় পরে এসেছে। অর্থাৎ খুবই তাড়াহুড়ো করা হয়েছে।’ ইমরান খানের গ্রেফতারকে রাসূল বখশ রইস ‘তামাশা’ বলে অভিহিত করেছেন। সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশ্লেষক সালমান ঘানি পাকিস্তানের ভিতরে ঘটা ঘটনাগুলোকে একটি বৃত্তের সঙ্গে তুলনা করেন, যা ‘যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেখানেই শেষ হচ্ছে।’ তিনি মনে করেন, ইমরান খানের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, সেটা হচ্ছে তিনি এ রাজনৈতিক আচরণ এবং পরিণতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। বর্তমান রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের ফল দেশটির রাজনীতিবিদদের ভোগ করতে হবে বলে মনে করেন ঘানি।

ইমরান খানের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী : এ গ্রেফতার ইমরান খানের ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে? এ প্রশ্নের জবাবে রাসূল বখশ রাইস বলেন, আজকের গ্রেফতারে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। তারা (পিটিআই) আরও শক্তিশালী হবে এবং ভোটাররা তাদের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হবে। তবে এক্ষেত্রে ভিন্ন মত সালমান ঘানির। তিনি বলছেন, মাত্র দুই দিন আগে ইমরান খান এক সাক্ষাৎকারে তার বিরোধী রাজনীতিকদের ‘চার-ডাকাত’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। এখন আদালতের রায়ের পর তিনি নিজে একই কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন। বিচারিকভাবে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলছেন, এখন আর ইমরান খান দলের নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। যদিও পাকিস্তানে এর আগেও প্রধানমন্ত্রীদের গ্রেফতার করা হয়েছে কিন্তু তা সত্ত্বেও আগামীতে এর ফলে ইমরান খানের রাজনীতির পরিধি আরও সঙ্কুচিত হবে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জাইঘাম খান। তিনি বলেছেন, ইমরান খান এবং পিটিআই অতীতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতো একই আইনি জটিলতায় পড়েছে। ইমরান খান নিজেও এর আগে অন্য রাজনৈতিক দলকে আইনের ফাঁদে ফেলেছেন। এখন সেই একই বিষয় ঘুরে ফিরে আবার তাদের কাছে ফিরে এসেছে।

দলের নেতৃত্বে কে আসবে : এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যতদিন ইমরান খান জেলে থাকবেন শাহ মাহমুদ কুরেশি কি দলের নেতৃত্ব দেবেন? আর ইমরানের অনুপস্থিতিতে তার দল কি জনগণ ও পিটিআই সমর্থকদের সমর্থন পাবে? হয়ত সামনের দিনে এ দুইটি প্রশ্নই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বশেষ খবর