শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
মোদির মন্তব্যের জবাবে রাহুল

মণিপুরে আগুন নিভুক, চান না মোদি

মণিপুরে আগুন নিভুক, চান না মোদি

রাহুল গান্ধীর নাম উচ্চারণ না করে গত বৃহস্পতিবার তাকে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাহুলকে কংগ্রেসের ব্যর্থ প্রোডাক্ট বলে মজা করেছিলেন মোদি। গতকাল তার জবাবও দিয়েছেন রাহুল গান্ধী।

গত পরশু সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জবাবি ভাষণের পর গতকাল নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি মণিপুরে সংঘাত জিইয়ে রাখার জন্য দায়ী করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তার অভিযোগ, ভারতীয় সেনা চাইলেই মণিপুরের অশান্তি দুই দিনে বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক স্বার্থেই তার হাতে থাকা অস্ত্র ব্যবহার করছেন না বলে অভিযোগ করেন রাহুল গান্ধী।

বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে গতকালই মণিপুরে অশান্তির জন্য অতীতের কংগ্রেস শাসনকে দায়ী করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই ঘণ্টার ভাষণের বেশির ভাগ সময়ই তিনি কংগ্রেসসহ বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের সমালোচনা করেন। এরপরই বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায় ভোটাভুটিতে। স্পিকার ওম বিড়লা জানান, সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অনাস্থার বিপক্ষেই ভোট পড়েছে বেশি।

বিবিসি জানায়, মোদি ভাষণের প্রথম দেড় ঘণ্টায় মণিপুরের নাম উচ্চারণ না করায় লোকসভা থেকে ওয়াকআউট করেন বিরোধী দলের সদস্যরা। এরপর বিরোধীশূন্য লোকসভায় অনাস্থা ভোটে জয় পায় মোদি সরকার। গতকাল বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন রাহুল। অটল বিহারী বাজপেয়ির তুলনা টেনে রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী পদের গুরুত্বই বোঝেন না নরেন্দ্র মোদি। সংবাদ সম্মেলন করে গতকাল নিজের মণিপুর সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন রাহুল গান্ধী। তিনি অভিযোগ করেন, মণিপুরে আইনের কোনো শাসনই নেই। কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘মণিপুরে ভারত মাতার হত্যা হয়েছে। আমি সে কথাটাই সংসদে তুলে ধরেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী গতকাল হাসলেন, মজা করলেন। দেখে মনে হলো প্রধানমন্ত্রী ভুলে গেছেন চার মাস ধরে মণিপুর জ্বলছে। মহিলা, শিশুদের ওপর অত্যাচার চলছে, মানুষ খুন হচ্ছে, ধর্ষণ হচ্ছে আর প্রধানমন্ত্রী সংসদে বসে হাসছেন। এটা বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির জন্য হচ্ছে। মণিপুরে যা চলছে ভারতীয় সেনা চাইলে দুই দিনের মধ্যে তা বন্ধ করে দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর হাতেও সেই অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু তিনি তা ব্যবহার করবেন না। এই প্রথমবার ভারতমাতা শব্দটি সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হলো। ভারতমাতাকে মণিপুরে হত্যা করা হয়েছে। এটাই তো আমি বলেছিলাম। ভারতমাতা মানে তো একটা ভাবনা, যার অর্থ মানুষ শান্তিতে, নিশ্চিন্তে ভারতে বসবাস করবে।’ নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে রাহুল গান্ধী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো একবার মণিপুরে যেতে পারতেন। সেখানকার মানুষকে বলতে পারতেন, আমি আপনাদের প্রধানমন্ত্রী, আসুন কথা বলে সমস্যার সমাধান করি। কিন্তু ওনার সেরকম কোনো ইচ্ছাই তো আমি দেখছি না। নরেন্দ্র মোদি ২০২৪-এ প্রধানমন্ত্রী হবেন কি-না, সেটা জরুরি প্রশ্ন নয়। জরুরি প্রশ্ন হলো, মণিপুর জ্বলছে। সেখানে শিশুসহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।

মণিপুরে জাতিগত সহিংসতা ও নারী নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়েছে ভারত, অশান্ত হয়েছে পার্লামেন্ট। সেই পরিস্থিতিতেই সবার নজরে ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণ। মণিপুর নিয়ে তিনি কী বলেন, সেদিকে নজর ছিল সবার। তিনি ভাষণ শুরুর দেড় ঘণ্টা পর মণিপুর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। ততক্ষণে বিরোধীরা ওয়াকআউট করে চলে যান।

বিরোধীশূন্য লোকসভায় মোদি বলেন, ‘মণিপুরের জনগণকে আশ্বস্ত করছি, দ্রুত সেখানকার হাল ফিরবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মণিপুরের ঘটনা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মণিপুরের ঘটনায় অনেকেই তাদের স্বজন হারিয়েছেন। নারীদের সঙ্গে সেখানে যা হয়েছে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার জন্য কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর