সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

যে যুদ্ধের শেষ নেই

যে যুদ্ধের শেষ নেই

ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গতকাল গাজায় নির্বিচারে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইসরায়েল - এএফপি

মাত্র ৯০ লাখ মানুষ নিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার করে চলছে ইসরায়েল। বছরের পর বছর এই ইসরায়েল নিয়ে সংঘাত চলছে। দেশটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা ফিলিস্তিনের জায়গা দখল করে ইহুদি বসতি নির্মাণ করে চলছে। আর ফিলিস্তিনিদের নিজ বাসভূমে অনেকটা বন্দি করে রেখেছে। ফলে দীর্ঘদিন অমীমাংসিত এক সংঘাতে জড়িয়ে আছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন। আর ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ। এ অবস্থায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ফিলিস্তিনি নিহতের খবর প্রায়ই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জায়গা করে নেয়। তবে ফিলিস্তিনিদের হাতে ইসরায়েলি নিহত হওয়ার খবর তুলনামূলক কমই আসে। এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন।

সর্বশেষ গত পরশু ভোরে ইসরায়েলকে লক্ষ্য বড় আকারের হামলা চালায় ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এতে অন্তত ৬০০ ইসরায়েলি মারা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে গাজায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের এই সংঘাতের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

১০০ বছরের পুরোনো সংকট : মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন নামে যে এলাকা, সেটি ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের পরাজয়ের পর ব্রিটেন ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন ফিলিস্তিনে যারা থাকতেন, তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল আরবরা, সেই সঙ্গে ছিল কিছু ইহুদিও। কিন্তু এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে, যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্রিটেনকে দায়িত্ব দেয় ইহুদি জনগোষ্ঠীর জন্য ফিলিস্তিনে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। ইহুদিরা এই অঞ্চলকে তাদের পূর্বপুরুষদের দেশ বলে দাবি করে। কিন্তু আরবদেরও দাবি, এই ভূমি তাদের এবং তারা ইহুদিদের জন্য সেখানে রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টার বিরোধিতা করে। ১৯২০ থেকে ১৯৪০ দশকের মধ্যে ইউরোপ থেকে দলে দলে ইহুদি ফিলিস্তিনে যেতে শুরু করে এবং তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ইউরোপে ইহুদি নিপীড়ন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়ংকর ইহুদি নিধনযজ্ঞের পর সেখান থেকে পালিয়ে এরা নতুন এক মাতৃভূমি তৈরির স্বপ্ন দেখছিল। ফিলিস্তিনে তখন ইহুদি-আরবদের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়। একই সঙ্গে সহিংসতা বাড়ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধেও। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে এক ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনকে দুই টুকরো করে দুটি পৃথক ইহুদি ও আরব রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হলো। জেরুজালেম থাকবে একটি আন্তর্জাতিক নগরী হিসেবে। ইহুদি নেতারা এই প্রস্তাব মেনে নেন, কিন্তু আরব নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। জাতিসংঘের এই পরিকল্পনা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি।

ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা এবং ‘মহাবিপর্যয়’

ব্রিটিশরা এই সমস্যার কোনো সমাধান করতে না পেরে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ছাড়ে। ইহুদি নেতারা এরপর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।

বহু ফিলিস্তিনি এর প্রতিবাদ জানান এবং এরপর যুদ্ধ শুরু হয়। হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে তখন ঘরবাড়ি ফেলে পালাতে অথবা চলে যেতে বাধ্য করা হয়। ফিলিস্তিনিরা এই ঘটনাকে ‘আল নাকবা’ বা ‘মহাবিপর্যয়’ বলে থাকেন। পরের বছর এক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যখন যুদ্ধ শেষ হলো, ততদিনে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে। এরপর ১৯৬৭ সালে আরেকটি যুদ্ধে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীর, সিরিয়ার গোলান মালভূমি, গাজা এবং মিসরের সিনাই অঞ্চল দখল করে নেয়।

এরপর থেকে ফিলিস্তিনিদের কোণঠাসা করে রেখেছে ইসরায়েল। প্রায় প্রতিদিনেই ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। ভবিষ্যৎ তাহলে কী? এক কথায় বলতে গেলে, খুব সহসা এই পরিস্থিতির কোনো সমাধান মিলবে না। সংকট সমাধানের সর্ব-সাম্প্রতিক উদ্যোগটি নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এটিকে ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি বলে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা এই উদ্যোগকে নাকচ করে দিয়েছিল একেবারেই একতরফা একটি উদ্যোগ বলে। যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ নিয়ে আসলে কাজ মোটেই এগোয়নি। ভবিষ্যতের যেকোনো শান্তি চুক্তির আগে দুপক্ষকে জটিল সব সমস্যার সমাধানে একমত হতে হবে। সেটি যতদিন না হচ্ছে, দুপক্ষের এই সংঘাত চলতেই থাকবে।

সর্বশেষ খবর